খেলাধুলা ডেক্স :
কর্মব্যস্ত দিনগুলোতে সাত সকালে অ্যালার্মের শব্দে সাধারণত ঘুম ভাঙে বেশিরভাগ মানুষের। আগামীকাল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হলেও ক্রীড়া পাগল বাঙালিদের জন্য বেশ ব্যস্ততমই এক ভোর অপেক্ষা করতে যাচ্ছে। আপনি যদি আর্জেন্টিনার অন্ধভক্ত হয়ে থাকেন এতক্ষণে আপনার ফোন কিংবা ঘড়িতে ভোর ছয়টা নাগাদ অ্যালার্ম সেট করার কথা।
কোপা আমেরিকার শিরোপা ধরে রাখার মিশনে বাংলাদেশ সময় ঠিক ৬টায় মাঠে নামবে মেসি বাহিনী। আটলান্টার মার্সিডিজ-বেঞ্জ স্টেডিয়ামে হবে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচটি। আলবিসেলেস্তেদের ম্যাচ শুরুর ঠিক আধঘণ্টা পর বিশ্বকাপের সুপার এইটের ম্যাচে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। সেরা আটের দ্বৈরথে টিম টাইগার্সের সামনে প্রথম চ্যালেঞ্জ শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে।
অবশ্য সকালেই শেষ হচ্ছে না শুক্রবারের ধামাকা। আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাতে মুখোমুখি লড়াইয়ে নামছে দুই ফেবারিট ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা।
কোপা আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই
করোনা মহামারির পর অনেক কিছুই বদলে গেছে। তবে সুসময়ের শুরুটা হয়েছে যেন আর্জেন্টিনারও। একসময় আর্জেন্টিনার সঙ্গে খরা, দীর্ঘ অপেক্ষার মতো শব্দগুলো বেশি উচ্চারিত হলেও ২০২১ সালে ২৮ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপার স্বাদ পায় আকাশী-সাদারা। পরের বছর কাতারে আরও বড় উৎসবে মাতে মেসিরা। পাগলাটে এক ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জেতে লিওনেল মেসিরা।
এবার ২০২৬ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে ৪৮তম কোপা আমেরিকার আসর বসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্ত হচ্ছে কনকাকাফ অঞ্চলের বেশ কিছু দল। সবমিলিয়ে ১৬ দল নিয়ে হবে এই টুর্নামেন্ট। যেখানে ‘এ’ গ্রুপের গ্রুপ অব ডেথে পড়েছে আর্জেন্টিনা। গ্রুপপর্বেই মেসিরা পাচ্ছে মহাদেশীয় প্রতিপক্ষ পেরু এবং চিলিকে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে কোপার শিরোপা ধরে রাখতে পারলে অনেকগুলো কীর্তি গড়ে ফেলবে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল পরাশক্তি দেশটি। ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে কোপা-বিশ্বকাপ-কোপা জয়ের হ্যাটট্রিক করবে আর্জেন্টিনা। সব মহাদেশ মিলিয়ে মহাদেশীয় ও বিশ্বকাপ জয়ের এই হ্যাটট্রিক আছে শুধু স্পেনের. ২০০৮ ইউরো-২০১০ বিশ্বকাপ-২০১২ ইউরো।
শিরোপা ধরে রাখার অভিযানের জন্য কোচ স্কালোনি স্কোয়াড সাজিয়েছেন পরীক্ষিতদের নিয়েই; কাতার বিশ্বকাপজয়ী দলের ২১ জন খেলোয়াড় আছেন স্কোয়াডে। পাওলো দিবালার অনুপস্থিতি নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ থাকতে পারে, কিন্তু তাদের বর্তমান দলটির সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি এখনও। কোপা মিশনে অনেকগুলো রেকর্ড ডাকছে কাপ্তান মেসিকেও। কানাডার বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামলেই রেকর্ড গড়বেন মেসি। কোপার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডে চিলির গোলরক্ষক সের্হিও লিভিংস্তোনের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে আছেন মেসি।
এ ছাড়া কোপা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোলের মালিক আর্জেন্টিনার নরবের্তো মেন্ডেস ও ব্রাজিলের জিজিনিয়ো। যৌথভাবে সমান সংখ্যক ১৭ গোল করে এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন তারা। এদিকে, ৩৪ ম্যাচে ১৩ গোল নিয়ে তালিকায় সাতে আছেন মেসি। কোপায় সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড গড়তে দরকার আরও ৫টি। এবারের আসরটি হবে মেসির সপ্তম কোপা আমেরিকা। প্রথম আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় হিসেবে ভিন্ন সাত আসরে খেলার কীর্তি গড়বেন মায়ামির এই তারকা। কোপা আমেরিকায় দুটি করে হ্যাটট্রিক আছে ১০ জনের। এবার একটি হ্যাটট্রিক করলে এই তালিকায় নাম লেখাবেন মেসি। টুর্নামেন্টিতে তার একমাত্র হ্যাটট্রিক ২০১৬ আসরে, পানামার বিপক্ষে।
আর্জেন্টিনার কোপা স্কোয়াড
গোলরক্ষক : ফ্রাঙ্কো আরমানি, জেরোনিমো রুল্লি, এমিলিয়ানো মার্টিনেজ
ডিফেন্ডার : গঞ্জালো মন্টিয়েল, নাহুয়েল মোলিনা, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, জার্মান পেজ্জেয়া, লুকাস এম কুয়ার্তা, নিকোলাস ওটামেন্ডি, লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, মার্কোস অ্যাকুনা, নিকোলাস তালিয়াফিকো
মিডফিল্ডার : গুইদো রদ্রিগেজ, লিয়ান্দ্রো প্যারেদেস, অ্যালেক্সিস ম্যাক এলিস্টার, রদ্রিগো ডি পল, অ্যাজাকুয়েল প্যালাসিওস, এনজো ফার্নান্দেজ, জিওভানি লো সেলসো
ফরোয়ার্ড : লিওনেল মেসি, আলেসান্দ্রো গার্নাচো, লাউতারো মার্টিনেজ, জুলিয়ান আলভারেজ, আনহেল ডি মারিয়া, ভ্যালেন্টিন কার্বোনি, নিকোলাস গঞ্জালেস
বাংলাদেশের সুপার এইট চ্যালেঞ্জ
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরের পর দ্বিতীয়বারের মতো সুপার এইটে বাংলাদেশ। টিম টাইগার্সের সামনে প্রথম চ্যালেঞ্জ শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। অতীত রেকর্ড, পরিসংখ্যানের বিচারে বাংলাদেশ থেকে যোজন যোজন এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচবারের সাক্ষাতে একক আধিপত্য বিস্তার করে জয় পেয়েছে ক্যাঙ্গারু বাহিনী। অবশ্য টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সর্বমোট ১০বারের দেখায় বাংলাদেশ চারটিতে জিতেছে এবং ৬টিতে হেরেছে।
এবারের আসরে কন্ডিশন পক্ষে থাকার কারণে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। গ্রুপপর্বে কন্ডিশনের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা। তানজিম সাকিব-রিশাদদের আগুনে বোলিংয়ে বলতে গেলে ব্যাটারদের অবদান ছাড়াই সুপার এইটে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠের মতো কন্ডিশনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে মাত্র ৪ রানে হেরে যায় টাইগাররা। ভাগ্য সহায় হলে প্রোটিয়াদের বিপক্ষেও জিততে পারতো শান্ত-সাকিবরা। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারিয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করে টাইগাররা।
সুপার এইটে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সামনে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ ছাড়া অ্যান্টিগায় দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম যুক্তরাষ্ট্রের সুপার এইটের প্রথম ম্যাচেই রানবন্যা দেখা গেছে। যা বাড়তি চিন্তার কারণ হতে পারে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত মনে করেন, যে কোনো সুযোগ কাজে লাগাতে হলে ব্যাটিং সমস্যার সমাধান করতে হবে।
এদিকে, সুপার এইটে যা পাবো তা বোনাস বলে উল্লেখ করেছেন টাইগার হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তিনি বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে আমাদের জন্য বিষয়টা হলো, আমরা এখানে আসতে পেরে খুশি। আর এখান থেকে যা কিছু পাব, তা–ই আমাদের জন্য বোনাস। সেজন্য আমরা এখন অনেক স্বাধীনতা নিয়ে খেলব এবং তিন দলের প্রতিটিকেই যতটা সম্ভব চ্যালেঞ্জ জানাব।’
বাংলাদেশের স্কোয়াড
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাসকিন আহমেদ (সহ-অধিনায়ক), লিটন দাস, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলি অনিক, তানভির ইসলাম, শেখ মাহেদি হাসান, রিশাদ হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব।