আন্দোলন নিয়ে হতাশ নয় বিএনপি, ফাঁকা আওয়াজ বলছে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ৫:০১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

নবম, দশম, একাদশ এবং সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মিলিয়ে টানা চারবার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। আর ভোট ব্যবস্থা, গণতন্ত্র নিয়ে নানান প্রশ্নের মধ্যদিয়ে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবারের নির্বাচনেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে মন্ত্রিসভাও গঠন হয়েছে এবং সরকারকে অভিবাদন জানাচ্ছে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো।

অন্যদিকে, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর দাবি- ভোট বর্জনে জনগণ সাড়া দিয়েছে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ফের আন্দোলনে নামবে জনগণ। জনগণ তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করবে বলে মনে করছেন তারা। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের দাবি একতরফা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সরকার গঠন করলেও নানান কারণে বেশিদিন টিকবে না।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিরোধীরা আন্দোলন করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে, সামনের দিনগুলোতে সরকারকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে তেমনটি দেখছেন না আওয়ামী লীগপন্থিরা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ৪১ শতাংশেরও বেশি ভোট কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি বিএনপি নেতাদের অবাক করেছে। তারা প্রশ্ন তুলছেন, প্রথম সাত ঘণ্টায় যেখানে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে, সেখানে শেষ ঘণ্টায় কীভাবে এত ভোট পড়লো? সই ছাড়াই ফলাফল শিট, ভোটের অস্বাভাবিক হারসহ নানান বিষয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বলে দাবি তাদের।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছিল বিএনপি। তবে নির্বাচনের কয়েকদিন আগে কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে এসে লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচি দেয় দলটি। নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত কালোপতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও সমমনারা। ঢাকা এবং সারাদেশে এ কর্মসূচি পালন করেছে দলগুলো। এই অবস্থায় দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রশ্ন, নির্বাচন তো শেষ হলো, এখন সরকারকে চাপে রাখতে কোন ধরনের আন্দোলনে যাবে বিএনপি?

আওয়ামী লীগ নিঃসন্দেহে একটি বড় রাজনৈতিক দল। আগেও তারা ক্ষমতায় ছিল। স্বাধীনতার পরবর্তীতে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ছিল। সঙ্গত কারণে তাদের তো কিছু জনসমর্থন আছে। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছে, তারা সরকারকে বিভিন্নভাবে সমর্থন দিচ্ছে। বিরোধী দলগুলো দমন-পীড়নে তাদের বুক একটুও কাঁপবে না।’— ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম

তবে, বিএনপির আন্দোলন কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে হবে সেটি নিয়ে বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে, আন্দোলন করে বিএনপি তথা বিরোধীদলগুলো কিছু করতে পারবে না বলেও মনে করছেন আওয়ামী লীগপন্থিরা। নির্বাচন পরবর্তীতে নানান বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতারা।

বিএনপি নেতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন  বলেন, বিএনপির ভোট বর্জন কর্মসূচিতে জনগণ সাড়া দিয়েছে। একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠন করা হয়েছে তা একটা অভিনব বিষয়। আগের সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি। মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেননি। একটি সংসদ থাকতে আরেকটি সংসদ গঠন, এটা সাংবিধানিক সংকট। যেটি দেশি-বিদেশি বিশ্লেষক, রাজনৈতিক এবং কেউ ভালোভাবে দেখেছেন না।

তিনি বলেন, নির্বাচন বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। যদি ৪০ শতাংশ লোক ভোট দিয়ে থাকেন, তা হলে ৬০ শতাংশ লোক ভোট দেননি। এ সরকার জন সমর্থনহীনভাবে চলতে পারে না। জিনিসপত্রের দাম, ব্যাংক ও অর্থনৈতিক অবস্থা যেভাবে চলছে তাতে সরকারের ভবিষ্যৎ সুপ্রসন্ন দেখছি না।

অন্যদিকে, বিএনপি নেতাকর্মীরা কারাগারে আছেন। বিশেষ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এখনো কারাগারে। এ অবস্থার মধ্যেই রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী অন্য দলগুলো।

সরকার হটাতে গণআন্দোলন, এ বিষয়ে তিনি বলেন— আপনারা জানেন ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দলীয় কার্যালয়ে তালা মেরে রাখা হয়েছিল। সম্প্রতি তালা ভেঙে অফিসে প্রবেশ করেছেন নেতাকর্মীরা। এ বিষয় সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে। বিএনপি বসে নেই। আমাদের দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম আছে, শরিক দল আছে সবাই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।- যোগ করেন জয়নুল আবেদীন।তিনি বলেন, আমরা মনেকরি জনগণ সব ক্ষমতার উৎস। সুতরাং জনগণই নির্ধারণ করবে বর্তমান সরকার কতদিন থাকবে।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেন, আমি মনে করি বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক। নির্বাচনটা কেমন হয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো তুলে ধরেছে। অনেক দেশের পর্যবেক্ষক আসেনি। সরকার ভালো নির্বাচন দেখাতে অনেক কেন্দ্রে দলীয় সমর্থকদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। অনেক কেন্দ্র দেখা গেছে, সাংবাদিক ও ডামি বিদেশি পর্যবেক্ষক চলে যাওয়ার পর লাইন ভেঙে সবাই চলে গেছে।

নির্বাচন বর্জনে সফল বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে আন্দোলনে আছে জানিয়ে ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেন, আমাদের সফলতা এখানে দেশের মানুষ রাজপথে না নামলেও আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল। জনগণ মাঠে আন্দোলন করতে না পারলেও ভোটে বর্জন করে দেখিয়েছে।

আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছে, সেখানে রেগুলার পুলিশ ফোর্স কত ছিল, এখন কত?। দেশে আনসার ও ভিডিপির (গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী) সংখ্যা ৬ দশমিক ১ মিলিয়ন মানে ৬১ লাখ। এর মধ্যে রেগুলার সাড়ে তিন লাখ। এটা দেশের অনেক মানুষ জানে না বোধহয়। তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ পুলিশ আছে অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ। আগে আন্দোলনে গুলি করা হতো না, আমরা এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছি, গুলি করা হতো না। এখন গুলির ভয়ে সাধারণ মানুষ আন্দোলন নামছে না। কিন্তু ভোট বর্জনের মধ্যদিয়ে সরকারের প্রতি অনাস্থা দেখিয়েছে তারা। এতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি এর যথার্থতা ও যৌক্তিকতা প্রমাণ হয়েছে। আমাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি।

‘ভোটে প্রতিযোগিতা হয়েছে বলেই ৬৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছে। তবে কিছু লোক আতঙ্কে ছিল। ভোটের আগের দিন রাতে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়ে মারা হয়েছে। লাগাতার বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছিল। এখন পলিটিক্যাল স্ট্যান্টবাজি চলছে। অতীতেও এভাবে বিএনপির ফাঁকা আওয়াজ দেখা গেছে।’— অ্যাডভোকেট কাজী মো. নজিবুল্লাহ হিরু

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ নিঃসন্দেহে একটি বড় রাজনৈতিক দল। আগেও তারা ক্ষমতায় ছিল। স্বাধীনতার পরবর্তীতে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ছিল। সঙ্গত কারণে তাদের তো কিছু জনসমর্থন আছে। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছে, তারা সরকারকে বিভিন্নভাবে সমর্থন দিচ্ছে। বিরোধী দলগুলো দমন-পীড়নে তাদের বুক একটুও কাঁপবে না।

নিজেদের বাঁচাতে সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় না থাকলে নিজেরাই বিপদে পড়বে। তাই তারা নিজেদের বাঁচাতে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা মোটেও হতাশ না। দলের সিনিয়র নেতা-নেত্রীরা নীতিনির্ধারক যারা আছেন সবাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন আছেন থাকবেন। আলোচনায় ঠিক পরবর্তী করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এটাই হলো বাস্তবতা।

আওয়ামী লীগ নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের বন্ধুরা (বিএনপি) বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তা স্বীকার করে নিলে রাজনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি যতই বলুক তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে জনগণ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। যে কোনো কারণেই হোক না কেন তাদের বহু কর্মী ভোট দিয়েছেন। দেশের যে কোনো নির্বাচনে ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট দিয়ে থাকে জনগণ। সেখানে এবারের নির্বাচনে ৩৫ থেকে ৪১ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে উত্তেজনা দেখা যায়। কারণ বিপরীত দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলে পরিস্থিতি তেমনই হবে এটাই স্বাভাবিক।

ভোট বর্জনের আহ্বানে জনগণ সাড়া দিয়েছে বিএনপির এমন দাবির বিষয়ে আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, রাজনৈতিক ইতিহাসে এ রকম বক্তব্যের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হ্যাঁ/না ভোটের মাধ্যমে অবৈধ নির্বাচন করার ব্যবস্থা করে জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার আমলে যত নির্বাচন হয়েছে কোনো নির্বাচন আওয়ামী লীগ বর্জন করেনি।

তিনি বলেন, মূলত ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের একটা ভীতি, নির্বাচনে খালেদা জিয়াসহ তাদের পরিবারের কেউ অংশ নিতে পারছেন না বলেই বর্জন করা হচ্ছে। তারা যদি ২০১৪ এর পরে ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন করতো তা হলে দেশের রাজনীতি একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতো।

বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ২০১৪ সালে অনির্বাচিত ১৫৩ জন, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে, ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন। জনগণের দাবি ছিল বা আছে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হতে পারে না এটা আবারও প্রমাণ হলো।

বিএনপির আইন সম্পাদক বলেন, আমাদের দাবি নিয়ে জনগণের কাছে গিয়েছি। জনগণ ভোট বর্জন করেছে। বাস্তবে ৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়নি। বিএনপির জনগণের প্রতি একটি আহ্বান ছিল ভোট বর্জন করার, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বর্জন করেছে। যদিও নির্বাচন কমিশন দেখিয়েছি ৪১ শতাংশ। যে কারণে সরকার এখন টাল-মাতাল অবস্থায় আছে।

তিনি বলেন, বিএনপির দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পূর্ণ বহাল, ‘আমার ভোট আমি দেবো’ শুধু এটুকুই না বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফার প্রস্তাবনা আছে। আমরা সেই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত। ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের তোয়াক্কা করে না। এ সরকারও তাই।

নতুন সরকার গঠন করায় আপনারা হতাশ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, কোনো অবস্থাতেই কেউ হতাশ না। হ্যাঁ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত। আমরা সেই মামলা মোকাবিলা করবো। ভোট বন্ধ করতে পারিনি কিন্তু ভোট বর্জনের যে আন্দোলন ছিল তাতে সফল হয়েছি।

পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে কায়সার কামাল বলেন, পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে সমমনা অর্থাৎ যুগপৎ আন্দোলনে যারা আছেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এর মাধ্যমে আন্দোলনের নতুন পথ তৈরি হবে, আন্দোলন চলবে।

আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী মো. নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, ভোট কেমন হয়েছে দেশের জনগণ দেখেছে। এখন ডিজিটাললি অবজার্ভ করে বলা হয়েছে সব জায়গায় ভোট হয়েছে।

ভোটে প্রতিযোগিতা হয়েছে বলেই ৬৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছে। তবে কিছু লোক আতঙ্কে ছিল। ভোটের আগের দিন রাতে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়ে মারা হয়েছে। লাগাতার বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছিল, এগুলো তো বর্জন না, রীতিমতো হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। হুমকি দেওয়ার পরেও নির্বাচন সুন্দর হয়েছে। এখন পলিটিক্যাল স্ট্যান্টবাজি চলছে। অতীতেও এভাবে ফাঁকা আওয়াজ দেখা গেছে।

তিনি বলেন, বিএনপির রাজনীতি বিদেশ নির্ভর। বিদেশ প্রভুদের ইশারায় আন্দোলন করে তারা। যখন প্রভুরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে তখন তারাও নিষ্ক্রিয় হয়। মাঠ পর্যায়ে কোনো মেরুদণ্ড নেই বিএনপির।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মো. আবদুন নূর দুলাল বলেন, ভোট নিয়ে তারা প্রশ্ন করবেই। এ প্রশ্ন তাদের আগে থেকে সেট করা। আমরা বিভিন্ন সেন্টারে দেখেছি সারাদিন ভোট হয়েছে। যে যা ভোট পেয়েছেন সবাই জেনুইনলি পেয়েছে। এবার নির্বাচন হয়েছে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ।

তিনি বলেন, বিএনপির কোনো আন্দোলন সফল হবে না, সরকার যতটা সহনশীলতার পরিচয় দেওয়ার যতটা নিরপেক্ষ থাকার তার চেয়েও বেশি নিরপেক্ষ থেকেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এতটা নিরপেক্ষ দেখায়নি। এবার সরকার গঠন করা হয়েছে। সরকার হটাও আন্দোলনে বিরোধী শক্তি আগামীতেও টিকবে না।

নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর আন্দোলন এবং করণীয় নিয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি বলেন, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী দিয়ে জেলগুলো ভরে রেখেছে। নির্বাচনের নামে তামাশা করেছে তারা। দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ এ ডামি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা ভোট বর্জন করেছে। দেশি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার বদৌলতে বিশ্বের মানুষ এ ডামি নির্বাচন দেখেছে। বাকশালী সরকারকে জনগণ লাল-কার্ড দেখিয়েছে এটাই হচ্ছে আন্দোলনের মেসেজ।

আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে, এখন বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর পরবর্তী করণীয় কী জানতে চাইলে ফাহিমা নাসরিন মুন্নি বলেন, গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশের মানুষ অচিরেই একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে।

তিনি বলেন, আজ মানুষ কথা বলতে ভয় পায়। সভা সমাবেশ করতে পারে না। আমাদের নেত্রীকে ৩৬টি মামলা দিয়ে কীভাবে আটকিয়ে রেখেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে ৫০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। আমাদের প্রায় অর্ধ-লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেড় লাখের বেশি মামলা দিয়েছে। সারাবিশ্বই মিথ্যা কখনো জয়লাভ করতে পারে না, সত্যের জয় হবেই। আন্দোলন চলছে, চলবে।