উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হলো মরদেহ!

প্রকাশিত: ১২:১০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৭, ২০২৪

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

অ্যানেসথেশিয়ার ইনজেকশন দেওয়ার কিছু সময় পরই খিঁচুনি। এক পর্যায়ে কার্ডিয়াক ফেইলিউরে রোগীর মৃত্যু। ঘটনা চাপা দিতে সেই রোগীকে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে। এমন অভিযোগই পাওয়া গেছে ঝিনাইদহে এক স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায়।

এক বছরে জেলায় যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা এসব ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে অন্তত সাতজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে রিফাত হোসেন নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর নাম।
ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার ঢাকা ল্যাব নামে একটি ক্লিনিকে অ্যাপেনডিক্স অপারেশনের পর তার মৃত্যু হয়। সে জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দরিবিন্নি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র এবং চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী। রিফাত হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সড়াবাড়িয়া গ্রামের বাদশা মুন্সির ছেলে।

ঝিনাইদহে চিকিৎসকদের একের পর এক ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠছেই। জেলার প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে একের পর এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও নীরব কর্তৃপক্ষ। আবারও এমনই এক ঘটনায় জেলাজুড়ে আলোচনা তুঙ্গে। গত এক বছরে জেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে এমন সাত রোগীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। যাদের ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এসব হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে বলে দাবি সচেতন মহল ও ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনদের।

স্বজনদের অভিযোগ, মৃত্যুর পর রিফাতের মরদেহ প্রতারণার মাধ্যমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রিফাতের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তাকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানোর চেষ্টা করে। মূলত নিজেদের ভুল চাপা দিতেই এই নাটক সাজায় তারা। এ নিয়ে রিফাতের স্বজনরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা নিয়ে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রিফাতকে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার ঢাকা ল্যাব নামের ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক। সেখানে চিকিৎসক রেজা সেকেন্দার তার অপারেশন করেন। অপারেশনের কিছুক্ষণ পর রোগীর খিঁচুনি শুরু হয় এবং সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

এদিকে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে মৃত রোগীকে ওই চিকিৎসক প্রথমে কুষ্টিয়া ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার পর রাত ৮টার দিকে চিকিৎসকরা জানান তিন ঘণ্টা আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ক্লিনিকের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, অ্যানেসথেশিয়া চিকিৎসক অপূর্ব রিফাতকে ইনজেকশন দেওয়ার পর তার কার্ডিয়াক ফেল করে এবং সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

রিফাতের বাবা বাদশা মুন্সি শনিবার রাতে সাংবাদিকদের জানান, তাঁর ছেলে অপচিকিৎসার শিকার হয়েছে। তিনি এর বিচার চান। ওই গ্রামের ইউপি সদস্য আল আমিন জানান, রিফাত এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে অকালে ঝরে গেল তার প্রাণ। তিনি ওই চিকিৎসকের বিচার দাবি করেন।

এ বিষয়ে চিকিৎসক রেজা সেকেন্দারের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এদিকে এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন ঢাকা ল্যাবের ম্যানেজার আসিফ মিয়া ও মালিক আশরাফুজ্জামান লিপন। বন্ধ রাখা হয়েছে ক্লিনিকটি।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন শুভ্রা রানী দেবনাথ জানান, স্কুলছাত্র রিফাতের মৃত্যুর ঘটনার পর ওই ক্লিনিকটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সমঝোতার ভিত্তিতে ঘটনা মীমাংসা করে ফেলায় এসব ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে না সংশ্লিষ্টরা।

সিভিল সার্জন আরও জানান, এর আগে একাধিক রোগীর মৃত্যুর পর অভিযুক্ত চিকিৎসক রেজা সেকেন্দার জেলা প্রশাসকের কাছে আর অপারেশন না করার মর্মে তিনি মুচলেকা দিয়েছিলেন। তবে তিনি তা মান্য করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।