জেলা প্রতিনিধি,সাতক্ষীরাঃ
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আবাদ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ব্যবহারের জন্য মিষ্টিপানি সংরক্ষণের জন্য গাবুরার সোরা খাল পুনঃখননের কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজ চলমান থাকতেই খালে লবণপানি ঢুকিয়েছেন স্থানীয় চিংড়ি ঘের মালিকরা।শনিবার গভীর রাতে উপজেলার চাঁদনীমুখা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে খাল পুনঃখননে নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন ছুটি পেয়ে বাড়ির উদ্দেশে প্রকল্প এলাকা ছেড়ে যান। এ সুযোগে শনিবার গভীর রাতে চাঁদনীমুখা গ্রামের শহিদুল ইসলাম ও অহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে ২০-২২ জন খালের জলকপাটের (স্লুইসগেট) মুখ উন্মুক্ত করে দেন। প্রকল্পের কাজ মাঝপথে থাকতেই পানি প্রবেশ করানোয় খাল পুনঃখনন কাজ দুরূহ হওয়ার পাশাপাশি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাবুরার চারপাশে টেকসই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় তিন মাস আগে সোরা খাল পুনঃখননের কাজ শুরু হয়। স্থানীয়দের জন্য মিষ্টি পানি সংরক্ষণ ও এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ কি.মি. খাল পুনঃখননের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। আমিন অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দু’দিন আগে ঠিকাদার নিযুক্ত শ্রমিকরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি চলে যায়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে শনিবার রাতে চিংড়ি ঘেরের জন্য নদীর লবণপানি নেওয়ার অজুহাতে স্থানীয় কয়েকজন ঘের মালিক স্লুইচগেটের মুখের বাঁধ অপসারণ করে খালে পানি প্রবেশ করায়।
মিষ্টি পানি সংরক্ষণের খালে আবাদ ও পানের অযোগ্য নোনাপানি প্রবেশ করানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। আবুল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলমসহ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, খাল পুনঃখনন শেষ হওয়ার আগেই পানি ঢুকিয়ে দেওয়ায় স্থানীয়দের চলাচলের রাস্তা তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া কয়েকজনের বসতঘরের পাশে ধস নেমেছে। খালে মিষ্টি পানি না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা এবারও জমিতে ফসল ফলানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। এ ছাড়া খালে লবণ পানি প্রবেশ করানোয় এলাকায় মিষ্টি পানি সংরক্ষণে তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা অপূর্ণ থাকার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ম্যানেজার কল্লোল হোসেন জানান, তারা ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার একদিন পরেই খালে লবণপানি প্রবেশ করানোর খবর জানতে পারেন। এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভোগান্তির পাশাপাশি খালের চলমান পুনঃখনন কাজ সম্পন্ন দুরূহ হয়ে পড়বে। এ ছাড়া তারা বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হওয়ায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে চিংড়ি ঘের মালিক অহিদুজ্জামানের ভাষ্য, তিনি নিজে সেখানে যাননি। তবে শহিদুলসহ কয়েকজন ঘের মালিক পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুল ইসলামের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে খালে লবণ পানি তুলেছেন।অভিযোগ অস্বীকার করে শহিদুল ইসলাম জানান, শনিবার রাতে কিছু লোক জলকপাটের (স্লুইসগেট) মুখ খুলে দিয়ে খালে পানি ঢুকিয়েছে বলে তিনিও শুনেছেন। তবে জলকপাট খোলার কাজে তিনি নেতৃত্ব দেননি ও ঘটনার সময় তিনি সেখানে ছিলেন না।
এ বিষয়ে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, তিনি কাউকে ওই খালে পানি তুলতে অনুমতি দেননি। বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছেন বলে দাবি করে জানান তিনি ঈদের ছুটিতে রয়েছেন। কর্মস্থলে ফিরে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।