এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেন টং দোকানের চা বিক্রেতা স্মৃতি
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ফরিদপুর প্রতিনিধি:
মা-বাবার অভাবের সংসারে জন্ম নেওয়া স্মৃতি পারভীন যখন থেকে একটু বুঝতে শিখেছেন তখন থেকেই দেখেছেন বাবার কষ্ট আর সংসারের অভাব। তাই কৈশোরেই স্মৃতি পারভীন শুরু করেন চা বিক্রি। একইসঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে যান। সেই ক্লান্তিহীন পরিশ্রমের ফলাফল স্বরূপ এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে স্মৃতি পারভীন পেয়েছেন জিপিএ-৫। তিনি ফরিদপুরের বোয়ালমারী ময়না ইউনিয়নের ময়না গ্রামের গাছ ব্যবসায়ী হারুন অর রসিদের মেয়ে। তিন ভাই বোনের মাঝে সে দ্বিতীয়। এ বছর বোয়ালমারী কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের কারিগরি শাখার পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। সেই কলেজ থেকেই এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেলেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুরু থেকেই স্মৃতি পারভীনের শিক্ষা জীবন ছিল অনেক কঠিন। গাছ ব্যবসায়ী বাবার সংসারে অভাব দেখেছেন সেই শিশু বয়সেই। বাবার সেই অভাব-অনটনের সংসারের একটু সচ্ছলতার জন্য তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বড় বোন মনিকার সাথে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ছোট্ট একটি টং দোকানে বসে চা বিক্রি শুরু করেন স্মৃতি। জীবন যুদ্ধে পালাক্রমে দুই বোনকে দোকানদারির পাশাপাশি লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে হয়েছে নিজেদেরই।
স্মৃতির পরিবার জানায়, ভালো ফলাফল করেও ভবিষ্যতের চিন্তায় বিষণ্ণ স্মৃতি। ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে হতে চান বিসিএস ক্যাডার। কিন্তু অভাব-অনটনের সংসারে সেটা সম্ভব হবে কি না জানেন না কেউই। বড় বোন মনিকা ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তির অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। ছোট ভাই স্থানীয় এসি বোস ইনিস্টিউটের শিক্ষার্থী। তবে স্মৃতির সাফল্যে পরিবারের পাশাপাশি খুশি তার শিক্ষকরা।
বোয়ালমারী কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ বলেন, অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী স্মৃতি পারভীন। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে সে, লেখাপড়ার পাশাপাশি চা বিক্রি করতো। নিয়মিত ক্লাস করতে পারেনি। বিষয়টি জানার পরে আমরা তাকে সুযোগ দিয়েছি। তার সাফল্যে আমরা খুশি ও গর্ববোধ করছি। কলেজের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান অধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশাররফ হোসাইন বলেন, এটি একটি সুসংবাদ।
তাকে অভিনন্দন জানাই এবং লেখাপড়ার বিষয়ে যেকোনো সহযোগিতায় আমরা তার পাশে থাকবো।