এবার প্যাডেল রিকশা নিষিদ্ধের দাবি প্রতিবন্ধী অটোরিকশাচালকদের

প্রকাশিত: ৪:২৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

‘সীসা ব্যাটারি ব্যবহার ও প্যাডেল-চালিত রিকশা’ নিষিদ্ধ করে ‘মিশুক, রিকশা বা ইজি বাইক’ সুনির্দিষ্ট ডিজাইনে বিআরটিএ থেকে অনুমোদন দেওয়া এবং কর্মসংস্থান বা পুনর্বাসনের আগ পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ না করার দাবি জানিয়েছেন প্রতিবন্ধী অটোরিকশাচালকরা। সেইসঙ্গে প্রতিবন্ধী অটোরিকশাচালকদের ‘প্রশাসনিক হয়রানি’ বন্ধ করাসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘২৬তম প্রতিবন্ধী দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে ‘জাগরণ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থা’ আয়োজিত সমাবেশে তারা এই দাবি জানান।সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ১৬ শতাংশ মানুষ কোনও না কোনও প্রতিবন্ধিতার সম্মুখীন। ফলে দেশের প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ প্রতিবন্ধী। আমাদের অনেকেই গুরুতর অবস্থার কারণে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে না। অনেকে শিক্ষা ও অপর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের কারণে বেকার দিন কাটাচ্ছে। পারিবারিক কারণে অনেকেই ভিক্ষা বৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। অথচ আমরা প্রতিবন্ধী মানুষেরা সম্মানজনক জীবিকা পালন করতে চাইলেও সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পরিবেশগত, দৃষ্টিভঙ্গিগত ও নীতিগত বাধার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছি।

তারা অভিযোগ করেন, একদিকে ভিক্ষা করতে গেলে বাধা, অপরদিকে হকারি গেলে মাস্তান ও পুলিশি বাধা। সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে পাহাড় সমান বাধা পেরিয়ে আমাদের অনেকের পক্ষেই অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে স্ব-কর্মসংস্থান বা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হতে প্রাতিষ্ঠানিক বাধারও কোনও অভাব নেই। সেক্ষেত্রে স্বাধীন পেশা হিসেবে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার, মিশুক বা ইজিবাইক আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আশার আলো হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ঢাকাসহ সারা দেশে হাজার হাজার প্রতিবন্ধী মানুষ আজ অটোরিকশার ওপর জীবন নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, সরাসরি অটোরিকশার বন্ধ না করে আমাদের ১০ দফা সুপারিশ আমলে নিয়ে পরিবেশবান্ধব ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে আপনার (সরকার) এবং আপনার প্রশাসনের যৌক্তিক ও সদয় দৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।

প্যাডেল রিকশা নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে জাগরণ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অটোরিকশা বন্ধ করে দিলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ অন্যান্য অটো চালকদের সমস্যা হবে। অনেক বৃদ্ধ লোক আছে যারা রিকশা চালায় তাদের সমস্যা হবে। আর প্যাডেল রিকশা থাকাতে রিকশা চালকদের মধ্যে দুটি ভাগ হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা সবার স্বার্থের কথা চিন্তা করে প্যাডেল রিকশা নিষিদ্ধ করে ব্যাটারি চালিত রিকশা থাকার কথা বলেছি।’

প্রতিবন্ধী অটোরিকশার চালকদের ১৩ দফা দাবিগুলো হলো-

সীসা ব্যাটারি ব্যবহার ও প্যাডেল রিকশা নিষিদ্ধ করে মিশুক রিকশা বা ইজি বাইক সুনির্দিষ্ট ডিজাইনে বিআরটিএ থেকে অনুমোদন দেওয়া এবং কর্মসংস্থান বা পুনর্বাসনের আগ পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ না করা ও প্রতিবন্ধী অটোরিকশা চালকদের প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধ করা; প্রতিটি রিকশার নম্বর প্লেট দেওয়া, ব্যাটারি রিকশাকে যান্ত্রিক বাহনের অন্তর্ভুক্ত করা ও সড়কে রাজনৈতিক ও পেশীশক্তির চাঁদাবাজি বন্ধ করা; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ওয়ার্ডের জনঘনত্বের ভিত্তিতে রিকশার নিবন্ধন দেওয়া, প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী চালককে কোটা দেওয়া এবং রিকশা শ্রমিকদের জন্য এলাকাভিত্তিক সুনির্দিষ্ট পোশাকের বিধান রাখা; কেবল রিকশাচালকদেরই রিকশার নিবন্ধন দেওয়া; পেট্রোল পাম্পের মতো সরকারি অনুমোদনে এলাকাভিত্তিক অটোরিকশা ব্যাটারি চার্জিং স্টেশন তৈরি করা।

এছাড়া নিবন্ধিত সংগঠনের কাছ থেকে গ্যারান্টর নিয়ে অসচ্ছল রিকশা চালকদের সহজ কিস্তিতে অটোরিকশা কেনার সুযোগ করে দেওয়া; লিথিয়াম ব্যাটারি আমদানিতে আগামী ১০ বছরের জন্য শুল্ক ছাড় দেওয়া; অটোরিকশা, সাইকেলসহ অন্যান্য ধীরগতির যানের চলাচলের জন্য ঢাকাসহ সারাদেশে পর্যায়ক্রমে পৃথক লেন চালু করা; ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় স্পিড লিমিটর বা গতিনিয়ন্ত্রক যন্ত্র বাধ্যতামূলক করা; অতিরিক্ত যানবাহনের ব্যবস্থাপনা করতে শিফটিং বা সময়ানুবর্তিক সময় ধরে রিকশা চলাচলের ব্যবস্থা করা।

এসময় সমাবেশে জাগরণ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সোহেল রানাসহ অর্ধশতাধিক প্রতিবন্ধী অটোরিকশা চালকরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ থেকে তারা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর তাদের দাবিসহ স্মারকলিপি পেশ করবেন বলে জানান।