আফরিন আক্তারঃ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একাডেমিক কার্যক্রম পুরোপুরি সচল হতে চলেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পাওয়ার পরেই পরীক্ষায় বসার বিষয়ে সম্মত হন তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার ২০২২-২০২৩ এবং ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার পুনঃনির্ধারিত রুটিন প্রকাশ করে বুয়েট প্রশাসন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমামুল হাসান ভূঁইয়ার সই করা পরীক্ষার রুটিনে ১১ মে থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। পরীক্ষা চলবে আগামী ৬ জুন পর্যন্ত।
পুনঃনির্ধারিত রুটিন অনুযায়ী ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের লেভেল-১/টার্ম-১, লেভেল-২/টার্ম-১, লেভেল-৩/টার্ম-১, লেভেল-৪/টার্ম-১ এবং ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের লেভেল-৪/টার্ম-২, লেভেল-৫/টার্ম-২ এর শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করবেন।এর আগে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত ২০ এপ্রিল পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয় বুয়েট প্রশাসন।সবশেষ একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধিদের দীর্ঘ আলোচনা হয়।
শিক্ষার্থীদের পছন্দের আইনজীবী নিয়োগ- ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল এবং তা পরিচালনার জন্য যে আইনজীবী নিয়োগ করা হবে তাকে পছন্দ করবেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়টি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া পরিচালনার নিমিত্তে আইনজীবীর যাবতীয় খরচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে।এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে আলোচনায়। সেটা হলো- বুয়েট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নযোগ্য শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে।
মূলত, ২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
তবে গত ২৭ মার্চ বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ২৯ মার্চ থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দেন তারা। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেনকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন।
তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ মার্চ রাতে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেনের হলের আসন বাতিল করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। পরে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইমতিয়াজের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সেই জরুরি বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত।এতে ক্যাম্পাসে আবার ছাত্ররাজনীতি চালুর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি চান না বলে সিদ্ধান্তে অটল। তাদের সঙ্গে একমত বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও।