ক্ষতিপূরণের চেকের আশায় ৪ বছর ধরে ঘুরছেন একই পরিবারের ৮ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী

শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুরে ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী’ নির্মাণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের চেক হস্তান্তরে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার (এলএ) দালালদের টাকা দিতে না পারায় টাকা পাচ্ছেনা একটি পরিবার। ওই পরিবারের ৮ জনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।
ভুক্তভোগীরা শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের হাজি গয়জুদ্দিন ঢালীকান্দি এলাকার সিরাজ মাদবরের পরিবারের সদস্য। টাকা না পাওয়ার কারণে থমকে আছে পরিবারের ৮ সদস্যের চিকিৎসা।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়, ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জমির কাগজপত্রের ফাইল হাতে নিয়ে গত ৪ বছর ধরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ঘুরছেন উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের হাজি গয়জুদ্দিন ঢালীকান্দি এলাকার সিরাজ মাদবর। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা মৌজা ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর মৌজায় মোট ১১৯ দশমিক ৭৩ একর জমি ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী’ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করে সরকার। যা ২০১৮-২০১৯ সালে ৬ নম্বর এলএ কেস সম্পূর্ণ হয়। সেই অধিগ্রহণে জাজিরা ১০১ নম্বর নাওডোবা মৌজায় বিআরএস ২০, ২৯ নম্বর খতিয়ানের ২৪১৬, ২৪৬৮ দাগে ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ জমি ভাগে আসে সিরাজ মাদবরের পরিবারের।
২০২০-২০২১ সালে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ২৮০ নম্বরে মিসকেস সম্পূর্ণ করে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার চেক হয় সিরাজ মাদবরের নামে। কিন্তু এর আগে স্থানীয় ইলিয়াস মাদবরের বাবা ইব্রাহিম মাদবর ২০১৪ সালে শরীয়তপুরের চিকন্দি আদালতে ৯৪ জনের নামে দেওয়ানি মামলা করেন। সেই মামলায় দালালকে টাকা দিয়ে স্থানীয় ইয়ারুন নেছা, ইউনুছ বেপারী, মজিবর মাদবর, আজিদ মাদবর, জালাল মাদবর, হারুন অর রশিদ, ফারুক হোসেনসহ বেশ কয়েকজন চেক উত্তোলন করতে পারলেও ৪ বছর ধরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ঘুরাঘুরি করেও চেক পাচ্ছেন না সিরাজ মাদবর।
সিরাজের অভিযোগ, মামলায় তার নাম থাকলেও ইলিয়াস মাদবরকে ১৪ লাখ টাকা দিতে না পারায় চেক তুলতে পারছেন না। চেক না পাওয়ায় সিরাজ মাদবরসহ তার স্ত্রী সেলিনা বেগম, ছেলে স্বাধীন মাদবর, ইমামুল মাদবর, বোন সোনা মালা বেগম, ঝরনা আক্তার, জয়বুন নেছা ও ভাগ্নি রত্মা আক্তারের চোখের চিকিৎসা থমকে আছে।
একই দাগে জমির মামলায় চেক পাওয়া স্থানীয় ইয়ারুন নেছা বলেন, দালাল ইলিয়াসের পরিবারকে দুই লাখ টাকা দিয়ে আমি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে চেক পেয়েছি। কিন্তু সিরাজ মাদবর দালালকে টাকা দিতে না পারায়, চেক পাননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইলিয়াস মাদবর তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমরা ৯৪ জনের নামে আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা করেছি। যেটা পরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে অনেকেই মামলা করা জমির চেক উঠিয়ে নিয়েছে। মামলা যেহেতু চলমান, নিষ্পত্তি হলে আদালতের আদেশ অনুযায়ী যে চেক পাবে, সে নেবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, জেনেছি সিরাজ মাদবরের জমি ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী’ প্রকল্পের অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। অধিগ্রহণের পর তার চেক পাওয়ার জন্য গত ৪ বছর যাবৎ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছেন, বিভিন্ন মানুষের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি চেকটা পাচ্ছেন না। যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। জেলা প্রশাসকসহ যারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর পাশে দাঁড়াবেন এটাই আমার চাওয়া।
সার্বিক বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, বিষয়টির সুস্পষ্ট প্রমাণ দরকার, কীভাবে একই মামলায় অন্যরা চেক পেল! বাদী ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন বলে অন্যরা চেক তুলে নিতে পারবেন, এটা তো হওয়ার কথা না। যেহেতু ওই পরিবারে ৮ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তাই বিষয়টি তদন্ত করে ওই পরিবারকে সহায়তা করা হবে।