কিউবা যেন বাংলাদেশের আফসোস না হয়

প্রকাশিত: ১২:১৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩০, ২০২৫

ক্রীড়া ডেস্ক :

জামাল ভূঁইয়াকে দিয়ে শুরু, এরপর বাংলাদেশ ফুটবলে প্রবাসী ফুটবলার অনেকেই এসেছেন, চেয়েছেন লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়াতে। কিন্তু সেখান থেকে টেকা হয়নি কারোরই। সাম্প্রতিক সময়ের মাঝে কেবল ফিনল্যান্ড থেকে তারিক কাজীকে দেখা গিয়েছে প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে। তবে এই দুজনের চেয়ে হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তি যে একটু বেশিই আলাদা, তা সহজেই বলা চলে।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন, নামের পাশে আছে একটা এফএ কাপ শিরোপা। মিডফিল্ড আর ডিফেন্সে খেলতে পারেন। এমন একজন বেশ তাড়াতাড়িই হয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবলের আইকন। সেইসঙ্গে বেড়েছে প্রবাসী ফুটবলার নিয়ে আলোচনা। সামিত সোম কিংবা কুইন সুলিভানকে নিয়ে আলাপ চলছে প্রতিনিয়ত।

হামজা চৌধুরীর পর এইমুহূর্তে বাংলাদেশের ফুটবল দলকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো যে কয়েকজন বংশোদ্ভূত ফুটবলার প্রস্তুত আছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম কিউবা মিচেল। জন্মসূত্রে ইংল্যান্ডের নাগরিক হলেও কিউবার মা একজন বাংলাদেশি আর বাবা জ্যামাইকান। তাই কিউবা চাইলে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন তিনটি দেশের হয়ে।কিউবা সাধারণত অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হলেও খেলতে পারেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবেও। ১৯ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের ইতোমধ্যে অভিষেক হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় টায়ারের দল সান্ডারল্যান্ড এএফসির মূল দলে। ২০২৪-২৫ মৌসুমে প্রি-সিজন ফ্রেন্ডলি ম্যাচে সাউথ শিল্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে সিনিয়র দলে ডেব্যু হয় এই ফুটবলারের। যে লিগে বর্তমানে খেলছেন হামজা চৌধুরী। সান্ডারল্যান্ডের আগামী দিনের তারকা ধরা হচ্ছে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এই ফুটবলারকে। মূল দলে অভিষেক হলেও মিচেল নিয়মিত খেলেন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাগে।

ইতোমধ্যে গুঞ্জন আছে বাংলাদেশ থেকে বাগিয়ে নিতে কিউবাকে দলে ডাকতে পারে জ্যামাইকা! দারুণ এই সম্ভাবনাময় ফুটবলারকে হাতছাড়া করতে চান না জ্যামাইকান ফুটবল ফেডারশন। তাই আগেভাগেই তাকে দলে ডাকতে চাই তারা। অবশ্য এর আগে বাংলাদেশ ফুটবল কমিউনিটি থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন সুযোগ পেলে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়াতে চান, বাংলাদেশী মায়ের রক্ত বহন করা এই ফুটবলার! এখন দেখার বিষয় মায়ের দেশ বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ পান কি না তিনি।

তবে ফুটবল সমর্থকদের বেশিরভাগই মনে করেন এমন একটা রতœ হাতছাড়া করা উচিত হবে না বাফুফের। তাদের চাওয়া বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন থেকে দ্রুত যোগাযোগ করা হোক কিউবার সাথে। এই বিষয়ে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা আরিফিন জিসানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ‘কিউবার ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলে যারা কি না এই মুহূর্তে প্রিমিয়ার লিগে কোয়ালিফাই করার লড়াইতে আছে। গত সিজনে অনূর্ধ্ব-১৮ প্রিমিয়ার লীগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর বিপক্ষে গোল করেছিল সে। বর্তমানে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে খেলছে।’

আরিফিন জিসান উল্লেখ করেন, ‘১৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার বাংলাদেশ সিনিয়র দলের জন্য শারীরিকভাবে তৈরি আছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ যদি তার প্রথম পছন্দ নাও হয়, তাকে আমাদের অনূর্ধ্ব-২৩ দলে আসার প্রস্তাব দেয়া যায় ফিফার একটি বিশেষ নিয়ম দেখিয়ে। যেখানে বলা আছে যে, বয়সভিত্তিক কোনো একটি জাতীয় দলে খেললেও পরবর্তীতে ভিন্ন জাতীয় দলের সিনিয়র পর্যায়ে খেলতে পারবে সে। হামজাকে নিয়ে কাজ করা বাফুফের এটা অজানা নয়, তারা এভাবে কৌশলীও হতে পারে।’

অন্য একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ফুটবল স্কাউটের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘কিউবা যেহেতু হাফ জামাইকান সেহেতু সে ফিজিক্যালিও ভালো। যেহেতু তাকে সান্ডারল্যান্ডের মতো এতো বড় ক্লাব সিনিয়র দলের সাথে প্রি সিজন করিয়েছে, তাই এই মুহূর্তে কিউবা মিচেল সিনিয়র লেভেলের ম্যাচ খেলতে প্রস্তুত বলা যায়। কিউবা মিচেল জামাইকান কমিউনিটির সাথে সম্পর্ক ভালো। তাই কিউবা মিচেলকে পেতে হলে বাংলাদেশের উচিত তাকে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে সাব হিসেবে হলেও কিছু মিনিট খেলিয়ে, জামাইকার জন্য ফিফার নিয়মের বাইরে নিয়ে যাওয়া।’

তিনি আরো মনে করেন শুধুমাত্র এক হামজা দিয়ে বাংলাদেশ দলকে পুরোপুরি পাল্টে দাওয়া সম্বব নয়। তবে হামজার সাথে তার কাছাকাছি মানের কিউবা মিচেল দলে যুক্ত হলে বাংলাদেশ দলের শক্তি বেড়ে যাবে অনেকগুণ। তাই বাফুফের উচিত তাকে অ্যাপ্রোচ করা। এখন দেখার বিষয় বাফুফে তার সাথে যোগাযোগ করে কি না। নাকি মার্গারিটা মামুনের মতো তিনিও পরিণত হন বাংলাদেশের দীর্ঘশ্বাসে!