
ডেস্ক রিপোর্ট:
ইউক্রেন যে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হবে সেটা কিছুটা হলেও বুঝে গেছেন ইউক্রেনীয়রা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘রাশিয়াপ্রীতি’ কেবল ইউক্রেনই নয়, ইউরোপের অনেক দেশই আতঙ্কের মধ্যে পড়েছে। ইতিমধ্যে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মধ্যে সেই ভয়ের অভিব্যক্তি প্রকাশও পেয়েছে। এছাড়া সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোও। রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ভয়ে দিন গুনছে।
ভেঙে যাবে ইউক্রেন!
জার্মান ভিত্তিক থিংকট্যাংক কিয়েল ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, গেল তিন বছরে কিয়েতের পেছনে প্রায় ১২০ বিলিয়ন ডলার চেলেছে ওয়াশিংটন। যার সিংহভাগই গেছে সামরিক সহায়তা গাতে। পরিসংখ্যান বলছে, এ পর্যন্ত ইউক্রেনকে আনুমানিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা কন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার কিয়েভের কাঁধ থেকে পুরোপুরি হাত উঠে গেল ওয়াশিংটনের। ইউক্রেনীয় সামরিক বিশেষজ্ঞ মিকোলা বিলিয়েসকও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইউক্রেন তিন থেকে চার মাস টিকে থাকতে পারবে; খুব বেশি হলে তা ছয় মাস পর্যন্ত গড়াতে পারে।
কিন্তু, ক্ষেপণাস্ত্র বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিস্ফোরকের ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে হতে পারে। কেননা, প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেমের বিস্ফোরক তৈরির সক্ষমতা ইউরোপের নেই। এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্রই পারবে। এমনকি এ বিষয়ে নিজেদের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চলের গভর্নর ওলেক্সান্ডার প্রোল্ডদিন বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সেনারা যেভাবে হন্ত্রাস্টের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন তাতে ইউক্রেনীয়। ইউক্রেনীয় সেনাদের দীর্ঘ সময় লড়াই করা সম্ভব হবে না। ইউক্রেনের সরকারি তথ্য বলছে, দেশটির প্রয়োজনীয় সমরাজের ৪০ শতাংশই তৈরি হয় কিয়েভে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৩০ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। আর বাকি ৩০ শতাংশ আসে অন্যান্য ইউরোপীয় মিত্রদের থেকে।
হোয়াইট হাউজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বাদানুবাদের পর কেবল সামরিক সহায়তাই নয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছেন। মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য না পেলে ইউয়েন রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবে না। আবার রাশিয়ার মামলার বিষয়েও পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে না। রাশিয়া ও ইউক্রেনকে চাপে ফেলে হয়তো একটা শান্তিচুক্তি করে ফেলতে পারেন ট্রাম্প। কিন্তু এতে ইউক্রেন আর যুদ্ধের আগের অবস্থায় ফিরতে পারবে না। বিশেষ করে রাশিয়া এখন পর্যন্ত যত পরিমাণ ভৌগোলিক এলাকা দখল করেছে সেইটুকু বাদ দিয়েই ইউক্রেনের নতুন মানচিত্র তৈরি করতে হবে। আবার পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার স্বপ্নও আর সফল হবে না। জানা যাচ্ছে, ইউক্রেনে শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনেরও শর্ত দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এমনকি এই বাহিনীর সদস্যরা কোন দেশের হবে সেটাও নির্ধারণ করে দেবেন পুতিন। ফলে ইউক্রেন যে কঠিন ভেঙে যাওয়ার পরিস্থিতিতে আছে সেটা রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতেই পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অভাব পূরণ করা ইউরোপের পক্ষে সম্ভব নয়।
আতঙ্কে পোল্যান্ড
রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর থেকেই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে পোল্যান্ড। বরাবরই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ঘোর সমর্থক হিসেবে দেখা গেছে দেশটিকে। এমনকি প্রায় ১০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থীকেও আশ্রয় দিয়েছে দেশটি। এতে পোল্যান্ডের ওপর ক্ষুদ্ধ রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সদস্য পোল্যান্ডই এখন হয়ে আছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের মুখেই সেই আতঙ্কের কথা শোনা গেছে। তিনি রাশিয়ার হামলার আশঙ্কা করছেন। তার মতে, রাশিয়া ইউক্রেন থেকে সামরিক অভিযান পোল্যান্ডের দিকে নিয়ে আসতে পারেন। এজন্য তিনি তার দেশের প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ও সক্ষম পুরুষকে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাশিয়ার ১৩ লাখের বেশি সেনা আছে। সেখানে তিনি তার দেশে অন্তত ৫ লাখের একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তুলতে চান।
তিনি জানিয়েছেন, এই বছরের শেষ নাগাদ এ ধরনের একটি বাহিনী গড়ে তোলার কাজ সমাপ্ত করতে চান। টাস্ক রাশিয়ার হামলার আশঙ্কা করে সামরিক ব্যয় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছেন বলেও জানিয়েছেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট পুতিন মিত্র দেশ বেলারুশের পোল্যান্ড সীমান্তে পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করেছিলেন। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল পোল্যান্ড এবং ন্যাটোর কাছে জানিয়েছিল। পরে ন্যটো বাহিনীও পোল্যান্ড সীমান্তে সামরিক মহড়া চালিয়েছিল।
কিন্তু কেন এখন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর মনে এই ভীতি? এ বিষয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়া এবং ইউরোপের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষণ দেখেই প্রধানমন্ত্রী টাস্ক রাশিয়ার হামলার আশঙ্কা করছেন। প্রধানমন্ত্রী টাস্ক ইতিমধ্যে পরমাণু অস্ত্র পাওয়ার ব্যাপারেও আলোচনা শুরু করেছেন। বিশেষ করে ফ্রান্সের পরমাণু অস্ত্র যাতে তিনি সুবিধামতো সময়ে পান সেই বিষয়টি নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যার্জর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ম্যার্জও পোল্যান্ডকে কীভাবে পরমাণু অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করা যায় সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
টাস্ক জানিয়েছেন, তার দেশ অত্যাধুনিক অস্ত্র পাওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ এর আগে ইউক্রেন পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু চাপের মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। আর তার ফল হয়েছে রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে পড়া। পোল্যান্ডের ২ লাখ সদস্যের রামরিক বাহিনী। ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কের পর দেশটির অবস্থান। আর ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার ছিল ৮ লাখ। অথচ অত্যাধুনিক অস্ত্রের অভাবে রাশিয়ার কাছে টিকতে পারছে না।