নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিগত সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা বিচারাধীন প্রায় তিন হাজার মামলার মধ্যে গত এক বছরে মাত্র ৩০৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, যা মোট মামলার ১০ ভাগ। এছাড়া ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’র আমলের ৩৮টি মামলার বিচার নিষ্পত্তি করা হয়। ব্যুরোর ৩৫৯টি মামলা দেশের বিভিন্ন আদালতে এখনও বিচারাধীন রয়েছে। সব মিলিয়ে কমিশন ও ব্যুরোর মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৩৪১টি। কমিশন ও ব্যুরোর তিন হাজার ৩৫৩টি মামলা এখনও বিচারাধীন আছে। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
গত ৯ জানুয়ারি দুদকের উপ-পরিচালক প্রসিকিউসন (সার্বিক) মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সই করা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন আদালতে দুদকের দায়ের করা মামলা বিচারাধীন রয়েছে ২ হাজার ৯৯৪টি। এর মধ্যে বিচার কাজ চলছে ২ হাজার ৭৪৫টির। উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে ২৪৯টির। এর মধ্যে ৩০৩টি মামলার বিচার নিষ্পত্তি হয়েছে গত এক বছরে। আর অন্যান্যভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ২০টি মামলা। মামলার আসামিদের মধ্যে ৯৩ জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন। অর্থদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে ১৯০ জনের।
দুর্নীতি দমন ব্যুরো আমলের ৩৫৯টি মামলা এখনও বিচারাধীন আছে। এর মধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে ১৭৭টির। বিচারকাজ চলমান রয়েছে ১৮২টি মামলার। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশসহ নানা কারণে এসব মামলা ঝুলে আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিগত এক বছরে ব্যুরোর সময়ের ৩৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব মামলায় আসামিদের মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র পাঁচ জনের। খালাস পেয়েছেন ২৫ জন। ২০২২ সালে কমিশন ও ব্যুরোর মোট মামলার সংখ্যা ছিল তিন হাজার ৩২৬টি। ২০২৩ সালে নতুন করে ৩৬৮টি মামলা দায়ের করা হয় সারা দেশে।
নিম্ন আদালতে ২০২৩ সালে সাজা হওয়া উল্লেখযোগ্য মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট দেওয়া রায়ে আদালত তারেক রহমানকে সাড়ে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানকেও একইভাবে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয় জোবায়দাকে। হাইকোর্ট বিভাগের কোয়াসমেন্ট মূলে তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত।
এছাড়া প্যারাগন প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ও ম্যাক্স প্যাকেজিং লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ মো. হারুন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বনানী শাখার সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রিভিলেজ সেন্টারের সেন্টার ম্যানেজার জাহিদ সারোয়ার, মেসার্স সফিক ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. রফিকুল আলম ও তার সহযোগী আব্দুস সামাদ, গোপালগঞ্জের সহকারী সাব রেজিস্ট্রার মো. এনায়েত হোসেন, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনিছুর রহমান, জনতা ব্যাংকের এজিএম মো. শমী উল্লাহ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপ-কর কমিশনার আলী আকবর, রূপালী ব্যাংকের লক্ষ্মীপুরের পোদ্দারবাজার শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আব্দুল লতিফ ভুঁইয়া, বগুড়ার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান অফিস সহকারী খয়বর রহমান এবং রাজধানীর পুরানা পল্টনের জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড প্রিন্টিং পেপার্স লিমিটেডের পরিচালক মো. সেলিম প্রধানসহ অনেককেই বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, আয়কর ফাঁকি ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের তথ্যে গরমিল, ঘুষ গ্রহণ, সরকারি টাকা আত্মসাৎ, কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মামলা করে দুদক।
বিচারিক আদালতের দুদকের সিনিয়র আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মামলা যখন হয়ে যায়, তখন সেটা আর দুদকের হাতে থাকে না। সেগুলো আদালতের এখতিয়ারে চলে যায়। সেসব মামলা আদালত তাদের নিজস্ব ধারায় নিষ্পত্তি করে থাকে। সাক্ষী না আসাসহ নানা কারণেই মামলা দীর্ঘায়িত হয়। তবে মামলা দীর্ঘায়িত হলে সবারই ভোগান্তি বাড়ে। তবে সব কিছুই আদালতের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেনও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘মামলা যখন আদালতে চলে যায়, তখন দুদকের আর কিছু করার থাকে না।’