আগের কোটা আন্দোলনের ৩১ নেতা কিন্তু বিসিএসে উত্তীর্ণ হতে পারেনি: ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ৩:৪৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মেধাবী জনগোষ্ঠীই সরকারের প্রয়োজন, শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে সংগ্রাম শুরু করেছেন তার মূল চালিকাশক্তি হল মেধাবী জনগোষ্ঠী। এছাড়া সরকার কোটা আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি আন্তরিক বলেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। এই মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, শিক্ষিত, দক্ষ, স্মার্ট প্রজন্ম গঠনের মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংগ্রামকে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছে নিতে মেধাবী তরুণ প্রজন্ম আমাদের প্রধান প্রয়োজন। তবে তিনি আরও বলেন, এর আগে যে কোটা আন্দোলন বাংলাদেশে হয়েছিল সেখানকার প্রথম সারির ৩১ জন নেতা তারা কিন্তু বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এটার হিসাব আপনারা (সাংবাদিক) নিতে পারেন।

সোমবার (৮ জুলাই) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

কোটাবিরোধী আন্দোলনে জনদুর্ভোগ কমাতে সরকারের কঠোর হওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা তো আপিল করলাম। এখনও আদালত চূড়ান্ত রায় দেয়নি। এর মধ্যে আমরা কীভাবে হস্তক্ষেপ করি? আমর তো বলছি জনদুর্ভোগ হয় এমন কর্মসূচি পরিহার করা উচিত। আদালতের রায় হোক তারপর দেখা যাবে।

সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি বিচারাধীন, তা চূড়ান্ত হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমরা মনে করি দেশের উচ্চ আদালত বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে রায় দেবেন।

আন্দোলন স্থগিত বা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি যা বক্তব্য রেখেছি এ থেকে বুঝে নেন। আমার যা বলার বলে দিয়েছি, ভাষাটা বুঝে নিন। তাহলেই হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে পরিপত্র জারি করে সকল প্রকার কোটা বিলোপ করেছেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করে, দেশের উচ্চ আদালত কোটা বাতিলের পরিপত্র বাতিল করেছে। সরকারের পক্ষের আইনজীবী হাইকোর্টের রায়ের পক্ষে আপিল করেছে। সরকার কোটাবাতিলের দাবির প্রতি আন্তরিক বলেই অ্যাটর্নি জেলারেল আপিল দায়ের করেছেন।

উচ্চ আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে কোনও প্রকার মন্তব্য করা আইনসিদ্ধ নয় দাবি করে তিনি বলেন, আদালত উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্ক শুনে নিশ্চয়ই একটা চূড়ান্ত রায় দেবে। উচ্চ আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কোনও প্রকারের উত্তেজনা, রাস্তাঘাট বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি পরিহার করা উচিত। বিশেষত এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অসুবিধা হয় যে কর্মসূচিতে, সে ধরনের কর্মসূচি পরিহার করা দরকার।

সময়ের পরিবর্তনে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে

কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিভক্ত ও মেরুকরণের রাজনীতি যুক্ত হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি প্রকাশ্যে এবং তাদের সমমনারা এই কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করেছে। তারা সমর্থন করেছে প্রকাশ্যেই। সমর্থন করা মানেই তারা এর মধ্যে অংশগ্রহণও করেছে। কাজেই এটা এখন মেরুকরণের রাজধানীর ধারার মধ্যেই পড়ে গেছে। এটার রাজনৈতিক রঙ নতুন করে বলার আর অপেক্ষা রাখে না। এখানে কারা কারা যুক্ত আছে, কোনও ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা সেটা আন্দোলনের গতিধারার মধ্যেই বোঝা যাবে। এই গতিধারায় সবকিছুই সময়ের পরিবর্তনে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কোনও কিছুই লুকানো সম্ভব হবে না। সেটা আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
যেকোনও আন্দোলনে রাজনৈতিক দল, ইউনিয়ন কর্মীরা অংশ নিলেও নেতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে কেন, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক দল পৃথিবীর কোন দেশে আন্দোলনে সামিল হয়েছে? এটা বিচারাধীন। কোনও রাজনৈতিক দল পারে না এভাবে। এটা তো আদালতের রায়, তারা যে আন্দোলন করছে (কোটা বাতিল) এই সিদ্ধান্তই ছিল সরকারের। সরকারই আবার আপিল করেছে। আদালত রায় দিয়েছেন, এখানে সরকারের দোষ কোথায়? এখানে যে বিষয়টা আদালতের এখতিয়ার সে বিষয়টা নিয়ে কথা বলা বা সমালোচনা করা, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এটা তো আইনসিদ্ধ নয়। আমরা সেটাই বলছি।

শিক্ষকদের আন্দোলন

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগও আছে। আনুষ্ঠানিক বসাবসি এখনও হয়নি। সিদ্ধান্ত তো নিতে হবে বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে। এখানে আমরা সুপিরিয়র, না শিক্ষকরা সুপিরিয়র এ বিতর্কে যাব না। আমরা যাব যার পদমর্যাদার ভিত্তিতে যেটা বাস্তবসম্মত, সেটায় যাব।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।