স্পোর্টস ডেস্ক রিপোর্টঃ
নাঈম ইসলাম নিজেকে অভাগা ভাবতেই পারেন। ছন্দে থাকার পরও জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া, লিগে ভালো করেও ফেরার সুযোগ না দেওয়া কষ্টের কারণ তাঁর কাছে। সেই ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পরের সিরিজেই নেওয়া হয়নি তাঁকে। শেষ ছয় ওয়ানডে ইনিংসে দুটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৪৪ রান করা নাঈম বাদ পড়েন ২০১৪ সালে। সেই থেকে নাঈম শুধুই ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরমার। ২৭ বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ঝরে পড়া এ অলরাউন্ডার ৩৭ বছরেও উজ্জ্বল। চলতি মৌসুমের জাতীয় ক্রিকেট লিগে ৭৫.৫০ গড়ে ৪৩৫ রান করা নাঈমের লড়াই নিজের সঙ্গে হলেও বাংলাদেশ টাইগার্সে অনুশীলন করার সুযোগ না পাওয়া শামসুর রহমানের মতো আরও অনেকের মুখেই শোনা গেছে উপেক্ষার আক্ষেপ।
২০২৩-২৪ মৌসুমে জাতীয় লিগের সর্বোচ্চ স্কোরার মুমিনুল হকের রান ৪৭৫। ৫২.৭৭ গড়। তিনি টেস্ট দলে নিয়মিত। সেখানে অলরাউন্ডার নাঈম ৭৫.৫০ গড় নিয়েও নির্বাচকদের নজরে পড়েননি। তেমনি ডিউক বলে তিন সেঞ্চুরি করা শামসুর রহমান শুভর হৃদয়েও কষ্টের বরফ জমে আছে। নাঈম-শুভর মতো শুভাগত হোমও উপেক্ষার তীর ছুড়তে পারেন নির্বাচকদের দিকে। বিসিবির কোনো দলেই বিবেচিত না হওয়ার আক্ষেপে আজও পোড়ায় এই ক্রিকেটারদের।
ঘরোয়া লিগে ভালো করা শুভর কণ্ঠে কথায় কথায় বেজে ওঠে হতাশার সুর, ‘টেস্টে আমার এভারেজ ভালো ছিল। যে কোনো কারণে আমি বাদ পড়ি। এর পর টানা তিন বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (সুপার লিগ বাদে) সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। অথচ আমাকে জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হয়নি। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ৯ হাজার রান করা ও ২৩টি শতক পাওয়া ব্যাটার আমি। গত বছর প্রথম শ্রেণির লিগে ডিউক বলে তিনটা সেঞ্চুরি করেছি। জাতীয় দল বাদ দিলাম, বাংলাদেশ টাইগার্স বা ‘এ’ দলেও তো রাখতে পারত। আগের নির্বাচকরা জানেনই না আমি এনসিএলে সাড়ে চারশ (৪৪৬) রান করেছি।’
দেশের ক্রিকেটে ‘ছক্কা-নাঈম’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নাঈম ইসলাম জানান, তিনি খেলেন সেরা হওয়ার লক্ষ্যে। তিনি জানান, উপেক্ষা-বঞ্চনা ছাপিয়ে জয় করার মানসিকতা তৃপ্তি দেয় তাঁকে, “খেলতে গেলে কেউ খারাপ খেলতে চান না। যে দল বা যে টুর্নামেন্টে খেলি, চেষ্টা থাকে সেরা হওয়ার। জাতীয় দলে ডাক পেলাম বা না পেলাম, তা নিয়ে ভাবি না। লক্ষ্য থাকে দুই দলের খেলায় আমাকে সেরা হতে হবে। তবে আমাদের মতো ক্রিকেটারকে ‘এ’ দলে নেওয়া হলে তরুণরা কিছু অভিজ্ঞতা নিতে পারে।”
জাতীয় দলের সাবেক এ ক্রিকেটারদের অনুযোগের কারণ জানতে চাওয়া হলে সাবেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার বলেন, ‘প্রত্যেকের বাদ পড়ার পেছনে কারণ থাকে। এ ছাড়া জাতীয় দলেরও একটা পরিকল্পনা থাকে। এ কারণে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলা অভিজ্ঞদের সব সময় সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে নাঈমের ভাগ্যটা খারাপ। সে ভালো খেলেও জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিল। তখন একটা সেটেল দল থাকায় পরবর্তী সময়ে সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।’
জাতীয় দলের আরেক সাবেক ক্রিকেটার তুষার ইমরান মনে করেন ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরমারদের ‘এ’ দলে নেওয়া উচিত। অন্তত ‘এ’ দলে পাঁচ থেকে ছয়টা ম্যাচ খেলার সুযোগ দিয়ে দেখা উচিত সে জাতীয় দলের যোগ্য কিনা। অভিজ্ঞ পারফরমারদের ‘এ’ দলে নেওয়া হবে কিনা জানতে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি।