ডেস্ক রিপোর্ট:
বিশ্বের অনেক দেশই নারী সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান পেয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, তুরস্ক, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল দেশের নামও আছে। বাংলাদেশ দেখেছে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার শাসন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তার আড়াইশ বছরের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে ৪৬ জন প্রেসিডেন্ট পেলেও তাদের একজনও নারী ছিলেন না। বর্তমানে কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটাই মার্কিন প্রশাসনে কোনো নারীর পাওয়া সর্বোচ্চ পদ। কমলা এবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টির টিকিট পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর সামনে আছে বড় এক বাধা। সেটি মার্কিন পুরুষতন্ত্র। তিনি কি পারবেন এ বাধা টপকাতে?
প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পুরুষতন্ত্রের কারণেই কার্যত হেরে যাচ্ছেন কমলা। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, মার্কিন নির্বাচনে আবারও ২০১৬ সালের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। সে সময় ডেমোক্রেটিক প্রার্থী ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। জনপ্রিয় ভোটে তিনি জয়ীও হয়েছিলেন। কিন্তু ইলেক্টরদের সমর্থন না পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। এবার যারা ‘ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে কমলাকে দেখতে চাইছেন, তাদের সামনে সেই উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ বলে কথা।
গত মঙ্গলবার দ্য কনভারসেশন একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেডের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ক্যারল জনসনের লেখা ওই নিবন্ধের শিরোনাম ছিল, ‘মার্কিন নির্বাচনে লিঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে; এটা কেবল কমলা হ্যারিস সম্পর্কেই নয়।’ নিবন্ধের শুরুতেই তিনি লিখেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে একজন নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ক্ষেত্রে লিঙ্গের বিষয়টি অনিবার্যভাবে আসবে। কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে চলমান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গর্ভপাতের মতো বিষয়লিঙ্গ-ভেদ ভোটের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। তুলনামূলক বেশিসংখ্যক নারী ভোটার কমলাকে সমর্থন করছেন; বেশিসংখ্যক পুরুষ ভোটার ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কার্যত মার্কিন নির্বাচনে সবসময় নারী-পুরুষের এ ধরনের বিভাজন ছাড়াও পুরুষত্ব প্রদর্শনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছে। মার্কিনিরা মনে করেন, শক্তিশালী পুরুষ নেতৃত্ব দেশের মানুষকে শারীরিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। ২০২০ সালের পরাজয়ের পর ট্রাম্প আবারও নিজেকে শক্তিশালী করেছেন; পুরুষোচিত সুরক্ষাকারী হিসেবে পুনরুত্থিত হয়েছেন। এক সমাবেশে ট্রাম্প মার্কিনিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আপনাদের যোদ্ধা; আপনাদের ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি।’
গত বুধবার প্রকাশিত ফোরসের প্রতিবেদনের শিরোনাম– ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লিঙ্গ এক অবিচ্ছেদ্য শক্তি।’ এতে বলা হয়, কমলা হ্যারিস যখনই নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসেছেন, তখন থেকে গণমাধ্যম বলে আসছে– ফলাফলে নির্ণায়ক ভূমিকায় থাকবে ‘লিঙ্গ বিভাজন’। লিঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাঠে একেবারেই কেন্দ্রীয় একটি শক্তি। ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে লিঙ্গ বিভেদ বিশেষভাবে গুরুত্ববহ হয়ে উঠতে পারে, যেখানে ব্যালটে নারী রয়েছেন। তথাপি গবেষণায় দেখানো হয়, লিঙ্গ ভেদ নয়, প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায়ই ভোটাররা ভোট দেন।
সম্প্রতি সিবিসি নিউজ ও ইউগোভের চালানো জরিপে দেখা গেছে, ৮৪ শতাংশ ট্রাম্প সমর্থক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে লিঙ্গ সমতা অনেক দূর এগিয়েছে। অন্যদিকে কমলার ৮৬ শতাংশ সমর্থক মনে করেন, সমতা ততটা আসেনি। কার্যত ট্রাম্পের লিঙ্গবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি নারী-পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে দূরে নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক জ্যাকসন কাৎজ বলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য লড়াই মার্কিন পুরুষত্ব প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে এখন অনেকটা সাংস্কৃতিক সংঘাতে রূপ নিয়েছে।
সম্প্রতি এ নিয়ে খবর প্রচার করেছে বিবিসি। জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে তাতে বলা হয়, মার্কিন নির্বাচনে পুরুষ ভোটারদের মধ্যে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প আর নারীরা বলছেন, তারা কমলাকে ভোট দেবেন। রাজনৈতিক এ লিঙ্গ বিভেদকাল উত্তাল সামাজিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে। এটা ভোটের ফলাফলে নির্ণায়ক ভূমিকায় থাকতে পারে। কমলা মার্কিন নির্বাচনে প্রথম অশ্বেতাঙ্গ নারী প্রার্থী। এর আগে হিলারি ক্লিনটন শ্বেতাঙ্গ ছিলেন। কমলা উঠে এসেছেন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। তাঁর মা ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্যামলা গোপালন। বাবা কৃষ্ণাঙ্গ– স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক জামাইকান বংশোদ্ভূত মার্কিনি ডোনাল্ড জে হ্যারিস। এ কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় মধ্যবিত্ত জীবনের নানা গল্প শোনান কমলা, যা মার্কিন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে আকৃষ্ট করে।
সমর্থকরা কমলাকে ‘ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট’ বলে ডাকেন। কিন্তু এ শব্দের মধ্যেও লুকিয়ে আছে লিঙ্গ বৈষম্য। প্রেসিডেন্ট তো প্রেসিডেন্টই; সেখানে ‘ম্যাডাম’ কেন? ট্রাম্প বলছেন, তিনি লিঙ্গ বিভেদের চোখে কমলাকে দেখেন না। তিনি মনে করেন, কলা ‘দুর্বল, অসৎ ও ভয়ংকরভাবে উদার। এ কারণে ৫ নভেম্বর মার্কিনিরা তাঁকে বয়কট করবেন।’ তবে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টার কথায় বের হয়ে এলো গুপ্ত কথা। তিনি বলছেন, ট্রাম্প জিতবেন। কারণ পুরুষ হওয়ায় তিনি অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন।