কক্সবাজার প্রতিনিধি:
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকাজে আরও দেড় শতাধিক কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের মহেশখালীর এ প্রকল্পের বিভিন্ন স্থাপনা ও রাস্তা নির্মাণ এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়-সংক্রান্ত ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির এমডি, নির্বাহী পরিচালক, নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্তত ছয় শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি।
জানা গেছে, রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের বিভিন্ন নির্মাণ ও উন্নয়নকাজে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে দেড় শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে সম্প্রতি দুদকে লিখিত দেন প্রতিষ্ঠানটির কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী। সে অভিযোগের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ৯ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়কে চিঠি দেওয়া হয়।
কমিশনের উপপরিচালক (অনু. ও তদন্ত) স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) এমডি আবদুল কালাম আজাদ, নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিজাইন) কামরুল ইসলাম, সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দিন ও ডিজিএম (ডেপুটেশন) মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠি পেয়ে ১৫ জুলাই কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক সুবেল আহমেদকে প্রধান করে দুই সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে সুবেল সমকালকে বলেন, ‘কমিশনের চিঠি পাওয়ার পরপরই মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্নীতি ও অনিয়ম বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছি। তবে এখনই তথ্য-প্রমাণ নিয়ে কিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’
দুদক সূত্র জানায়, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের যেসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য– এ পর্যন্ত ১৪০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ১৬টি কাজের ভেরিয়েশনের মধ্যে অনুমোদন ছাড়া ১১টি কাজের ভেরিয়েশন ছাড় দেওয়া হয়েছে। অথচ এসব কাজের ভেরিয়েশন দেওয়ার আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। এ ছাড়া প্রকল্পের টাউনশিপ এলাকায় বালু ভরাট কাজে বোর্ডের অনুমতি ছাড়া ভেরিয়েশন প্রদান এবং ৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ, চুক্তি অনুযায়ী বিটুমিন বা পিচের সড়ক না করে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের নামে বোর্ডের অনুমতি ছাড়া ২১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার ভেরিয়েশন দিয়ে বিপুল টাকা নয়ছয়, নিলাম ছাড়া স্ক্র্যাপ বিক্রি করে ৫৩ কোটি টাকা লোপাট, ইনস্টিটিউশনাল ডেভেলপমেন্টের কনসালট্যান্ট নিয়োগের ৮ দশমিক ১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ, যন্ত্রপাতি ক্রয়ে চুক্তিতে উল্লিখিত দেশের পরিবর্তে ভিন্ন দেশ থেকে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের পণ্য ক্রয় করে কোটি কোটি টাকা হাপিশ এবং প্রকল্পের ঠিকাদারের লেফটওভার ম্যাটেরিয়াল বিক্রির মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে সিপিজিসিবিএলের এমডি আবদুল কালাম আজাদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তিনি কোনো জবাবও দেননি।
এর আগে এ কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ ৩৬ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় দুদক। সেই ঘটনায় তাদের জেলেও যেতে হয়েছে।