এসএম দেলোয়ার হোসেন
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রামণ প্রতিরোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কারফিউ আর লকডাউনের মতো অবস্থায় রয়েছে। করোনার ভয়াল থাবা থেকে রেহায় পায়নি বাংলাদেশও। দিন যতই গড়াচ্ছে, দেশে করোনার প্রকোপ ততই বাড়ছে। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে প্রাণহানী ও আক্রান্তের সংখ্যা। করোনরা প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকার দোকানপাট ও খাবার হোটেল। এমন পরিস্থিতিতে অতিকষ্টে মানবেতর দিনযাপন করছেন মেসে থাকা শিক্ষার্থীসহ কর্মজীবী ব্যাচেলররা। ভুক্তভোগীরা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে গত ২৬ মার্চ থেকেই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সেই ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এ পর্যন্ত ৩ দফা মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে সাধারণ জনগণকে ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি তদারকির জন্য মাঠে নামানো হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাকে। তারা আরও জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় উপার্জিত বা জমানো টাকাও ইতোমধ্যেই ফুরিয়ে গেছে। করোনা আতঙ্কে কোনো মেসে গৃহকর্মীরাও দৈনন্দিন কাজ করতে যাচ্ছেন না। পাড়া-মহল্লার খাবার হোটেল বন্ধ থাকায় দুই বেলা খাবার খেতেই যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে ব্যাচেলরদের। ছুটিতে দেশে না গিয়েও মহাবিপদের মধ্যে পড়েছেন মেসের অনেকেই। এরই মধ্যে জীবন বাঁচাতে পরিচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলছেন তারা। তবে সময় যত গড়াচ্ছে, ততই বাড়ছে তাদের ঋণের বোঝা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মেসে থাকা ব্যাচেলরদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে আজ বুধবার পুরান ঢাকার লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন মেসের বাসিন্দা কর্মজীবী হাজারো নারী-পুরুষ করোনার প্রাদুর্ভাবের কারনে কর্মহীন হয়ে যার যার মেসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অনেকেই ত্রাণের আশায় বাড়ির পাশে রাস্তায় বসে কেউ দাঁড়িয়ে নির্বাক তাকিয়ে রয়েছেন, কখন কে যেন তাদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য সামনে এগিয়ে আসছেন। কিন্তু সেই আশার আলো ধরা দিচ্ছে না অসহায় মেসের বাসিন্দাদের কাছে। পুরান ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জ বাজার সংলগ্ন নবাবগঞ্জ লেন ক্লাববাড়ির ৪৩/১৫ নম্বর হোল্ডিংয়ে আনোয়ার হোসেন ভুট্টোর বাড়ির বাসিন্দা বিউটি আলমের মেসে অলস সময় কাটাচ্ছেন কর্মজীবী নারী নাসিমা আক্তার, রোজিনা বেগম, নাসিমা আক্তার মিষ্টি, নির্মাণশ্রমিক ইউনুস, রিকশাচালক মমতাজ উদ্দিন ও একই এলাকার ৪৩/১৭ নম্বর বাড়ির জালালের মেসের বাসিন্দা রিকশাচালক মো. রাজ্জাক মোল্লা।
কর্মজীবী নারী নাসিমা আক্তার ঢাকা প্রতিদিনকে জানান, তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার নান্দুরহাটে। স্বামী থেকেও না থাকার মতো। জীবিকার তাগিদে কয়েক বছর আগে তিনি ঢাকায় পাড়ি দেন। বিউটি আলমের মেসে থেকে মাসে ৯ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন ঢাকা কলেজের বিপরীতে জাহান ম্যানশনের ক্ষুদ্র একটি পোশাক কারখানায়। সেই টাকায় মেসের ভাড়া দেওয়া খাবার খাওয়ায়ই চলে যায়। তবুও তার বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রাম চলছে। প্রাণঘাতী করোনার কারণে সরকারের নির্দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে কারখানা বন্ধ থাকায় তিনি মেসেই দিনযাপন করছেন। গত মাসের বেতনও পাননি তিনি। আগের জমানো টাকা ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। পরিচিত জনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে অনেক কষ্টে দিন কাটছে তার। মেসে দু’বেলা খাবার খেতে গড়ে প্রতিদিন খরচ হয় ২শ টাকা। এখন কর্মহীন হয়ে পড়ায় অর্থের অভাবে থাকা-খাওয়াও অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, সবার কাছ থেকে কেবল শুনি- কেউ না কেউ তাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আসছে, এমন খবরে মেসের বাইরে দীর্ঘ অপেক্ষায় থেকেও সরকারি-বেসরকারিভাবে কারো কাছ থেকে কোন সাহায্য পাইনি। মেস পরিচালনাকারী বিউটি আলমের কাছে বাকিতেই প্রতিদিনের খাবার খেয়ে কোনমতে জীবন কাটাচ্ছেন বলে জানান তিনি। একই কথা জানালেন ওই মেসের বাসিন্দা কর্মজীবী নারী নাসিমা আক্তার মিষ্টি। তিনি জানান, তার গ্রামের বাড়ি বরগুনার আমতলী উপজেলার ঘোষখালীতে। তিনি কামরাঙ্গীরচরের চাঁন মসজিদ রোডে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। গত ২৪ মার্চ থেকে তার কাজ নেই। বেতনও পাননি। সরকার ঢাকা থেকে দেশে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় এমন পরিস্থিতিতে গ্রামের বাড়িতেও যেতে পারেননি তিনি। চাকরি হারানোর শঙ্কায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকার মেসেই বসবাস করছেন। এখনও কোন খাদ্য সহায়তা পাননি তিনি। একই অবস্থায় কর্মজীবী নারী রোজিনা আক্তারের। তিনি জানান, ওই মেসে থেকে তিনি একটি সুতার কারখানায় কাজ করেন। যা বেতন পান তা দিয়ে কোনমতে দিন কেটে যায় তার। গত ২৬ মার্চ কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই বেকার হয়ে পড়েন তিনি। এরমধ্যে তার ৭ বছরের মেয়ে লামিয়া তাকে দেখতে এসে এখানেই অবস্থান করছে। অর্থাভাবে সন্তান নিয়েও মহাবিপাকে পড়েছেন তিনি। মানলজ্জার ভয়ে কারও কাছে হাত পাততে পারছেন না। খেয়ে-না খেয়ে কোনমতে দিন পার করছেন তিনি। একই কথা জানালেন রিকশাচালক মমতাজ উদ্দিন ও নির্মাণশ্রমিক ইউনুস। একই এলাকার ৪৩/১৭ নম্বর বাড়ির জালালের মেসের বাসিন্দা হতদরিদ্র রিকশাচালক রাজ্জাক মোল্লা ঢাকা প্রতিদিনকে জানান, তিনি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কাজীরহাটের মোল্লাকান্দিতে। পরিবার থাকেন গ্রামের বাড়িতে। প্রায় ৭ বছর ধরে জালালের মেসে থেকে একই এলাকার খোকা মহাজনের গ্যারেজের ভাড়ায় চালিত রিকশা চালিয়ে উপার্জন করতেন তিনি। গত ২৬ মার্চ থেকে গ্যারেজ বন্ধ করে দেওয়ায় এবং রাস্তায় বের হলে পুলিশি ঝামেলার ভয়ে মেসে থেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। এরই মধ্যে জমানো টাকাও ফুরিয়ে গেছে। মেসে খাবার খাচ্ছেন বাকিতে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার কাজ করে সেই টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা তার অজানা। প্রতিদিনই বাসার সামনে রাস্তার পাশে বসে নির্বাক তাকিয়ে থাকেন, কেউ বুঝি তাকে খাদ্য সহায়তা দিতে আসছে। কিন্তু সেই আশা এখনো অধরা। একই কথা জানালেন জালালের মেসের বাসিন্দা বরিশালের মুলাদী উপজেলা নিবাসী রিকশাচালক আলমগীর। পাশের পাঠান-বাসের-শাহীনের গলির বাসিন্দা আলাউদ্দিন জানান, পেশায় তিনি দিনমজুর। গত ২৬ মার্চ থেকেই তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আয়-রোজগারের সব পথ এখন বন্ধ থাকায় ধারদেনা করে এতদিন সংসার চালিয়েছেন। সময় যত গড়াচ্ছে, ঋণের বোঝা ততই বাড়ছে তার। অর্থাভাবে এমনকি খাদ্য না থাকায় পরিবার নিয়ে অতিকষ্টে মানবেতন দিনযাপন করছেন তিনি। সরকার সবকিছু বন্ধ ঘোষণার পর থেকে বেকার হয়ে পড়ায় এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে কারও কাছ থেকে কোন আর্থিক সহায়তা এমনকি কোন ত্রাণ বা খাদ্যসামগ্রীও তার কপালে জোটেনি। তিনি বলেন, সরকার প্রতিদিনই দরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে, অথচ দরিদ্রদের মাঝে তা সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবাড়ি ও মেসের বাসিন্দাদের তালিকা তৈরি করে খাদ্যসামগ্রী যদি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করা হয়, তাহলে হয়তো কোন দরিদ্র বা মধ্যবিত্তরা কেউই খাদ্যসামগ্রী পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না। তাই সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তায়নের দাবি জানিয়েছেন মেসের বাসিন্দাসহ নগরীর নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা।
পুরান ঢাকার লালবাগের ব্যাচেলর বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম ঢাকা প্রতিদিনকে জানান, তিনি অবিবাহিত ও মতিঝিলের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার মা-বাবা ভাই বোনেরা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। চাকরির কারণে তিনি আজিমপুরের একটি বাড়িতে অন্য ৩ জনের সাথে ব্যাচেলর হিসেবে মেসে থাকেন। সরকারি নির্দেশনায় গত ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ হলেও কর্তৃপক্ষ তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে ৩০ মার্চ। এরপর থেকে তিনি মেসেই থেকে দিনযাপন করছেন। ছুটি পেয়ে তার অপর ৩ রুমমেট যার যার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। তবে কখন না জানি তার প্রতিষ্ঠান খুলে ফেলে কর্তৃপক্ষ, এমন শঙ্কা নিয়ে তিনি আর গ্রামের বাড়িতে যাননি। গত ৩১ মার্চ থেকে তাদের রান্নার কাজে নিয়োজিত গৃহকর্মীও গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ার পর থেকে খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। জানেন না রান্নাবান্না। দু’তিনদিন পাড়া-মহল্লা ঘুরে ৩ বেলা খাবার কিনে খেতে গিয়ে হাতে জমানো বেতনের টাকাও ফুরিয়ে আসছে। কতদিন এভাবে চাকরি ছাড়া থাকতে হয়, এমন ভাবনায় দিন কাটছে তার। সেই বিবেচনা করে ৩ বেলার পরিবর্তে এখন একবেলা ভাত আর একবেলা কলা-রুটি কিনে ক্ষুধা নিবারণ করছেন তিনি। তবে কতদিন এভাবে তাকে চলতে হবে তা নিয়ে অজানা শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল ইসলাম জানান, এমনিতে অভাবের সংসার। ভাই বোনদের নিয়ে তার মা-বাবা কিভাবে সংসার চালাচ্ছেন, তা একমাত্র আল্লাহ্ই ভালো জানেন। গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে ঢাকায় থেকে বড় ভুল করেছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে দিনমজুর অহিদ মিয়া জানান, তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ৪ জনে মিলে থাকেন কামরাঙ্গীরচরের একটি মেসে। মার্চের শুরু থেকেই নিয়মিত কাজ পাননি তিনি। করোনার কারণে বিভিন্ন বাড়ির নির্মাণ কাজও বন্ধ রয়েছে। এর আগে যা উপার্জন করা ছিল তা দিয়েই সপ্তাহখানেক কাটিয়েছেন। এখন হাতে আর পর্যাপ্ত কোন টাকা-পয়সাও নেই। কাজের বুয়াও করোনার ভয়ে মেসে রান্না করতে আসে না। তাই বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে ৩ বেলা হোটেলে খেতে হচ্ছে। কিন্তু এখন আর সম্ভব হচ্ছে না বিকাশের মাধ্যমে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে থাকা মা-বাবার কাছ থেকে দু’হাজার টাকা এনে অর্ধাহারে-অনাহারে ঢাকার মেসে অতিকষ্টে দিনযাপন করছেন বলে জানান অহিদ মিয়া।
ভুক্তভোগী আরিফুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে দেশে বর্তমানে খুব খারাপ একটা সময় যাচ্ছে। রাজধানীর সব স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় অনেকেই যার যার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। বিশেষ করে যারা ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন তারা অধিকাংশই চলে গেছে। সেই সঙ্গে ব্যাচেলর বাসায় (মেস) রান্নার কাজ করা খালারাও (কাজের বুয়া) বাড়ি চলে যাওয়ায় সময় মতো খাওয়া নিয়ে খুব বিপদেই পড়ে গেছেন তিনিসহ তার রুমমেটরা। তিনি জানান, সবার ভালোর কথা চিন্তা করে গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে এখন মনে হচ্ছে, বড় একটি ভুল করেছেন তিনি। তিনি বলেন, বাসায় রান্না করার খালা না থাকায় খুব কষ্টেই দিন কাটছে। রান্না করতে পারিনা, তাই হোটেলের খাবার খেয়েই দিন পার করছিলাম। কিন্তু যে দুই একটা হোটেল খোলা ছিল, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে হোটেল মালিকরা তাও এখন বন্ধ করে দিয়েছে। তাই খাবারের সন্ধানে সকাল-সন্ধ্যা এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায় ছুটে যাচ্ছেন। এ নিয়ে খুব বিপদের মধ্যেই রয়েছেন বলে জানান মাইনুল ইসলাম।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার মেস ঘুরে শিক্ষার্থীসহ কর্মজীবী ব্যাচেলরদের সাথে কথা বলে একই তথ্য পাওয়া গেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকার মেসে থাকা ব্যাচেলর ছাত্র-ছাত্রী ও চাকরিজীবী ছুটি পেয়েও চাকরি হারানো এমনকি লেখাপড়ায় ক্ষতির শঙ্কায় গ্রামে যাননি, তাদের অধিকাংশদেরই একই অবস্থা। খাওয়ার হোটেল বন্ধ থাকায় দিনেরাতে অনেকেই বেঁচে থাকার তাগিদে করোনার ভয় উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে মুদি বা বেকারিতে গিয়ে পাউরুটি, কলা বা পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধ-রুটি খেয়ে দিনযাপন করছেন। তবে এভাবে কতদিন চলবে তা জানেন না ব্যাচেলরদের কেউই।
জানা গেছে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্বের ২০৯টি দেশ ও অঞ্চলে সবশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৭৩ জন। বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ লাখ ৩১ হাজার ছাড়িয়েছে। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় মোট আক্রান্ত ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৩৭ জন। করোনা থেকে মোট সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৭৬৭ জন। এদিকে বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর থেকে প্রায় নিয়মিত কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর এবং মৃত্যুর খবর দিচ্ছে আইইডিসিআর। আজ বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিন উপস্থাপনকালে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা, রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
সবশেষ হিসাবে ডা. ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরে ৫৬৩টি ও দেশের অন্যান্য ল্যাবরেটরিতে ৪২৫টি মিলিয়ে মোট ৯৮৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তন্মধ্যে ৯৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ৫৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে পুুরুষ ৩৩ জন এবং নারী ২১ জন। ফলে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২১৮ জনে। একই সময়ে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে এ রোগে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২০ জনে। নতুন করে কেউ সুস্থ হননি। ফলে সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৩৩ এ রয়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ৫ জন, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বছর বয়সী ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৭ জন এবং ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ১০ জন। নতুন আক্রান্ত ৫৪ জনের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক রাজধানী ঢাকায় ৩৯ জন শনাক্ত হয়েছেন।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। যার মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। সে বিষয়টি মাথায় রেখে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সর্বশেষ মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আহ্বানও রয়েছে। এছাড়া মানুষকে ঘরে রাখতে রাজপথের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশ।