ওষুধ নয়, শরীরের ব্যথা কমায় প্রাকৃতিক খাবার

প্রকাশিত: ৩:২৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

ব্যস্ত জীবনযাত্রা ও অনিয়মিত রুটিনের ফলে শরীরের ব্যথা আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। আর এই ব্যথা কমাতে আমরা ‘পেইন কিলার’ বা ব্যথানাশক বেঁছে নি কিন্তু এসব ‘পেইন কিলার’ শরীরের ব্যথা দ্রুত কমালেও এসবের রয়েছে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

তবে প্রকৃতিতে এমন কিছু খাবার রয়েছে যা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আপনার শরীরের ব্যথা দ্রুত কমাতে পারে সাহায্য করে।

হলুদ: হলুদের থাকা কারকিউমা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে হাঁটুর চিকিৎসায় এটি অত্যন্ত কার্যকর। দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে খেলে উপকারিতা আরও বাড়ে। এক প্রাথমিক গবেষনায় দেখা গেছে যে, হলুদসহ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাদ্যাভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।

পেঁয়াজ-রসুন ও আদা: পেঁয়াজের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এবং রসুনের মধ্যে রয়েছে ব্যথানাশক উপাদান সালফার। এটি পেশী ও গাঁটের ব্যথা ও ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে।

এজন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও আক্রান্ত স্থানে রসুন-তেল গরম করে নিয়মিত মালিশ করলে অনেকটা উপশম পাওয়া যায়। এবং আদার মধ্যে থাকা প্রদাহরোধী উপাদান জিনজেরলস ব্যথা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা কমাতে কয়েকটি আদার টুকরো চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা নিয়মিত আদা চা পান করতে পারেন।

মেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ: আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে কিছু সামুদ্রিক মাছ আছে যেমন মেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ স্যামন।

্ম্যাকেরেলের মতো মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা ব্যথা কমাতে এবং ব্যথা উপশমে কার্যকর। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

এছাড়াও, দেশি মাছের মধ্যে রয়েছে পাঙ্গাশ, বোয়াল ও রূপচাঁদা। এসব মাছের মধ্যে থাকা ফ্যাটি এসিড ইপিএ এবং ডিএইচএ এর পেটের অন্ত্রের প্রদাহ জনিত সকল রোগ দূর করার ক্ষমতা রয়েছে।

কফি: এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন পান করলে মাথাব্যথা, মাইগ্রেনের ব্যথা অনেক কমে, তবে সেটা দীর্ঘসময়ের জন্যে নয়।

তিল বীজ: তিল বীজও ব্যথা সারাতে বেশ ভালো কাজ করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা মাথা ব্যথা ও মাংস পেশীর ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।

পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতায় মেনথল নামে একটি উপাদান আছে , এর তেল পায়ের কজ্বি ও গোড়ালিতে মালিশ করলে ব্যথা উপশম হয়। এমনকি মাথা ব্যথায় পুদিনা পাতা কপালে ঘষলেও অনেকটা ব্যথা উপশম হয়। একই সাথে হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা কমাতে দারুণ কাজ করে পুদিনা পাতা।

অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা জেল পোড়ার ব্যথা উপশমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবং এর জুসও আলসারের ব্যথা কমায়।

শাক-সবজি এবং ফলমূল: খাবারের তালিকায় সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল এবং লাল চাল, ওটস এবং কুইনোয়ার মতো খাবার বেছে নিন। কেননা,এই জটিল কার্বোহাইড্রেটগুলো শক্তির মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে শরীরের লড়াইয়ে সহায়তা করে। বিশেষ করে সার্জারির ব্যথা কমাতে পেঁপের জুস বেশ উপকারী।

চর্বিহীন মাংস: মাছ, মুরগি এবং ডালের মতো খাবার যোগ করে চর্বিহীন প্রোটিনকে অগ্রাধিকার দিন। এই প্রোটিনগুলো পেশীর স্বাস্থ্য এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

টক দই: প্রতিদিন দুপুরের খাবারের এক বাটি টক দই খাওয়ার অভ্যাস করুন। কেননা টক দইয়ে থাকা মাইক্রো-ফ্লোরা নামে একটি উপাদান শরীরের প্রদাহ এবং বদহজমের কারণে সৃষ্ট গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, দই, দুধ এবং সুরক্ষিত উদ্ভিদ-ভিত্তিক বিকল্প খাবার ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সরবরাহ করে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।

প্রক্রিয়াজাত সব ধরনের খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে। ওজন বাড়লে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর চাপ বাড়ে, ফলে ব্যথাও বাড়ে। সঠিক খাদ্যভাস গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের ব্যথা কমানো সম্ভব।

তবে, কোনো নতুন খাদ্যাভ্যাস শুরু করার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে বুঝে শুনে ভালো ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং সুস্থ থাকুন।