নিজস্ব প্রতিবেদক
পদ্মা সেতুর প্রভাবে নদীপথে কমেছে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রী। যাত্রী সংকট এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, বেশকিছু লঞ্চ এরই মধ্যে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। বছরজুড়ে এখন আর থাকে না সদরঘাটে ভিড়। থাকে না লঞ্চে গাদাগাদি। কর্মে ব্যস্ত লঞ্চের কর্মীরা অনেকেই বেকার। তবে ঈদের আগে যাত্রী বাড়বে, এমন আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ‘যাত্রীর চাপ’ সামলাতে প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষও।
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ঈদযাত্রায় মানুষের স্বস্তির জন্য বরাবরের মতো প্রস্তুতি নিয়েছে মালিকপক্ষ। আগামী ৪ এপ্রিল থেকে রোটেশন ছাড়াই দক্ষিণাঞ্চলের রুটগুলোতে পুরোদমে চলবে লঞ্চ। যাত্রীর উপস্থিতি বুঝে লঞ্চ সংখ্যা কমানো-বাড়ানো হতে পারে। চাঁদপুর ও ভোলা রুটে যাত্রীর চাপ সামলাতে বাড়তি লঞ্চ সংস্কার করে ঘাটে আনা হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে ৩১ মার্চ থেকে শুরু হবে কেবিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। কিছু লঞ্চ অনলাইনেও তাদের টিকিট নেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। এছাড়া ভাড়াও থাকছে আগের মতোই।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার হিসাবরক্ষক মো. হান্নান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী কমলেও ভোলা-চাঁদপুর রুটে বরাবরই যাত্রীর চাপ থাকে। তবে গত দুই ঈদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাত্রীদের চাপ থাকে। সেক্ষেত্রে যাত্রীদের সেবায় বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয়। এখন রোটেশন অনুযায়ী বরিশাল অঞ্চলে দিনে দুটি লঞ্চ গেলেও আগামী মাসের শুরু থেকে লঞ্চের সংখ্যা বাড়বে। ৪ এপ্রিল থেকে রুটগুলোতে শিডিউল অনুযায়ী সব লঞ্চ চলাচল করবে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী কমলেও ভোলা-চাঁদপুর রুটে বরাবরই যাত্রীর চাপ থাকে। তবে গত দুই ঈদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাত্রীদের চাপ থাকে। সেক্ষেত্রে যাত্রীদের সেবায় বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয়। এখন রোটেশন অনুযায়ী বরিশাল অঞ্চলে দিনে দুটি লঞ্চ গেলেও আগামী মাসের শুরু থেকে লঞ্চের সংখ্যা বাড়বে। আগামী ৪ এপ্রিল থেকে রুটগুলোতে শিডিউল অনুযায়ী সব লঞ্চ চলাচল করবে।-মো. হান্নানতিনি আরও জানান, বর্তমানে ঢাকা থেকে তুষখালী, টর্কি, আমতলী, পয়সারহাট, পাতাবুনিয়া, সূর্যমানসহ কয়েকটি রুটে লঞ্চ বন্ধ। তবে ঈদ উপলক্ষে যাত্রীর ভিড় দেখে পাতাবুনিয়া ও আমতলী রুটে লঞ্চ চলাচল করতে পারে।
এবার বরিশাল অঞ্চলের সুরভী, পারাবত, এমভি অ্যাডভেঞ্চার, কুয়াকাটা, মানামী, প্রিন্স আওলাদ, সুন্দরবন, মিতালী ও কীর্তনখোলার সব লঞ্চ চলাচল করবে। মানভেদে লঞ্চগুলোর ডেকের ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে রয়েছে। সিঙ্গেল কেবিন পাওয়া যাবে ১ হাজার টাকায়। ডাবল কেবিনের ভাড়া ২ হাজার টাকা। এছাড়া ফ্যামিলি কেবিন রয়েছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।
প্রিন্স আওলাদ লঞ্চের মালিক প্রিন্স আওলাদ বলেন, লঞ্চ ব্যবসা তো শেষ। লোকসান দিয়েই চলতে হচ্ছে আমাদের। ঈদে কিছু যাত্রীর চাপ থাকে। তবে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। যাত্রীর চাপ না থাকায় ভাড়া বৃদ্ধিরও সুযোগ নেই। আগের নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারবে। পর্যাপ্ত লঞ্চ ঘাটে থাকবে।
চাঁদপুর রুটে ৬ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন ২০টি লঞ্চ রাজধানীর সদরঘাট ছেড়ে যাবে। ইমাম হাসান, রফরফ, আবে জমজম, ময়ূর, আওলাদ, বোগদাদিয়াসহ বিলাসবহুল লঞ্চগুলো ছেড়ে যাবে ওই রুটে। ঈদ উপলক্ষে এ রুটেও কোনো ভাড়া বাড়ছে না বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ। এ লঞ্চগুলোতে ডেকের ভাড়া ১৯০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। ডাবল কেবিন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।
চাঁদপুর রুটের ইমাম হাসান ও বোগদাদিয়া লঞ্চের মালিক ফয়েজ আহমেদ বলেন, আমরা ঈদ উপলক্ষে উপচেপড়া ভিড় আশা করি। আশা করি শেষ মুহূর্তে হবে। তবে অন্যবার ১৫ রমজানের পর থেকে যাত্রীদের ভিড় শুরু হতো, এবার এখনো মানুষ ঘাটে আসছে না। এখন দৈনিক ১০ থেকে ১৫টি লঞ্চ যাচ্ছে। মানুষ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে। অনেকেই ঢাকায় ঈদ করবে।
অন্যদিকে, পদ্মা সেতুর প্রভাব না পড়া ভোলা জেলার রুটে যাত্রীর চাপ থাকবে বলে জানা গেছে। মানভেদে এ অঞ্চলের লঞ্চগুলোতে ডেকের ভাড়া ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ ও ডাবল কেবিন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। ফ্যামিলি কেবিন ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে এ রুটেরও ভাড়া বৃদ্ধি পাবে না।
আমরা ঈদ উপলক্ষে উপচেপড়া ভিড় আশা করি। আশা করি শেষ মুহূর্তে হবে। তবে অন্যবার ১৫ রমজানের পর থেকে যাত্রীদের ভিড় শুরু হতো, এবার এখনো মানুষ ঘাটে আসছে না। এখন দৈনিক ১০ থেকে ১৫টি লঞ্চ যাচ্ছে। মানুষ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে। অনেকেই ঢাকায় ঈদ করবে।-লঞ্চ মালিক ফয়েজ আহমেদ
এম ভি ভোলা ও এম ভি বালিয়া লঞ্চের মালিক এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার পরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান লিটন বলেন, ভোলা অঞ্চলে পদ্মা সেতুর প্রভাব তেমন না থাকলেও লঞ্চে যাত্রী কমেছে। ভাড়া কমিয়েও যাত্রী পাচ্ছি না। ঈদে আমাদের সব লঞ্চ প্রস্তুত। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ভাড়া কম রাখা হচ্ছে।
অন্যদিকে এবারও ঈদ উপলক্ষে যাত্রীর আশায় পুরোনো লঞ্চ সংস্কার করা হচ্ছে। রঙের প্রলেপে সজ্জিত করা হচ্ছে। সরেজমিনে বুড়িগঙ্গা নদীর কেরানীগঞ্জ ডকইয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-পটুয়াখালী রুটের সাত্তার খান-১, মাদারীপুর রুটের বাইজিদ জুনায়েদ-১, সুরেশ্বর রুটের মানিক-৪, বেতুয়া চরফ্যাশন রুটের ফারহান-৬ লঞ্চ সংস্কার করা হচ্ছে।সেখানে থাকা শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ঈদ কেন্দ্র করে লঞ্চগুলো চলাচল করবে। লঞ্চের ডেক ও বিভিন্ন জায়গায় ওয়েল্ডিং করা হচ্ছে। বাইরে দেওয়া হচ্ছে রং। আগামী ২ এপ্রিল কাজ শেষে লঞ্চগুলো ঘাটে ফিরবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, ঈদযাত্রার জন্য এরই মধ্যে ১৩০টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি রুটে এসব লঞ্চ চলাচল করবে। ঈদ উপলক্ষে নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন রোধ, ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধ, ঈদের আগে ও পরে নদীতে বাল্কহেডসহ ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা, নদীতে কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ’র টহল নিশ্চিত করা, মেরিন ক্যাডেট, স্কাউট, গার্লস গাইডের সদস্যরা যাত্রীদের লঞ্চে ওঠা-নামাসহ সার্বিক সহযোগিতা করবেন।
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাপ) সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামাল বাদল বলেন, আমাদের লঞ্চের যাতায়াতের অবস্থা নতুন করে কিছু বলার নেই। আগে সব সময় পুরো যাত্রী নিয়ে চলাচল করতো। এখন ঈদের আগে-পরে কয়েকদিন যাত্রীবোঝাই করে চলবে, এতটুকুই পার্থক্য। বিআইডব্লিউটিএ থেকে যে নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো মেনেই লঞ্চ চলবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, এবারের ঈদে ঢাকা ছাড়তে পারে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। ঈদের আগের চারদিন লঞ্চে ৬০ লাখ, বাস-মিনিবাসে ৩০ লাখ, ট্রেনে ৪ লাখ, প্রাইভেটকার, জিপ ও মাইক্রোবাসে ৩৫ লাখ, মোটরসাইকেলে ১২ লাখ, উড়োজাহাজে প্রায় ১ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারে।