ইসি যেভাবে কাজ করতে বলবে আমরা সেভাইে করবো: ডিএমপি

প্রকাশিত: ৬:৩২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আমরা এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে, তাদের নির্দেশ মতো কাজ করে দেবো। নির্বাচনকালীন যে ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা দরকার, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্তরে সে কার্যক্রম চলবে। সেই জায়গা থেকে নির্বাচন কমিশন থেকে যেভাবে কাজগুলো করতে বলবে তা আমরা সেভাবেই করবো। এছাড়া যেসব জায়গা নিরাপদ রাখার জন্য বলবে প্রতিটা জায়গায় আমাদের আলাদা নিরাপত্তা প্রোগ্রাম থাকবে। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ককটেল বিস্ফোরণ এবং বিস্ফোরক বিভিন্ন সরঞ্জামসহ ১২ জনকে গ্রেফতারের বিষয়ে তুলে ধরতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, বাসে আগুন ঠেকাতে ৩০টি জায়গায় আমাদের পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। রাজধানীতে ছোটবড় ৫০০টি মোড় রয়েছে। সব জায়গায় তো আর পুলিশ থাকতে পারবে না, তাই একেক বার একেক জায়গায় তারা দায়িত্ব পালন করছে।
নাশকতার বিষয়ে তিনি বলেন, যারা বিস্ফোরকদ্রব্য জোগাড় করতে চায় তারা ঝুঁকি নিয়েও জোগাড় করে। জনজীবনের জন্য জ্বালানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সে কারণে আমরা প্রতিটি জায়গায় তা বিক্রি বন্ধ করে দিতে পারি না। বরং সেই জায়গাগুলোতে আমরা চেষ্টা করেছি যাতে লুজ (খোলা) বিক্রি না হয়। যারা নাশকতা করছে তারা কনডেন্স মিল্কের কৌটা নিয়ে আসে, টেপ নিয়ে আসে। এগুলো নিষিদ্ধ কোনো বস্তু নয়। এটা আপনার আমার সবার কাছে আছে। আমরা ব্যবহার করি কল্যাণের জন্য, প্রয়োজনের জন্য। কিন্তু নাশকতাকারীরা সেটা এনে তার সঙ্গে বিস্ফোরক ব্যবহার করে নাশকতা করছে। আমরা হাতেনাতে তাদের ধরছি।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে যত নাশকতা হচ্ছে, তা নাশকতাকারীদের প্রচেষ্টার তুলনায় অনেক কম। অনেক জায়গায় অরক্ষিতভাবে গাড়ি রাখা থাকে, এ সুযোগটা নেয় নাশকতাকারীরা। তবে, নাশকতা যেটি করেছে, সেটা তাদের প্রচেষ্টা বা উদ্যোগের চেয়ে কম। তবে, চোরাগোপ্তা হামলার শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ। আমাদের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টাই ডেপ্লয়মেন্ট করা থাকে। আমাদের অফিসাররাও চেষ্টা করছে নাশকতা মিনিমাইজ করার জন্য।
যত্রতত্র পার্কিং করা বাসে আগুন দেওয়া প্রতিরোধে পুলিশের কোনো গাফিলতি রয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমাদের প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো রাজধানীতে যত মানুষ, সেই অনুযায়ী জায়গা নেই। ফলে গাড়ি রাখার জন্য যত জায়গা, রাস্তা থাকা দরকার, তা অপর্যাপ্ত। সাড়ে চার হাজার গাড়ি পার্কিং করার তেমন স্থান নেই। তাই সংশ্লিষ্টদেরও আহŸান জানাই, তারা যেন ব্যবস্থা নেয়।
তিনি বলেন, গতকাল বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকা থেকে ৮ জন, শাহআলী এলাকা থেকে একজন ও শাহবাগ এলাকা থেকে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- মাহফুজ হোসেন মুনা (২০), মো. ইয়াছিন (১৯), মো. ফরহাদ (১৯), মো. মাহি (১৮), মো. আউলাদ হোসেন (১৮), মো. নাছিম (১৮), মো. আমজাদ আলী হোসেন (১৮), মো. তানভীর হোসেন (১৮), মো. নিজাম উদ্দিন জসিম, নূর মোহাম্মদ শিকদার (২৩), মোহাম্মদ বখতিয়ার চৌধুরী ওরফে শাহীন (২৪) ও মো. রুবেল (২০)। তাদের মধ্যে নিজাম উদ্দিন জসিম রূপনগর থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গ্রেফতার বাকিরাও অবরোধের কর্মসূচির সমর্থক। তবে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন বলেন, ডিএমপি সভা-সমাবেশসহ ঢাকায় বিভিন্ন কর্মসূচির বিষয়ে অনেক আন্তরিক। গত ৪ মাস ধরে ঢাকায় রাজনৈতিক-সামাজিকসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ডিএমপি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরপরেও আমাদের কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে।
আমরা বেশকিছু জায়গায় বিস্ফোরক জাতীয় বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করেছি। গতকাল বুধবার ভাষানটেকে একটি নির্মাণাধীন ভবনে বিস্ফোরক সামগ্রীসহ জমায়েত হওয়া ৮ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ নাশকতা সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে, সেসব ব্যবহার করতে পারলে নাশকতা ব্যাপকতা আরও বাড়তে পারতো।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বচনের তফসিল ঘোষণার পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতে নাশকতার প্রয়াস বেড়েছে। কয়েকটি এলাকায় ককটেল ছুড়ে মেরেছে। তবে পুলিশি তৎপরতার কারণে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঢাকার নিরাপত্তার প্রচেষ্টা সুদৃঢ় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। আগামী দিনগুলো এ ধরনের নাশকতার চেষ্টা করলে ডিএমপি পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে নিরাপত্তা দেবে।
গ্রেফতারদের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে। তারা সবাই অবরোধের সমর্থনে এসেছে, তবে আমরা প্রত্যেকের পদবি যাচাই-বাছাই করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিএমপি ৩৬৫ দিনই চ্যালেঞ্জের মধ্যে থেকে কাজ করে। কখনো তীব্রতা হয়তো কম থাকে। নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দরকার, সে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।