কম্বাইন হারভেস্টারের সুফল পাচ্ছেন হাওরের কৃষকরা

প্রকাশিত: ৬:০৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি,নেত্রকোণাঃ 

নেত্রকোণার হাওরে চলছে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের উৎসব। হাওরজুড়ে আগাম ৮৮, ৮৯, ৯২ ও হাইব্রিড জাতের ধান পাকায় কৃষকরা আনন্দের সঙ্গে ধান কেটে মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে খুব দ্রুত সময়ে ধান কাটাসহ ধানের ফলন ও দাম ভাল হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।

এ বিষয়ে কথা হয় মদন উপজেলার উচিতপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মনজুর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি ৬০ কাঠা মাটিতে ব্রিধান-৮৮ চাষ করেছিলাম। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আজকে ধান কাটলাম। ধান কেটে ঘরে তুলতে পারলেই আমরা খুশি। কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে খুব কম সময়ে আমরা ধান কাটতে পারছি। খরচও শ্রমিকের তুলনায় অনেক কম। দিনের অবস্থাও সুন্দর আছে। সামনে ১০-১৫ দিন সময় পেলে সবাই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে।

উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষানিরাও বসে নেই, তারাও মনের আনন্দে ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিলকিস বেগমকে দেখা যায়, ভরদুপুরে মাথায় ছাতা নিয়ে ধান শুকাতে ব্যস্ত তিনি। কাজের চাপ কেমন জানতে চাইলে বলেন, কাজের চাপ অনেক। ধান সেদ্ধ করে সেগুলো শুকাতে হচ্ছে। রাতভর ধান সেদ্ধ করা লাগে। কয়েকদিন আমাদের দিনরাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, হাওরে ৫৬০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৫৩টি রিপার মেশিন এবং ১২০০ জন কৃষি শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে। উপজেলার কুলিয়াটি গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল হাসান বলেন, আমি ১০০ কাঠা জমিতে ধান আবাদ করেছি। আমাদের এলাকায় আগে লোক দিয়ে ধান কাটতে অনেক ঝামেলায় পড়তে হতো। ধান কাটার সিজনে একজন শ্রমিককে ১০০০ টাকা দিতে হতো। এখন হারভেস্টার মেশিনে কাঠা প্রতি ৫০০ টাকা করে দেই। মেশিন আসাতে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে। মেশিনের কারণে একদিকে কম সময়ে ধান কাটা ও মাড়াই করতে পারছি অন্যদিকে খরচও তুলনামূলক কম।

এ ছাড়া হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় জমি থেকে ধান পরিবহনে কৃষকের খরচ কম হচ্ছে। অপরদিকে হাওর থেকে সরাসরি ট্রাকে করে সেই ধান যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন মোকামে।কথা হয় গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের পাইকার শাহ-আলম ব্যাপারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, কৃষকরা মেশিন দিয়ে হাওরে ধান কাটা শুরু করেছে। আমরা তাদের কাছ থেকে কাঁচা ধান কিনছি। ধানের মান ভেদে দাম কম বেশি হয়। মোটা ধান ৮২০ থেকে ৮৪০, চিকন ধান ৯৬০ থেকে ৯৭০ টাকা কিনছি। কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে আমরা দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় খুব কম সময়ে ধান কিনে পাঠিয়ে দিতে পারি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান জানিয়েছেন, এ বছর জেলায় মোট ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৬টি উপজেলার হাওরাঞ্চলে ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ।

 

তিনি আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হবে। এখন পর্যন্ত ১৮ শতাংশ ধান কর্তন হয়েছে। পাশাপাশি হাওর এলাকার কৃষকরা যেহেতু তাদের শস্য কম্বাইন হারভেস্টারে কাটেন, সেক্ষেত্রে তাদের এক একর জমির ধান কাটা-মাড়াইসহ মাত্র পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়।

তিনি আরও যোগ করে বলেন, হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় বাইরের জেলা থেকে কিছু পাইকারি ক্রেতা আসেন হাওরে। এখান থেকে সরাসরি ক্রয় করে নিয়ে যান। এতে করে কৃষকরা জমি থেকেই ভালো দামে ধান বিক্রি করতে পারেন। এখানে কৃষকদের শ্রমিক খরচ কম হয়। আমরা আশা করছি, এ বছর কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলে আর্থিকভাবে ভালো লাভবান হবেন।

হাওরে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এপ্রিলের মধ্যে কর্তন শেষ করার লক্ষ্য নেওয়ার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। ধান ৮০ শতাংশ পাকা হলেই কর্তনের জন্যে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষি বিভাগ থেকে।