কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিমনির উচ্চতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর আগে, সব কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিমনির উচ্চতা ২৭৫ মিটার করার নিয়ম ছিল। এবার নতুন নিয়ম অনুযায়ী চিমনির উচ্চতা নির্ধারণ করা হচ্ছে ২২০ মিটার। তবে, পরিবেশের ইকোসিস্টেম বিনষ্ট হতে পারে, এমন সব জায়গায় ২৭৫ মিটার উচ্চতাই থাকছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুন্দরবন ও এর আশেপাশের এলাকায় চিমনির উচ্চতা ২৭৫ মিটার রাখলেও অন্যান্য এলাকায় ২২০ মিটার করা হচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার। তবে, চিমনির উচ্চতা কমালেও কয়লাচালিত বিদ্যুৎন্দ্রের ক্ষতি কমাতে ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজার ইউনিট (এফজিডি) নির্মাণ করতেই হবে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেন, ‘সব জায়গায় নয়, যেসব এলাকায় কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পরিবেশ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, সেসব এলাকায় চিমনির উচ্চতা একই থাকবে। অন্যান্য এলাকায় কিছুটা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ শিগগিরই এই বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে বলে তিনি জানান।
বতমানে বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা ও কক্সবাজারে বড় কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে পায়রার কাজ শেষ। রামপাল আর মাতারবাড়ির কাজ চলছে।
চলতি মাসেই পায়রার ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। আগামী মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হতে পারে। কেন্দ্রটির চিমনির উচ্চতা ২৭৫ মিটার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রটি এফজিডি নির্মাণ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করেছে। এজন্য চিমনির চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৯৬ ভাগ ফ্লু গ্যাস ধরা সম্ভব হবে। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ায় দূষণ একেবারে কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই এই কেন্দ্রের চিমনির উচ্চতা ২২০ মিটারই করা হয়েছে। ফ্লু-গ্যাস হচ্ছে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদির নিঃসরণ। এই গ্যাস নিঃসরণ পর্যবেক্ষণের জন্য রিয়েল টাইম কন্টিনিউয়াস এমিশন মনিটরিং সিস্টেম করা বাধ্যতামূলক সব বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের উপকূলীয় এলাকা সাইক্লোনপ্রবণ। এসব এলাকায় ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি তৈরি করলে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় ২৭৫ মিটার উচ্চতায় বাতাসের যে গতিবেগ তৈরি হয়, তাতে এই আশঙ্কা প্রবল বলে দেখা গেছে। ভারত ও চীনকে অনুসরণ করে বাংলাদেশ চিমনির উচ্চতা নির্ধারণ করলেও দেশটি অনেক আগেই তাদের কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিমনির উচ্চতা কমিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে অন্তত ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হবে কয়লা। এই পরিমাণ কয়লাকেন্দ্র চালাতে বছরে অন্তত ৩ কোটি ৩০ লাখ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন।
প্রতিদিন এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে দরকার হবে ৯ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। সেই হিসাবে প্রতিদিন ১০ হাজার মেগাওয়াটের জন্য প্রয়োজন পড়বে ৯০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। বছর শেষে ৩৬৫ দিনের জন্য প্রয়োজন হবে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। দাবি করা হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ ছাই ‘অ্যাশ হপারে’ ধরা হবে। এরপরও বিপুল পরিমাণ কয়লা পুড়লে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে। এই ক্ষতি কমিয়ে আনতে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্টরা দাবি করেন।