খামারবাড়িতে চেয়ার দখলের প্রতিযোগিতা

প্রকাশিত: ১২:৫২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে (ডিএই) অস্থিরতা থামছেই না। ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে চেয়ার দখলে মরিয়া বিএনপিপন্থি কর্মকর্তারা। অনেকে চাপ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে তাদের পদায়ন বাগাচ্ছেন। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে ঢালছেন টাকাও। পদায়ন বাণিজ্যের পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠানের নামে চলছে চাঁদাবাজি। টেন্ডার হাতিয়ে নিতেও দেওয়া হচ্ছে হুমকি-ধমকি। পদোন্নতি বঞ্চনা ও হয়রানির অভিযোগ তুলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে কৃষির বাতিঘরখ্যাত এই সংস্থায় বিরাজ করছে আতঙ্ক। এমন অস্থির পরিস্থিতিতে খামারবাড়ির কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা।

গত তিন মাসে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের সরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বিএনপি ও জামায়াতপন্থিদের পদায়ন হয়েছে। শতাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, খালি হওয়া পদে বসতে একটি চক্রকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হচ্ছে। তবে আওয়ামী জমানার অধিকাংশ প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এখনও বহাল আছেন। আর বড় প্রকল্পগুলোর পিডি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বিএনপিপন্থি একদল কর্মকর্তা। তারা প্রকল্পের বর্তমান পিডি ও ডিপিডিদের সরাতে তৎপর। সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালকদের বদলির একটি তালিকা তারা কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাঠান। তাতে কাজ হয়নি। ব্যর্থ হয়ে গতকাল সোমবার প্রকল্প পরিচালকদের ছাত্র খুনের সঙ্গে জড়িত বলে ছবিসহ বড় ব্যানার খামারবাড়ির সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত চাপ তৈরি করে পিডিদের চেয়ার ছাড়তে বাধ্য করতেই এ পন্থা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ডিএইর প্রবেশ মুখেই দুটি বিশাল আকারের ব্যানার ঝুলছিল। এগুলোতে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, ডিএইর সাবেক দুই মহাপরিচালকসহ ৩৯ জনের ছবি দিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যার দায়ে তাদের শাস্তি দাবি করা হয়েছে। এতে তুলনামূলক বড় প্রকল্পের পিডি, ডিপিডি ও গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তারা ঠাঁই পেয়েছেন। এ ছাড়া এক প্রকল্প পরিচালকের স্ত্রীর ছবিসহ লিফলেটও বিতরণ করা হয়। তবে ব্যানারে সাবেক সংসদ সদস্য কৃষিবিদ বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাবেক কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারসহ ছাত্র আন্দোলন দমাতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বহু কর্মকর্তার ছবি নেই। এমনকি যেসব আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা ইতোমধ্যে বদলি হয়েছেন, তাদের নামও নেই। ব্যানারে ছবি থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাদের মধ্যেও এখন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
ডিএইর কয়েক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী কয়েকজন পিডির নাম ও ছবি ব্যানারে আসেনি। তাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক পরিচয় বদল করেছেন। আবার অনেকেই বিএনপিপন্থিদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন।
ব্যানারে ছবি রয়েছে– এমন এক প্রকল্প পরিচালক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘সরকারি চাকরি করি, আমার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। সরকার যখন যে নির্দেশনা দেয় তা পালন করি। দেয়ালে ছবি টানানোর ঘটনায় আতঙ্কে আছি।’
আরেক কর্মকর্তা বলেন, সরকার পতনের পর থেকে ডিএইতে ব্যাপক চাঁদাবাজি হচ্ছে। খালি হওয়া পদগুলোতে পদায়নের জন্য কেআইবির কিছু নেতা, শেকৃবি ছাত্রদলের কয়েকজন মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন। দুর্গাপূজার নাম করে সব কর্মকর্তার কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয়েছে। যে কোনো অনুষ্ঠান ঘিরেই তোলা হয় টাকা। আর টেন্ডার ঘিরে প্রকল্প পরিচালকদের নিয়মিত হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।
ডিএইর প্রশাসন ও অর্থ উইংয়ের উপপরিচালক ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ বলেন, ‘কর্মকর্তাদের ছবি কারা টানিয়েছে, তা জানা নেই। আমি এ রকম কর্মকাণ্ড সমর্থন করি না। তবে যাদের ছবি টানানো হয়েছে তারা ৪ আগস্ট আন্দোলনবিরোধী সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। মন্ত্রী-সচিবের নির্দেশে কয়েকশ কর্মকর্তা সমাবেশে অংশ নিলেও গুটি কয়েকজনের ছবি কেন টানানো হলো? ব্যানারগুলো সরাতে মহাপরিচালকসহ আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছাইফুল আলম বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে বদলি কিংবা পদায়ন নিয়ম মেনে করা হয়। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবে খুনি আখ্যা দিয়ে ছবি টানিয়ে হেয়প্রতিপন্ন করা অন্যায়।’