‘অবৈধ’ অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে বোরহানুদ্দিন, সম্মানীর নামে হরিলুট!
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করার সুযোগ নেই। অথচ গত বছরের ৩০ নভেম্বর অবসরে যাওয়া শিক্ষক মো. নূরুল হককে রাজধানীর শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের অধ্যক্ষ করা হয়েছে। বিষয়টি অনৈতিক ও অবৈধ বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাতে আসা নথিপত্রে দেখা গেছে, ১৯৬৪ সালের ১ ডিসেম্বরে জন্ম নেওয়া নূরুল হকের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ নভেম্বর। তবে, কলেজটির বর্তমান পরিচালনা পরিষদ অন্য কোনো শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব না দিয়ে নূরুল হককেই বহাল রেখেছেন। দায়িত্বকাল শেষ হলেও গত ১৪ জানুয়ারি শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকায় সই করেছেন তিনি। এ তালিকায় তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া ১৯ শিক্ষককে ভোটার হিসেবে দেখিয়েছেন।
অন্যদিকে, নিয়ম না থাকলেও সম্মানী ভাতাবাবদ মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে অবৈধ ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
দায়িত্বকাল শেষ হলেও গত ১৪ জানুয়ারি শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকায় সই করেছেন তিনি। এ তালিকায় তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া ১৯ শিক্ষককে ভোটার হিসেবে দেখিয়েছেন। অন্যদিকে, নিয়ম না থাকলেও সম্মানী ভাতাবাবদ মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে অবৈধ ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষকদের একটি পক্ষ আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে সবসময় কলেজটি অস্থিতিশীল করে রেখেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনেও ওই শিক্ষকদের নাম উঠে এসেছে। অভিযুক্ত এসব শিক্ষক ‘শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে’ আধিপত্য বিস্তার করতে অনিয়ম করে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের ভোটার তালিকায় জায়গা করে দিতে ইন্ধন দিয়েছেন।
অনুসন্ধান বলছে, কলেজটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম নিয়ে বর্তমান প্রশাসন দুর্নীতিবিরোধী কোনো তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেনি। যেখানে কলেজের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, সেখানে প্রশাসন কোনো না কোনোভাবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। কলেজের প্রয়োজনীয় নথিপত্র গায়েব করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জমি ক্রয়, অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার ও এফডিআর কেলেঙ্কারিসহ কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা ও আইন শাখা ব্রডশিট জবাব চাইলেও পরিচালনা পরিষদ জবাব দেয়নি। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ অডিট ফার্ম দিয়ে অডিট সম্পন্ন করতেও সহযোগিতা করছে না বর্তমান কলেজ প্রশাসন। ফলে একদিকে যেমন বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে অন্যদিকে দুর্নীতিবাজরা বহাল তবিয়তে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
কলেজটির সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি ব্রডশিট জবাব চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ডিআইএ-এর তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা এসব অনিয়ম নিয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে জবাব না দিলে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের এমপিও স্থগিত এবং গভর্নিং বডির অনুমোদন বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। তবে, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও এসব অনিয়মের কোনো জবাব না দিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন কলেজটির অবৈধ অধ্যক্ষ। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন কলেজটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানীও
কলেজটির সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি ব্রডশিট জবাব চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ডিআইএ-এর তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসা এসব অনিয়ম নিয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে জবাব না দিলে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের এমপিও স্থগিত এবং গভর্নিং বডির অনুমোদন বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। তবে, নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও এসব অনিয়মের কোনো জবাব না দিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন কলেজটির অবৈধ অধ্যক্ষ। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন কলেজটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানীও।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, কলেজটির সভাপতি সম্মানী গ্রহণের নামে করেছেন হরিলুট। তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল অর্থ। ইন্ধন দিচ্ছেন কলেজের দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকা শিক্ষকদেরও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী যেন কলেজের দাগি দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের আশ্রয়ের ঠিকানা। তার কেরামতিতে বহাল তবিয়তে আছেন অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ ও দুর্নীতিবাজ একাধিক শিক্ষক। আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী নিজেও সম্মানীর নামে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। দুর্নীতিবাজদের রক্ষাই যেন তার প্রধান দায়িত্ব। এ কারণে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জবাব চাওয়ার সেই চিঠিকে দেখিয়েছেন বৃদ্ধাঙ্গুলি।
এমন অনিয়ম নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা ও আইন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেগম বদরুন নাহার বলেন, তাদের কাছে ব্রডশিট জবাব চাওয়া হয়েছিল। সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করেছে। ফলে যেসব শিক্ষক অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং গভর্নিং বডি ভেঙে দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। কলেজ শাখা থেকে এ বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ যা যা ব্যবস্থা নেওয়া যায় সবই নেওয়া হবে।
তাদের কাছে ব্রডশিট জবাব চাওয়া হয়েছিল। সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করেছে। ফলে যেসব শিক্ষক অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং গভর্নিং বডি ভেঙে দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। কলেজ শাখা থেকে এ বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ যা যা ব্যবস্থা নেওয়া যায় সবই নেওয়া হবে
বেগম বদরুন নাহার, অতিরিক্ত সচিব, নিরীক্ষা ও আইন অনুবিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়
আলোর মুখ দেখেনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন
কলেজটির দুর্নীতি ও অনিয়মের অনুসন্ধানে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ডিন (স্নাতকোত্তর শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ওই তদন্ত কমিটি তিন মাস সাতদিন পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে কলেজের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৎকালীন গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু নাঈম মো. রাফি এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বাদল চন্দ্র অপুর আচরণ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বলে মনে হয়নি। এ ছাড়া কলেজের জমি ক্রয়বাবদ গভর্নিং বডির সভাপতি ও কলেজের অধ্যক্ষের স্বাক্ষরে আবু নাইম রাফির নামে দুই কোটি ৩৫ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ টাকার চেক প্রদান করাও বিধিবহির্ভূত।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৎকালীন গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু নাঈম মো. রাফি এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বাদল চন্দ্র অপুর আচরণ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বলে মনে হয়নি। এ ছাড়া কলেজের জমি ক্রয়বাবদ গভর্নিং বডির সভাপতি ও কলেজের অধ্যক্ষের স্বাক্ষরে আবু নাইম রাফির নামে দুই কোটি ৩৫ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ টাকার চেক প্রদান করাও বিধিবহির্ভূত
পাঁচ বছরেও হয়নি তদন্ত কমিটি
কলেজের নামে কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নে জমি কেনার অনিয়ম নিয়ে আবু নাঈম মো. রাফি ও গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এখনও তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। বহাল তবিয়তে থাকা এসব অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো পরিচালনা পর্ষদ আজ অবধি ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ঢাকা পোস্টের হাতে আসা ওই জমির চুক্তিনামা দলিলে দেখা গেছে, সারা রিয়েল এস্টেট নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে পক্ষ করে চুক্তিনামাটি করা হয়। একই সঙ্গে প্রতি শতাংশ জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ১৭ হাজার টাকা।
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) এসব অনিয়ম নিয়ে আরেকটি তদন্ত করে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে অনিয়মের অজানা অধ্যায়।
কী বলছে ডিআইএ-এর তদন্ত প্রতিবেদন
ডিআইএ-এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জমির মূল্য চেকের মাধ্যমে পরিশোধের কথা থাকলেও অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্যে তা নগদে প্রদান করা হয়। জমিটি মালিক পক্ষের নিকট থেকে সরাসরি ক্রয় করা হলেও সারা রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার কোম্পানিটিকে বিপুল অঙ্কের টাকা প্রদান করা হয়। জমির মালিকের নিকট থেকে কম দামে জমি ক্রয় করা হলেও দলিলে বেশি দাম দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। ফলে জমির রেজিস্ট্রি খরচবাবদ কলেজের ক্ষতি হয় ১৭ লাখ ২৭০ টাকা। সর্বশেষ ৮৫ শতক জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ লেনদেন নগদে সম্পন্ন করা হয়। এখানেও আরও বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০০৯ সালের বিধিমালায় সম্মানী নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে কোনো বিধান ছিল না। এ সুযোগে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি নিজেদের ইচ্ছামতো সম্মানী নিতেন। ২০২৪ সালের প্রবিধানমালায় এ সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা নিয়োগ পরীক্ষার সম্মানী ছাড়া অন্য কোনো পারিশ্রমিক নিতে পারবেন না। ফলে সম্মানীর নামে অর্থ লোপাট করার আর সুযোগ নেই। তবুও যদি কেউ সম্মানী নেন, সেটা হবে আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন
মো. রবিউল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব, কলেজ শাখা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সারা রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার কোম্পানিটির অনুমোদন করা কোনো দালিলিক কাগজপত্র নেই। যেমন- নিবন্ধন, কোম্পানির আয়কর সার্টিফিকেট, ব্যাংক সার্টিফিকেট, পরিচালকের এনআইডি ইত্যাদি। টাকা গ্রহণের ক্ষেত্রে গ্রহীতার নাম ও স্বাক্ষরের কোনো মিল নেই। ভুয়া এ কোম্পানির মালিক আবু নাঈম মো. রাফির আত্মীয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯২ শতাংশ জমি যার দলিল মূল্য এক কোটি ৯৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, খতিয়ান নং ৩৭ কিন্তু আবু নাঈম মো. রাফি দলিলে ঘষামাজা করে ৭ (সাত) বানিয়ে অধ্যক্ষের দপ্তরে জমা দেন। সে কারণে জমিটির নামজারি করা আজও সম্ভব হয়নি। এখানে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ৯২ শতাংশ জমি ক্রয় ও রেজিস্ট্রি ফিসহ কলেজটি প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
সেখানে আরও বলা হয়েছে, অবশিষ্ট সাতটি দলিলে ১৬৯.৬৪ শতাংশ জমির তথ্য আবু নাঈম মো. রাফি এখনও হিসাব শাখায় জমা না দেওয়ায় আর্থিক দুর্নীতি ও রেজিস্ট্রি ফিবাবদ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া কলেজের শিক্ষক আবু নাঈম মো. রাফি ও বাদল চন্দ্র অপুসহ তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কলেজের এফডিআর দুর্নীতি, সাব স্টেশন সংক্রান্ত দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করার সত্যতা উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
সবকিছু বিধিমোতাবেক নেওয়া হচ্ছে। সম্মানী ভাতা নিয়ে কোনো অনিয়ম হয়নি। আগে যেভাবে চলে এসেছে, এখনও সেই নিয়মে সম্মানী নেওয়া হচ্ছে
অধ্যাপক আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, সভাপতি, শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ
বহাল তবিয়তে অবৈধ শিক্ষকরা
ডিআইএ-এর ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে কলেজটিতে ৪৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। যা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আপ্যায়ন ও সম্মানীবাবদ খরচ করা হয় ১৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকার বেশি। একই সঙ্গে নিয়ম না মেনে এ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন কলেজের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক হারুনর রশীদ খান।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া এসব শিক্ষককে বিধিবহির্ভূতভাবে দেওয়া হয় উচ্চ বেতন। অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ৪৫ শিক্ষকের অনেকে সটকে পড়লেও এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন ১৯ জন শিক্ষক। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাউশির প্রতিনিধি ছাড়াই তাদের নিয়মিত করা হয়। তারা এখনও কলেজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
অভিযোগ অনেক তবুও একই পদে নাসিম
কলেজটির জমি ক্রয় সংক্রান্ত মহাদুর্নীতির ঘটনা ঘটলেও এখনও অর্থ কমিটির সদস্য পদে আছেন সৈয়দ মোহাম্মদ নাসিম। অবৈধভাবে জমি ক্রয়ের নগদ লেনদেনে স্বাক্ষর করে অনুমোদন দিয়েছিলেন তিনি। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আবু নাঈম মো. রাফি ও বাদল চন্দ্র অপুর যোগসাজশে এ পদে রাখা হয়েছে তাকে।
সম্মানীর নামে হরিলুট, একই পথে হাঁটছেন আলফেছানী
কলেজের বিভিন্ন আলোচনা সভায় সিটিং অ্যালাউন্স নিয়ে আগের সভাপতি অধ্যাপক হারুনর রশীদ খানের নানা অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে ডিআইএ-এর তদন্ত প্রতিবেদনে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কলেজটির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানীও সম্মানীর নামে হরিলুটে নেমেছেন। কলেজটির পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সভায় সম্মানী নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও প্রতি সভায় তিনি নিচ্ছেন ১৮ হাজার টাকা। ফলে প্রতি মাসে একাধিক সভা আহ্বান করে সম্মানীবাবদ নিচ্ছেন ৫০ হাজার টাকার বেশি। অন্যদিকে, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও নয় হাজার থেকে ১১ হাজার ১০০ টাকা অবধি সম্মানী নিচ্ছেন।
অথচ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যরা নিয়োগ পরীক্ষার সম্মানী ছাড়া কোনো পারিশ্রমিক নিতে পারবেন না।
সম্মানীর নামে এই হরিলুট আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের বিধিমালায় সম্মানী নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে কোনো বিধান ছিল না। এ সুযোগে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি নিজেদের ইচ্ছামতো সম্মানী নিতেন। ২০২৪ সালের প্রবিধানমালায় এ সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা নিয়োগ পরীক্ষার সম্মানী ছাড়া অন্য কোনো পারিশ্রমিক নিতে পারবেন না। ফলে সম্মানীর নামে অর্থ লোপাট করার আর সুযোগ নেই। তবুও যদি কেউ সম্মানী নেন, সেটা হবে আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
অভিযোগ নিয়ে যা বলছেন আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেজটিতে আগে সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন মো. শাহজাহান মিয়া ও মো. আব্দুল হক। বর্তমান সভাপতির মেয়াদও পার হয়েছে প্রায় পাঁচ মাস। অভিযোগ উঠেছে, কলেজটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে কোনো সভাপতিই ব্যবস্থা নিতে পারেননি। যখন যারাই এসেছেন, রাফি-বাদল চক্রে আটকে গেছেন। সবাই যেন একই গোয়ালের গরু।
অভিযোগের বিষয়ে কলেজের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবকিছু বিধিমোতাবেক নেওয়া হচ্ছে। সম্মানী ভাতা নিয়ে কোনো অনিয়ম হয়নি। আগে যেভাবে চলে এসেছে, এখনও সেই নিয়মে সম্মানী নেওয়া হচ্ছে।
আগে সম্মানী গ্রহণের বিষয়ে অনিয়ম হয়েছে এবং সেটি তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাহলে কীভাবে আপনি আগের নিয়মেই সম্মানী নিচ্ছেন এবং কোন বিধিমালায়— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিধি মেনেই নেওয়া হচ্ছে। কোন বিধিতে নেওয়া হচ্ছে এই মুহূর্তে আমার জানা নেই।’
নির্ধারিত সময় পার হলেও কেন মন্ত্রণায়ের চিঠির জবাব দেওয়া হয়নি— উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। জবাব দেওয়া হবে।’