এক সপ্তাহেও নিখোঁজ দুই কিশোরী বান্ধবীর খোঁজ পায়নি পুলিশ

প্রকাশিত: ১০:১৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪

এসএম দেলোয়ার হোসেন

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে রহস্যজনকভাবে এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ হওয়া দুই কিশোরী বান্ধবীর এখনো খোঁজ মেলাতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে নিখোঁজ হওয়া দুই মেয়ের নম্বর থেকে তাদের পরিবারের কাছে ভিডিও কল দিয়ে পাচার হওয়ার কথা জানায় অজ্ঞাতনামা একব্যক্তি। তখন মেয়েটি তার ভাইকে বলেছে, ভাইয়া আমাদের বাঁচাও। এরপর থেকে মোবাইল নম্বর, ইমু, হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হলেও ঘটনার এক সপ্তাহেও নিখোঁজ দুই কিশোরী বান্ধবীর খোঁজ পায়নি পুলিশ। প্রতিবেশী ও পরিবারের শঙ্কা নিখোঁজ দুই কিশোরী হয়তো পাচারকারীর কবলে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো একটি চক্র কৌশলে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তুলে নিয়ে দেশের বাইরে পাচারের বা কোথাও আটকে রেখে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সম্ভাব্য স্থানে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। দুই কিশোরীকে উদ্ধারে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, সাইবার ইউনিটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। এদিকে দুই কিশোরী বান্ধবীকে ফিরে পেতে হন্যে হয়ে খুঁজছে তাদের অসহায় পরিবার। আজ শুক্রবার (২ ফেব্রæয়ারি) বিকেলে নিখোঁজর পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে পৃথকভাবে ৩ জন কিশোরী নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৩ জানুয়ারী বিকেল থেকে হাজারীবাগের বোরহানপুর এলাকার জনৈক মাসুদের বাড়ির ভাড়াটিয়া নিলু আক্তার ও ইদ্রিস দম্পতরি মেয়ে সুমনা আক্তার (১৫) ও তার বান্ধবী খাদিজা আক্তার (১৪)। ওইদিন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও বাসায় ফিরে না আসায় তাদের খোঁজে রাস্তায় নামে দুই পরিবার। ফোনে যোগাযোগ করেও তাদের পায়নি।
নিখোঁজ সুমনার হতদরিদ্র দিনমজুর বাবা ইদ্রিস ও গৃহকর্মী মা নিলু আক্তার নিউজ পোস্টকে বলেন, আমরা ১০ বছর ধরে হাজারীবাগের বোরহানপুর এলাকার বিভিন্ন ভাড়ায় বাসায় বসবাস করছিলাম। গত একবছর ধরে মাসুদ সাহেবের বাড়িতে বসবাস করি। সেখান থেকে গত দুই মাস আগেই নোটিশ দিয়ে চলতি বছরের ফেব্রæয়ারিতে কালুনগর এলাকায় জনৈক কবিরের বাড়িতে একটি ভাড়া করা বাসায় উঠেছি। এর আগেই গত ২৩ জানুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে আমার মেয়ে সুমনা তার বান্ধবী খাদিজাকে নিয়ে বাসার সামনে ঘুরতে বের হয়। এরপর তারা আর বাসায় ফিরে আসেনি। পরদিন ২৪ জানুয়ারি দিবাগত রাত একটার দিকে সুমনার ইমু নাম্বার থেকে একটি কল আসে আমার ছেলে রাজু’র মোবাইলে। সেখানে অজ্ঞতনামা একজন লোক বলছিলো আপনাদের মেয়ে ভারতে পুলিশের কাস্টডিতে আছে। আপনারা যথাযথ মাধ্যমে চেষ্টা করেন। ওই সময় সুমনাকেও ভিডিও কলে কথা বলতে দেন অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি। তখন সুমনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ভাই আমারে তোরা বাঁচা। আমি ও খাদিজা খুব বিপদে আছি। এরপর থেকে সুমনার সেলফোনটি আর চালু হয়নি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি। এমন খবর শুনে আমরা হাজারীবাগ থানায় গিয়ে পুলিশের সহযোগীতা চাই। পুলিশ আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও নিখোঁজদের ছবি এবং আইডি কার্ড গ্রহণ করেন। পরে
কোথাও কোনো খোঁজ না পেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি নিখোঁজ সুমনার মা নিলু আক্তার হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডি নম্বর-১৫৫৭। নিলু আক্তার আরও বলেন, বছর দুয়েক আগে মেয়ে সুমনাকে বিয়ে দিয়েছি। জামাতার নাম শাওন। নয় মাস বয়সী আবির নামে সুমনার এক ছেলে রয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি নিউজ পোস্টকে বলেন, বাবা এমন কোন জায়গা বাদ নেই মেয়েকে খুঁজিনি। বারবার পুলিশের কাছে গিয়েছি। তাদের কাছ থেকেও এখন পর্যন্ত আশ^াসই পেয়েছি, কিন্তু মেয়েকে পাইনি। এ সময় তার পাশে ছিলেন সুমনার বাবা মো. ইদ্রিস। তিনি বলেন, মেয়ে নিখোঁজের পর থেকেই কোন খাবার মুখে নেননি তার স্ত্রী। সারক্ষণই নাতী আবিরকে জড়িয়ে ধরে সুমনাকে ফিরে পেতে কাঁদছেন। এদিকে নিখোঁজ খাদিজা আক্তারের মা নাসিমা বেগম নিউজ পোস্টকে বলেন, আমিও বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালাই। আমার স্বামী আহম্মেদ হোসেন মৎসজীবি। আমি জীবিকার তাগিদে হাজারীবাগের বোরহানপুর থাকি। দুই বছর আগে মেয়ে খাদিজাকে সবুজের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেই। স্বামী সবুজকে সঙ্গে নিয়ে আমার স্বামী আহম্মেদ হোসেনের সাথে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের মেঘনা এলাকায় বসবাস করতেন মেয়ে খাদিজা। নিখোঁজের ২০ দিন আগে আমাকে দেখতে খাদিজা ঢাকায় আসে। আমি আমার মেয়ের সন্ধান চাই বলে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। এমন দৃশ্যে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।
প্রতিবেশী ও নিখোঁজের স্বজনদের ধারণা, নিখোঁজ দুই কিশোরী পাচারকারীর কবলে পড়েছে। তারা বলছেন, কোনো একটি চক্র কৌশলে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তুলে নিয়ে দেশের বাইরে পাচারের বা কোথাও আটকে রেখে অনৈতিক কর্মকাÐে লিপ্ত করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
আজ শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এ রিপোর্ট লেখাপর্যন্ত হাজারীবাগ থানায় যোগাযোগ করা হলে জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই প্রদীপ চন্দ্র বিষয়টি নিশ্চিত করে নিউজ পোস্টকে বলেন, একত্রে দুই কিশোরী বান্ধবীর নিখোঁজের বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তবে এখনো তাদের সন্ধান মেলেনি। সম্ভাব্য স্থানে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। দেশের বাইরে নয়, ভেতরেই তাদের অবস্থান রয়েছে। দুই কিশোরীকে উদ্ধারে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, সাইবার ইউনিটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। আশা করছি শিগগিরই দুই কিশোরীকে উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।