এখনো ফাঁকা ঢাকার রাজপথ

প্রকাশিত: ৭:২৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঈদুল আজহার পাঁচ দিনের ছুটি শেষে খুলেছে সরকারি, বেসরকারি অফিস। তবে এখনো রাজধানীর বেশিরভাগ রাস্তা ফাঁকা রয়েছে। রাস্তায় গণপরিবহনের চলাচল যেমন কম, তেমনি নেই যানজটও। পরিবহনকর্মীরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে ঢাকায় যে পরিমাণ গণপরিবহন চলে এখন তার অর্ধেকও রাস্তায় নেই। গণপরিবহনের চালক, হেলপার, সুপারভাইজার অনেকেই ঈদ করতে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গেছেন। তারা বলছেন, চাকরিজীবীদের অনেকে ঈদ করতে গ্রামে যাওয়ার পর এখনো ফিরে আসেননি। ফলে রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম হলেও, যাত্রীরা সহজেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারছেন। গণপরিবহনগুলোতে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই।

গত ২৯ জুন উদযাপন হয়েছে ঈদুল আজহা। এ ঈদ উপলক্ষে ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন নির্ধারিত হয় সরকারি ছুটি। এর সঙ্গে নির্বাহী আদেশে ২৭ জুন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এতে ঈদ উপলক্ষে সরকারি ছুটি মেলে চারদিন। সরকারি ছুটি শেষে ১ জুলাই পড়ে শনিবার। ফলে আরও একদিন ছুটি বেড়ে যায়। টানা পাঁচ দিনের ছুটি শেষে আজ রোববার থেকে আবার অফিস শুরু হয়েছে। সাধারণত অফিস শুরুর আগে এবং অফিস ছুটির পর পর রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় যানজট লেগে যায়। রাজধানীর যানজটপ্রবন অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম রামপুরা। রামপুরা কাঁচা বাজার থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত যানজট নিত্যদিন লেগেই থাকে। এ রুটে চলাচলকারীদের অফিস সময়ে গণপরিবহনে উঠতে যেমন বিড়ম্বনা পোহাতে হয়, তেমনি দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়। এমনকি শুক্র-শনিবার সরকারি ছুটির দিনও যানজট লেগে থাকতে দেখা যায়। একই অবস্থা লালবাগের সেকশন বেড়িবাঁধ থেকে আজিমপুর মোড় পর্যন্ত। নিত্যদিন একই দৃশ্য দেখা যেতো এই সড়কটিতে। ঈদের পরদিন থেকে এখনো যানজটমুক্ত রয়েছে এই রাস্তাটি। ওই সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী আব্দুল মতিন, মনিরুল ইসলাম ও আবুল কালাম বলেন, তিনটি এলাকার কয়েক কোটি মানুষের চলাচলের এ রাস্তাটি খুবই সংকীর্ণ। আজিমপুর কবরস্থান ও তিনটি স্কুল ঘিরে দিনরাত এ সড়কটিতে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। পায়ে হেঁটে ৫ মিনিটের পথটি রিক্সা লেগুনা বা ইজিবাইকসহ অন্যান্য যানবাহনে গন্তব্যে যেতে সময় লাগে দুই তিন ঘণ্টার উপরে। এখন চলাচলের সুবিধা থাকলেও হয়তোবা আগামী সপ্তাহের শুরুতেই আবারো তীব্র এই যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হবে কামরাঙ্গীরচ,  হাজারীবাগ লালবাগ ও কেরানীগঞ্জের বাসিন্দাদের। বর্তমানে এ যানজটপ্রবন রাস্তাটি এখন প্রায় ফাঁকা। সকালে এ অঞ্চলের রাস্তায় যেমন পরিবহনের চাপ ছিল না, তেমনি বিকেলেও পরিবহনের তেমন চাপ দেখা যায়নি। ফলে যানজট মুক্তভাবেই এ অঞ্চল দিয়ে যাতায়াত করা গেছে।

এদিকে রামপুরা থেকে মতিঝিলের অফিসে যাওয়া মো. আসিফ বলেন, অফিসে যাওয়ার সময় প্রতিদিন রামপুরা বাজার থেকে আবুল হোটেল মোড় পর্যন্ত যানজটে আটকে থাকতে হয়। কাকরাইল, পল্টন অঞ্চলেও যানজটে পড়তে হয়। আজ কোথাও কোনো যানজটে পড়তে হয়নি। কোনো সিগনালেও দাঁড়াতে হয়নি। মোটরসাইকেল ব্রেক না করেই রামপুরা থেকে মতিঝিল চলে এসেছি। তিনি বলেন, এবার ঢাকাতে ঈদ করেছি। তাই ঈদের ছুটির সঙ্গে বাড়তি কোনো ছুটি নেইনি। তবে আমাদের অফিসের অনেকে বাড়তি ছুটি নিয়েছেন। তারা এখনো ঢাকায় ফেরেননি। আমার ধারণা এ সপ্তাহ ঢিলেঢালাভাবে অফিস চলবে। আগামী সপ্তাহ থেকে আবার সবকিছু আগের মতোই হয়ে যাবে। চিরচেনা রূপে ফিরবে ব্যস্ততম রাজধানী ঢাকার অলিগলি থেকে প্রতিটি সড়কপথ।

ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের চালক মো. জয়নাল হোসেন বলেন, যানজট আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। রামপুরা, বাড্ডা, কাকরাইল, পল্টন, গুলিস্তানে প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে। যানজটের মধ্যে গাড়ি চালাতে অনেক বিরক্ত লাগে। কিন্তু পেটের দায়ে সবকিছু মেনে নিয়েছি। তিনি বলেন, ঈদের দিন থেকেই রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছি। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকেই রাস্তায় যানজট নেই। এমন রাস্তায় গাড়ি চালাতে বিরক্ত লাগে না। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয় না। ঠান্ডা মাথায় গাড়ি চালানো যায়। তিনি আরও বলেন, আমাদের ধারণা স্বাভাবিক সময়ে ঢাকায় যে গাড়ি চলাচল করে এখন তার অর্ধেকও নেই। এ সপ্তাহে রাস্তায় গাড়ির চাপ কমই থাকবে। আগামী সপ্তাহ থেকে ঢাকা আবার চিরাচরিত যানজটে ফিরে যাবে বলে আমাদের ধারণা।

নিউমার্কেট, ধানমন্ডি,  মিরপুর রোড, ফার্মগেট, কাকরাইল, পল্টন, গুলিস্তান ও মতিঝিল অঞ্চলের প্রতিটি রাস্তায় ফাঁকা দেখা গেছে। পল্টন মোড়ে কথা হয় আজমেরী গ্লোরি পরিবহনের চালক হামজার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে যারা ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি গেছেন তাদের বেশিরভাগ ঢাকায় ফেরেনি। এ কারণে রাস্তায় মানুষের চলাচল কম এবং বাসের সংখ্যাও কম।

তিনি বলেন, এখন বাস কম চললেও যাত্রীদের বাসে উঠতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। প্রতিটি বাসে সিট খালি থাকছে। অন্য সময় যাত্রীদের বাস ধরতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এখন সে অবস্থা নেই। যাত্রী কম হওয়ায় আমাদের ভাড়া কম হচ্ছে। তারপরও ভালো লাগছে, কারণ দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে না। গাড়ি চালানোর সময় যানজটে আটকে থাকলে মেজাজ বিগড়ে যায়।

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত অঞ্চল শাহবাগ মোড়ে গিয়েও দেখা যায়, রাস্তায় পরিবহনের খুব একটা চাপ নেই। মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, গণপরিবহন সীমিত পরিসরে চলছে। শাহবাগ মোড়ে কথা হয় সিএনজি চালক খায়রুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি শেষ অফিস খুলেছে। কিন্তু রাস্তায় মানুষের চলাচল কম। ধানমন্ডি, মতিঝিল, মহাখালীতে যাত্রী নিয়ে গেছি। কোথাও যানজটে পড়তে হয়নি। রাস্তায় যেমন যানজট নেই, তেমনি যাত্রী সংখ্যা কম। আমাদের আয়ও হচ্ছে কম।

 

এদিকে গাবতলী টু বাবুবাজার বেড়িবাঁধে দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত অবৈধ ইজিবাইক ও মিশুকের ছড়াছড়ি। লালবাগের নবাবগঞ্জ সেকশন বেড়িবাঁধে সারি সারি লেগুনার চালকরা যাত্রীর অপেক্ষায় অলস সময় পার করছেন পার্কিং করে। কিন্তু একশ্রেণীর অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের যোকসাযোসে পুরো সড়কটিতে দাবড়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত অবৈধ ইজিবাইক ও মিশুক। একইভাবে সেকশন বেড়িবাঁধের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনেই গড়ে তোলা হয়েছে মোহাম্মদপুর টু সেকশন রোডে চলাচলকারী অবৈধ ইজিবাইকের স্ট্যান্ড। অভিযোগ রয়েছে প্রতিটি ইজিবাইক থেকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত মোটা অংকের উৎকোচ আদায় করেন। জানা গেছে, রেকার কাটার ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আনোয়ার, মাহবুব ও টিআই বুলবুলের নেতৃত্বে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে চলাচলকারী সকল অবৈধ যানবাহন থেকে প্রতি মাসে অন্তত ৫ কোটি টাকা আদায় করা হয়। এই টাকার ভাগ ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তির টেবিলেও চলে যায় বলে জানা গেছে। মোহাম্মদপুর টু সেকশন রুটে চলাচলকারী ইজিবাইক চালক রাসেল, নাসির, শাকিল ও সুমন বলেছেন, গাড়ির একটি চাকাও চলে না টাকা ছাড়া। পুলিশ সদস্য ফাঁড়ি ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে লাইনম্যানের মাধ্যমেই এসব অবৈধ ইজিবাইক ও মিশুক চলাচলের অনুমতি মিলেছে। ব্রাদার্স বা সেন্ট্রাল পরিবহনের চালক ও হেলপাররা বলেন, আগে এই সড়কে গাড়ি চালিয়ে স্বস্তি বোধ করতাম। ট্রাফিক পুলিশের সদস্য অবৈধ কোন যানবাহন বেরিবাদে উঠতে দিতেন না। ফলে যাত্রীর চাপ আমাদের গাড়িতেই বেশি হতো। এখন ব্যাটারিচালিত অবৈধ ইজিবাইক ও মিশুকের কারণে আমাদের গাড়ির যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। ইজিবাইক ও মিশুকগুলো সিন্ডিকেট করে পুলিশের সাথে গভীর সখ্যতা গড়ে তুলেছে। বেরিবাদের এই মহাসড়কে দূরপাল্লার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, মিনিবাস-মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গন্তব্যের দিকে ছুটে চলে। এতে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। বাড়ছে হতাহতের সংখ্যাও। তারা দাবি জানিয়ে বলছেন, ট্রাফিক পুলিশের উদ্যোতন কর্মকর্তারা এবং বিআরটিএ এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যতে বেড়িবাঁধের এই মহাসড়কটি সরেজমিন পরিদর্শন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবৈধ ইজিবাইক ও মিশুক চলাচল বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় পথচারী এবং বাস ট্রাক কাভার্ডভ্যানের চালক-হেলপাররা।