নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে গেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি।
বুধবার (২০ মার্চ) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চে তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হবে।এর আগে গতকাল ১৯ মার্চ যুথির জামিন আবেদন শুনতে নতুন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টে বেঞ্চে তার জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য পাঠানো হয়।
গত ১৮ মার্চ বিচারপতি মো. সেলিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের এক বিচারক নাহিদ সুলতানা যুথির জামিন আবেদন শুনতে বিব্রতবোধ করেছিলেন।এর আগে গত ১৪ মার্চ হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। তিনি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় অ্যাডভোকেট যুথি এক নম্বর আসামি। তিনি ছাড়াও মামলার আসামি অ্যাডভোকেট শাকিলা রৌশন, ব্যারিস্টার চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা) জামিন আবেদন করেছেন।
গত ৮ মার্চ রাতে শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথি ও বিএনপির প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়।সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান চৌধুরী সাইফ তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর রাতেই ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন— অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ (৫৫), অ্যাডভোকেট শাকিলা রৌশন, অ্যাডভোকেট কাজী বশির আহম্মেদ, ব্যারিস্টার উসমান, অ্যাডভোকেট আরিফ, অ্যাডভোকেট সুমন, অ্যাডভোকেট তুষার, রবিউল, ব্যারিস্টার চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা), সাইদুর রহমান জুয়েল (৪০), অলিউর, যুবলীগ নেতা জয়দেব নন্দী, মাইন উদ্দিন রানা, মশিউর রহমান সুমন, কামাল হোসেন, আসলাম রাইয়ান, অ্যাডভোকেট তরিকুল ও অ্যাডভোকেট সোহাগ। এ ছাড়া মামলায় ৩০-৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজহারে বলা হয়, ‘আসামিরা ১নং আসামির নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নিচ তলার শহিদ শফিউর রহমান মিলনায়তন রুমের দরজা ৩নং আসামি ১, ২, ও ৪ নং আসামির পরামর্শক্রমে সু-কৌশলে ও ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে অডিটোরিয়ামের দরজা খুলে দিলে অস্ত্র হাতে জোরপূর্বক বেআইনি জনতাবদ্ধে অনধিকার প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় আমাকেসহ নির্বাচন সাব-কমিটির অন্যান্য সদস্যদের গালিগালাজ করে। আসামিদ্বয়ের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার মাঝ বরাবর আঘাত করলে আমি বাধা দিতে গেলে আমার বাম পাশের কানের উপরে মাথার অংশে সজোরে আঘাত করলে আমি মারাত্মকভাবে জখমপ্রাপ্ত হই।
অন্যান্য আসামিরা কাঠের লাঠি, কাঠের ও প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে অতর্কিতভাবে এলোপাথাড়ি মারপিট করে ও পা দিয়ে আঘাত করে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে এবং আমার পরা কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। ওই আসামিরা আমার সঙ্গীয় ব্যারিস্টার জাকারিয়া হাবিবকে মারপিট করে আহত করে।একপর্যায়ে ৫নং আসামির হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে ব্যারিস্টার জাকারিয়া হাবিবকে আঘাত করে তার ডান হাতের আঙ্গুল ভেঙে ফেলে ও তার কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।
১নং আসামি অ্যাডভোকেট রিনা বেগমকে চর-থাপ্পড় ও হুমকি দেয় এবং ১১নং আসামি গলায় চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা করে। অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আসামিরা অডিটোরিয়ামের ভেতরে এলোপাথাড়ি ভাংচুর ও অরাজকতা সৃষ্টি করে। যার ফলে নির্বাচনি দায়িত্বরত সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে নির্বাচনি অন্যান্য কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভণ্ডুল হয়ে যায়।
একপর্যায়ে সব আসমিসহ ১নং আসামি নিজে অস্ত্রের মুখে নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরকে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করার জন্য বাধ্য করে।
নির্বাচন সাব-কমিটির সকল সদস্য জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ভোট গণনার কাজ না করেই চলে যেতে বাধ্য হয়। এছাড়া আমার প্যান্টের পকেটে থাকা ১৫ হাজার টাকা ১২ নং আসামি নিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সি.সি টিভি ফুটেজে ঘটনার বিষয়ে সমস্ত ধারণ করা আছে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উক্ত ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণার কাজ আসামিরা সম্পন্ন হতে না দিয়ে ১নং আসামিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত ঘোষণা করার অবৈধ দাবিতে তার নেতৃত্বে উপরোক্ত ঘটনা ঘটায়।
এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের বিএনপির প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ৬ আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।