এসএম দেলোয়ার হোসেনঃ
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারদের বসবাস। বিস্তির্ণ এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষই দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষ। হাড়ভাঙা পরিশ্রমে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য কিনতে তীব্র গরম উপেক্ষা করে দিনভর লাইনে দাঁড়িয়ে চাহিদা থাকলেও ভাগ্যে জোটেনি টিসিবি’র চিনি। মিলেছে শুধু তেল-ডাল। ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনই কথাগুলো বলছিলেন টিসিবি’র ফ্যামিলিকার্ডধারীরা। আজ বুধবার (৭ জুন) দুপুরের দিকে এমন দৃশ্য দেখা গেছে কামরাঙ্গীরচরের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুর্ব রসুলপুর এলাকায়।
টিসিবি’র ফ্যামিলিকার্ডধারীরা নিউজ পোস্ট বিডি ডটকমকে জানান, নিত্যপণ্যের মূল্য যখন ঊর্ধ্বগতিতে, তখন এর লাগাম টেনে ধরতে নানান উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। তারই অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার যাতে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবি’র পণ্য কিনতে পারে, সে লক্ষ্য নিয়ে সরকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সারাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য কেনার জন্য দেশের অধিকাংশ নাগরিকদের হাতে টিসিবি’র ফ্যামিলিকার্ড তুলে দেন। তার সুফলও ভোগ করেন কার্ডধারীরা।
প্রতিমাসে সাশ্রয়ী মূল্যের এ প্যাকেজ পণ্য কিনতে টিসিবিকে দিক-নির্দেশনা দিলেও মাঝেমধ্যে সরবরাহ করা হয়না। গত মে মাসে টিসিবি’র পণ্য দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর দেওয়া হয়নি। চলতি মাসের ১ তারিখ থেকেই মুখিয়ে রয়েছেন টিসিবি’র প্যাকেজ পণ্য কিনতে ফ্যামিলিকার্ডধারীরা। গতকাল মঙ্গলবার (৬ জুন) কামরাঙ্গীরচরের খলিফাঘাট এলাকায় দিনভর টিসিবি’র পণ্য সরবরাহ করেন এক ডিলার। সেখানে তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও সাশ্রয়ী মূল্যের এ পণ্য কিনতে না পেরে অনেকেই নিজ বাসায় এবং কর্মস্থলে ফিরে যান। ওইদিন রাতেই ফ্যামিলি কারর্ডধারীরা খবর পেয়ে আজ বুধবার (৭ জুন) ভোর থেকেই ভিড় করেন কামরাঙ্গীরচরের পুর্ব রসুলপুর এলাকায়। স্থানীয় নেতাকর্মীদের তৎপরতায় সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবি’র ডিলারের কাছ থেকে চিনি ছাড়া ২ লিটার তেল ও ২ কেজি ডাল সংগ্রহ করেন ফ্যামিলিকার্ডধারীরা।
এসময় অনেকেই ডিলারের কাছে জানতে চান চিনি কোথায়? তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠা লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই চিনি না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ডিলারও সাফ জানিয়ে দেন, টিসিবি থেকে যেসব পণ্য তাদের সরবরাহ করা হয়েছে তাই তারা দিচ্ছেন। এর বাইরে তাদের কিছুই করার নেই।
ভুক্তভোগী ফ্যামিলিকার্ডধারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা অনেকেই চিনি না পাওয়ার অভিযোগ করেন। টিসিবি’র ডিলার মো. আব্দুল বাতেন তালুকদার, মুকবুল, নেকমত মিয়াসহ আরও কয়েকজন ডিলার এই প্রতিবেদককে বলেন, চাহিদার তুলনায় চিনি সরবরাহ কম থাকায় এবার আমাদের কামরাঙ্গীরচরের কাউকেই কোনো চিনি সরবরাহ করা হয়নি। এর কারণ জানতে চাইলে ডিলাররা বলেন, বিষয়টি টিসিবি কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন।
আজ বুধবার (৭ জুন) বেলা পৌনে ৩টার দিকে মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবি’র যুগ্ন পরিচালক (তথ্য কর্মকর্তা) মো. হুমায়ুন কবির অনলাইন বাংলা নিউজ পোর্টাল নিউজ পোস্ট বিডি ডটকমকে বলেন, পর্যাপ্ত চিনি সরবরাহ না থাকায় আপাতত ডিলারদের মাধ্যমে তেল ও ডাল সরবরাহ করা হয়েছে। যা গত মে মাসে দেওয়ার কথা ছিলো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, টিসিবি’র গুদাম থেকে চিনি উধাও হওয়ার বিষয়টি সত্য নয়, এটা গুজব হতে পারে।
টিসিবি’র কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির আরও বলেন, চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত যেসব ডিলার টিসিবি’র সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য পেয়েছে তাদের কাউকেই পর্যপ্ত চিনি সরবরাহ করা হয়নি। কোনো ডিলার যদি চিনি না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন, তা ঠিক হবে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ডিলারদের কাছে থাকা ডিও লেটারেই কী কী পণ্য সরবরাহ করা হবে তা উল্লেখ্য করা হয়েছে। তবে অর্ডার দেওয়া চিনি এখনো এসে পৌঁছায়নি। টিসিবি’র গুদামে চিনি দ্রুতই পৌঁছে যাবে। আগামী ১০ জুন থেকে প্রতিটি ডিলারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত চিনি সরবরাহ করা সম্ভভ হবে বলেও জানান টিসিবি’র কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।