ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ৬ প্রার্থী কারা, কী তাদের পরিচয়?
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ৬ প্রার্থীকে অনুমতি দিয়েছে ইরানের শক্তিশালী ‘গার্ডিয়ান কাউন্সিল’। নির্বাচনে জয়ী প্রার্থী হবেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য চূড়ান্তভাবে অনুমতি পাওয়া প্রার্থীরা হলেন- মোস্তফা পুরমোহাম্মাদী, সাঈদ জালিলি, মোহাম্মদ বাকের কলিবফ, আলী রেজা যাকানি, সাইয়্যেদ আমির হোসেন কাজীজাদেহ হাশেমি ও মাসুদ পেজেশকিয়ান।
এখানে তাদের পরিচয়, অতীতের কর্মতৎপরতা ও দায়িত্বের সংক্ষিপ্ত রেকর্ড তুলে ধরা হলো:
মাসুদ পেজেশকিয়ান (সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও হার্ট সার্জারি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী)
তার জন্ম হয়েছিল পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশে ১৯৫৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। ১৯৭৩ সালে প্রথম ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেওয়ার পর তিনি ১৯৭৫ সালে বিজ্ঞান বিষয়ে দ্বিতীয় ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন। এরপর তাব্রিজ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১৯৭৬ সালে।
মাসুদ পেজেশকিয়ান প্রেসিডেন্ট খাতামির দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং তাব্রিজ অঞ্চলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইরানের জাতীয় সংসদ মজলিশের সদস্য তথা সংসদ ছিলেন পর পর ৫ বার।
দশম সংসদে তিনি ছিলেন প্রথম ডেপুটি স্পিকার। এবারের নির্বাচনে একমাত্র তিনিই সংস্কারকামী ধারার প্রার্থী।
মোস্তফা পুরমোহাম্মাদী (ইসলামী আইনে পিএইচডি ডিগ্রিধারী)
তার জন্ম হয়েছিল কোম প্রদেশে ১৯৬০ সালে ৯ মার্চ। ইসলামী আইন ও বিচার এবং দর্শন বিষয়ে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা কোমে শেষ করার পর বিচার ও ইসলামী আইন বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের পড়াশোনা করেছেন মাশহাদ ও কোম এবং তেহরান শহরে।
১৯৭৯ সালে মোস্তফা পুরমোহাম্মাদী ইসলামী বিপ্লবী আদালতের প্রসিকিউটর বা কৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন এবং ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইরানের কয়েকটি প্রদেশে এই পদে দায়িত্বপালন করেন। ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন গোয়েন্দা বিষয়ক উপমন্ত্রী।
২০০৫-২০০৮ মেয়াদে মোস্তফা পুরমোহাম্মাদী ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০০৮-২০১৩ মেয়াদে তিনি ছিলেন জাতীয় তদন্ত দপ্তরের প্রধান। ২০১৩-১৭ মেয়াদে তিনি ছিলেন বিচারিক বিষয়ক মন্ত্রী। বর্তমানে তিনি সংগ্রামী আলেম সমাজ নামক দলের মহাসচিব এবং ইসলামী বিপ্লবের দলিল-পত্র বিষয়ক কেন্দ্রের প্রধান।
সাঈদ জালিলি (রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রীধারী)
তার জন্ম হয়েছিল মাশহাদ শহরে ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে কয়েকবার তিনি প্রতিরক্ষার যুদ্ধে (ইরাক-ইরান) অংশ নেন।
১৯৮৬ সালে তিনি একুশতম খোরাসান ইমাম রেজা ব্রিগেডের একজন সেনা হিসেবে সক্রিয় থাকার সময় কারবালা-৫ নামক অভিযান চলাকালে পায়ে মারাত্মক আঘাত পান এবং জরুরি চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তার ডান পা হারান। এরপরও সাঈদ জালিলি রসদপত্র বিভাগে সেনা হিসেবে সক্রিয় থাকেন।
সাঈদ জালিলি ১৯৮৯ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত বিষয়ক দপ্তরের প্রধান হন। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকান বিভাগ বিষয়ে তিনি প্রধান ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাঈদ জালিলি ২০০৭ সাল থেকে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত জাতীয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পশ্চিমা সরকারগুলোর সঙ্গে পরমাণু বিষয়ক আলোচনায় নেতৃত্ব দেন।
২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত ১১ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হন এবং ৪০ লাখেরও বেশি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এরপর থেকে সাঈদ জালিলি জাতীয় নীতি নির্ধারণী পরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৭ সালের নির্বাচনে ইব্রাহিম রায়িসির পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছিলেন তিনি। ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের দুই দিন আগে রায়িসির প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
আলী রেজা যাকানি (তেহরানের মেয়র ও পারমাণবিক চিকিৎসায় পিএইচডি ডিগ্রিধারী)
তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৬ সালের ৩ মার্চ। ১৯৮৯ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৯৮ সালে তিনি জেনারেল ফিজিশিয়ান হিসেবে ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৪ সালে তিনি পারমাণবিক চিকিৎসা বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
আলী রেজা যাকানি ইরানের সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তেহরান অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হন। ১১ তম সংসদ নির্বাচনে তিনি কোমের প্রতিনিধি হিসেবে বিজয়ী হন।
আলী রেজা যাকানি সংসদের গবেষণা বিভাগের প্রধান, তেহরান চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমিতির সভাপতি ও তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বাসিজের প্রধান, তেহরান প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাসিজ শাখার প্রধান এবং রেড ক্রিসেন্ট সংস্থার সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ২০২১ সাল থেকে তেহরানের মেয়র হিসেবে এবং ২০২৩ সালে প্রেসিডেন্টের সহকারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
কাজীজাদেহ হাশেমি (বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ)
তার জন্ম হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল খোরাসান প্রদেশের ফারামিন শহরে। তিনি ছিলেন ১১ তম জাতীয় সংসদে মাশহাদ অঞ্চলের অন্যতম প্রতিনিধি এবং সংসদের প্রথম ডেপুটি স্পিকার।
সংসদের অষ্টম, নবম ও দশম নির্বাচনেও তিনি একই অঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে বিজয়ী হন। স্পিকার পরিষদের সদস্যও ছিলেন তিনি।
কাজীজাদেহ হাশেমী একাধারে সার্জন, মেডিসিন ও নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ। কিছুকালের জন্য তিনি সেমনান চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরও ছিলেন। পেইদারি ফ্রন্ট নামক দলের কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য ও দলটির মুখপাত্রও ছিলেন তিনি।
ইসলামী ইরানের ১৩ তম সরকারের তিনি অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং শহীদ ফাউন্ডেশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৩ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তিনি চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিলেন।
মোহাম্মদ বাকের কলিবফ (স্পিকার ও রাজনৈতিক ভূগোলে পিএইচডি ডিগ্রিধারী)
তার জন্ম হয়েছিল ১৯৬১ সালের ২৩ আগস্ট মাশহাদের কাছে তোরক্বাবেহ অঞ্চলে। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবী গ্রুপগুলোর তৎপরতার প্রেক্ষাপটে ইমাম খোমেনীর নির্দেশে ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী গঠন করা হলে তিনি এই বাহিনীতে যোগ দেন ১৮ বছর বয়সে এবং ১৯৮২ সালে এই বাহিনীর ইমাম রেজা (আ) ব্রিগেডের কমান্ডার হন।
এক বছর পর তিনি খোরাসানের নাসর-৫ ডিভিশনের কমান্ডার হন। মোহাম্মদ বাকের কলিবফ ১৯৯৭ সালে ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিমান-সেনা শাখার প্রধান হন ইরানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে। ২০০১ সালে তিনি রাজনৈতিক ভূগোল বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
এর আগে ২০০০ সালে তিনি ইরানের পুলিশ বাহিনীর প্রধান হন। ২০০৫ সালে তেহরানের মেয়র হন এবং এই পদে ১২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি তেহরান অঞ্চলের আসনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে একটি আসনে বিজয়ী হন। সেসময় কলিবফ ভোট পেয়েছিলেন দশ লাখেরও বেশি।
তিনি ২০০৫, ২০১৩ ও ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রার্থী হন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি ৬০ লাখ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। ২০১৭ সালের নির্বাচনে তিনি ইব্রাহিম রায়িসির প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রার্থিতা ত্যাগ করেছিলেন।পার্সটুডে