‘কবুল’ বলা ছাড়াও যেসব শব্দে বিয়ে হয়ে যায়

প্রকাশিত: ১২:২৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

বিয়ের মাধ্যমে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের মধ্যে বৈধ ও পবিত্র সম্পর্ক স্থাপন হয়। এই সম্পর্কের মাধ্যমে একজন মানুষ ধর্মীয় বিধান পালনের নিকটবর্তী হয় এবং তার জন্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। এক হাদিসে রাসূল সা.বলেছেন—

‘যে ব্যক্তি বিয়ে করল সে তার অর্ধেক ইমান (দ্বীন) পূর্ণ করে ফেলল। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (বায়হাকি, শুআবুল ইমান)

অপর হাদিসে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘হে যুবক সকল! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম সে যেন বিয়ে করে। কারণ, বিয়ে করলে দৃষ্টিকে নিচু রাখা যায় এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করা যায়। আর যে ব্যক্তি বিয়ের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না সে যেন রোজা রাখতে থাকে। কারণ রোজা তার খাহেশকে কমিয়ে দেবে (বুখারি, মুসলিম)।ফিকহে হানাফির দৃষ্টিতে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার জন্য ‘ইজাব’ (প্রস্তাব) ও ‘কবুল’ (গ্রহণ) আবশ্যক। তবে ‘কবুল’ শব্দটি ছাড়াও এমন কিছু শব্দ ও বাক্য আছে যেগুলোর মাধ্যমে এই গ্রহণযোগ্যতা প্রকাশ পায় এবং বিয়ে বিশুদ্ধ হয়ে যায়।

 

বিয়ে সম্পাদনের মৌলিক শর্তসমূহ

১. ইজাব। পক্ষবিশেষের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রস্তাব।
২. কবুল। অপর পক্ষের সম্মতিসূচক জবাব।
৩. স্পষ্ট বাক্য। এমন শব্দ ব্যবহার করতে হবে যার মাধ্যমে নিকাহ বোঝা যায়।
৪. সাক্ষী। দুজন পুরুষ অথবা এক পুরুষ ও দুই নারী সাক্ষীর উপস্থিতি।

‘কবুল’ না বলেও যেসব শব্দে বিয়ে সম্পন্ন হয়

১.ক্ববিলতু। আমি (গ্রহণ করলাম) ইজাবের জবাবে যদি বর বা কনে বলে ক্ববিলতু, তাহলে এটি পূর্ণ কবুল হিসেবে গণ্য হবে।

২. রদ্বিতু। আমি সন্তুষ্ট / রাজি হলাম। এই শব্দটি সরাসরি কবুল না হলেও, ইজাবের পর ব্যবহার হলে তা কবুল ধরা হবে।

৩.তাজায়াজ্জাত্তুহা। আমি তাকে বিবাহ করলাম। বর নিজেই যদি বলে, অর্থাৎ, আমি অমুককে বিবাহ করলাম — তাহলে এটি বিবাহের স্পষ্ট স্বীকৃতি।

৪. আনকাহতু নাফসি ইয়্যাহু। আমি নিজেকে তার সাথে বিবাহ করলাম। এই শব্দচয়নেও কবুলের অর্থ পাওয়া যায়।

৫. আজাযতুহু। আমি একে অনুমোদন করলাম। প্রতিনিধির মাধ্যমে করা ইজাব যদি মূল ব্যক্তি অনুমোদন করে, তাহলেও নিকাহ সহীহ।

ফিকহি কিতাবসমূহ থেকে দলিল

১. الفتاوى الهندية: ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া—

ويجوز النكاح بألفاظ هي صريحة في النكاح، كأنكحت، وتزوجت، وقبلت، ورضيت، ونحوها
(الفتاوى الهندية، ج، ص)

বাংলা অনুবাদ: নিকাহ সেই সব স্পষ্ট শব্দ দ্বারা জায়েয হয়, যেমন أنكحتُ, تزوجتُ, قبلتُ, رضيتُ ইত্যাদি।

২. الهداية: হেদায়া (২য়)—

ويعتبر الإيجاب والقبول بلفظ يدل عليه صريحاً
(الهداية، ج، ص)

অর্থ: ইজাব ও কবুল এমন শব্দে হতে হবে, যা দ্বারা স্পষ্টভাবে নিকাহ বোঝায়।

৩. الدر المختار مع رد المحتار: ফতোয়ায়ে শামী —

ويصح النكاح بكل لفظ صريح يدل على التمليك في الحال، كزوجتك، أنكحتك، وتزوجت ونحوها
(الدر المختار، ج، ص؛ رد المحتار)

কোরআন থেকে দৃষ্টান্ত—

فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ

অর্থ, ভদ্রভাবে স্ত্রীর সঙ্গে জীবন যাপন করো, কিংবা সম্মানের সঙ্গে তাকে বিদায় দাও। (সূরা বাকারা, ২:২২৯)

এখানে “إِمْسَاكٌ” দ্বারা দাম্পত্য জীবনে সম্মতি ও স্বীকৃতির বিষয়টি প্রকাশ পায়, যা কবুলের মর্ম বোঝায়।

হাদিস থেকে দলিল—

النكاح عن تراض

অর্থ: নিকাহ পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ)

এই হাদিস থেকে বুঝা যায়, সরাসরি ‘কবুল’ শব্দ ছাড়াও সম্মতির প্রকাশ থাকলে এবং প্রেক্ষাপট পরিষ্কার হলে বিয়ে হয়ে যাবে।

ফিকহে হানাফি মতে, ‘কবুল’ শব্দটি ছাড়া অন্য শব্দ বা বাক্য দিয়ে যদি সম্মতির প্রকাশ ঘটে এবং তা স্পষ্টভাবে নিকাহের ইঙ্গিত দেয় তাহলে সেই নিকাহ বৈধ ও সহীহ। তবে এসব ক্ষেত্রে সাক্ষী, প্রেক্ষাপট, এবং স্পষ্টতা অপরিহার্য।

তবে রাখতে হবে, যদিও শরয়ী দৃষ্টিতে বিভিন্ন বিকল্প শব্দে নিকাহ (বিবাহ) সম্পন্ন হয়, তবুও সমাজে ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে ‘আমি কবুল করলাম’ শব্দ ব্যবহার করাই উত্তম।