অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলামের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন।

সাব রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে সরকারি চাকরি করার সময় অহিদুল ইসলাম অবৈধ উপায়ে এক কোটি তিন লাখ ৫৮ হাজার ৬৪৯ টাকার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। তার বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, অহিদুল ইসলাম ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজে সমাজকল্যাণ বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি ২০০৪ সালের ৩ মার্চ বোরহানুদ্দীন কলেজের চাকরি থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন পরিদপ্তরে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর পদোন্নতির মাধ্যমে জেলা রেজিস্ট্রার পদে যোগদান করেন। আর ২০২০ সালের ১ জুলাই গাজীপুর জেলায় বদলি হয়ে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি হলে তিনি ২০২১ সালের আগস্টে তা জমা দেন। এতে তিনি এক কোটি ৪৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদর্শন করেন। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তিনি ৩৯ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩ টাকার স্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করলেও ওই সম্পদ তার আয় হতে ক্রয়কৃত নয় বলে জানান।

আসামির দেওয়া বক্তব্য এবং আয়কর নথির তথ্যমতে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বেসরকারি-সরকারি চাকরির বেতন ভাতা, পিতা-মাতা থেকে দানমূলে প্রাপ্ত জমির আয়, গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে প্রাপ্ত রয়ালটি, গৃহ সম্পত্তির আয়, জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ, শেয়ার ব্যবসার আয় এবং এফডিআর বা সঞ্চয়পত্রের মুনাফার প্রাপ্ত অর্থসহ মোট দুই কোটি ৬৩ লাখ টাকা আয়ের উৎস প্রদর্শন করেন।

সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায়, তিনি তার নিজ অর্থ দ্বারা তার শাশুড়ির নামে ৩০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট এবং তার পিতার নামে ৭৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকার জমি ক্রয় করে নিজ ও সন্তানের নামে স্থানান্তর করেছেন। সব মিলিয়ে আসামির নামে দুই কোটি ২০ লাখ ৫৩ হাজার ৯২৫ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

দুদকের অনুসন্ধান বলছে, আসামির শাশুড়ি ৩০ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় ফ্ল্যাটটি ক্রয় করেই সাত মাস পর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্ল্যাটটি অহিদুল ইসলামের নাবালক পুত্র অয়নের নামে হেবা ঘোষণা দলিল মূলে দান করেন। অথচ অহিদুল ইসলামের শাশুড়ির উক্ত ফ্ল্যাট ক্রয়ের মতো আর্থিক ক্ষমতা ছিল না। অবৈধ সম্পদ লুকাতে আসামি এমন অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়।

দুদক বলছে, অবৈধ সম্পদ লুকাতে একইভাবে নিজের বাবাকে ব্যবহার করেছেন অহিদুল। বাবা আনছার উদ্দিন মাল ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৯২ শতাংশ জমি ক্রয় করে তা পরবর্তীতে নিজের তিন পুত্র ও কন্যাকে না দিয়ে আসামির নামে হেবা ঘোষণা দলিল মূলে দান করেন।