
ডেস্ক রিপোর্ট:
ইরানে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধান নিশ্চিত করতে ড্রোন, নজরদারি ক্যামেরা ও বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিন্নমত দমন এবং নারীদের পোশাকবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়িয়েছে দেশটির সরকার।
জাতিসংঘের এই স্বাধীন তদন্ত মিশন জানায়, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী সাধারণ নাগরিকদের উৎসাহিত করছে, যেন তারা নারীদের পোশাকবিধি লঙ্ঘনের তথ্য সরবরাহ করে। খবর: বিবিসি
তদন্তে উঠে এসেছে, ইরানে নারীদের হিজাব পরিধান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিস্তৃত নজরদারি চালানো হচ্ছে। ড্রোন এবং সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করে প্রধান শহরগুলোর রাস্তায় নারীরা হিজাব পরছেন কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তেহরানের আমিরকবির বিশ্ববিদ্যালয়ে বসানো হয়েছে ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার, যা শিক্ষার্থীদের চেহারা স্ক্যান করে এবং নারীদের পোশাক পরীক্ষা করে। এছারাও নাজার (ঘধুবৎ) নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে ইরানি পুলিশ, যার মাধ্যমে নাগরিকরা নারীদের পোশাকবিধি লঙ্ঘনের তথ্য জানাতে পারেন।
জনসাধারণের যানবাহনে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে, যাতে বাস, মেট্রো, ব্যক্তিগত গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সে কোনো নারী হিজাব না পরলে তা শনাক্ত করা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাজার অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট নারীদের বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দিতে পারেন। এরপর সংশ্লিষ্ট যানবাহনের মালিককে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। একাধিকবার আইন লঙ্ঘিত হলে গাড়ি জব্দ করারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজাববিধি লঙ্ঘন করলে নারীদের গ্রেপ্তার, মারধর এমনকি পুলিশি হেফাজতে যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
২০২২ সালে নীতি পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশি নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হয়। তবে ইরানের সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, মাসার মৃত্যু হৃদ্রোগজনিত কারণে হয়েছে।
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন বলছে, ২০২২ সালে শুরু হওয়া বিক্ষোভের দুই বছরের বেশি সময় পরও ইরানের নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ইরানি কর্তৃপক্ষ নাগরিকদেরও নজরদারির কাজে যুক্ত করছে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন।
এই প্রতিবেদন ১৮ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে উপস্থাপন করা হবে। এতে প্রায় ৩০০ জন ভুক্তভোগী নারী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইরানের এই বাধ্যতামূলক হিজাবনীতি ও নজরদারির কঠোর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে এবং নারীদের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।