খুব হিসেব করে চলেও মেস শিক্ষার্থীদের ইফতারে জুটছে শুধু ছোলা-মুড়ি
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
মেসে থাকা একজন শিক্ষার্থীর বাসা ভাড়া, মিল খরচ, বুয়া বিল, হাত খরচ সব মিলিয়ে খুব হিসেব করে চলতে হয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে রমজান এলে হিসেবটা যেন আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায় মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের। খুব হিসেব করেও মেসে থাকা এসব শিক্ষার্থীদের ইফতারে জোটে না কোনো ফল। যে মেসগুলোতে ইফতারে ছোলা, মুড়ি, বেগুনির সঙ্গে খেজুরও খাওয়া হয়, সেই মেসকে বিলাসী মেস বলে আখ্যা দেন অন্য মেসের শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি এমনই চিত্র দেখা গেছে শরীয়তপুরের বুড়িরহাট নামক স্থানের মেসগুলোতে। বুড়িরহাটের এসব মেসে থাকেন শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
বুড়িরহাটের মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ঢাকা, পাবনা, নোয়াখালী, রাজশাহী, বরিশাল, চাঁদপুরসহ প্রায় ৩০টি জেলার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই বুড়িরহাটের বিভিন্ন মেসে থাকেন। বুড়িরহাট এলাকাটি গ্রাম অঞ্চল হওয়ায় অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীদের মতো টিউশনি পাওয়া যায় না। এর মধ্যেও টিউশনি দুই একটা যা পাওয়া যায় তার বেতন সর্বোচ্চ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। ফলে বাড়ি থেকে যে টাকা দেওয়া হয়, সেটাই মূল ভরসা এখানকার শিক্ষার্থীদের। বাসা ভাড়া, মিল খরচ, বুয়া বিল, ইন্টারনেট বিল, বিদ্যুৎ বিল, পড়াশোনাসহ সব খরচই চালাতে হয় বাড়ি থেকে আনা টাকা দিয়ে। প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এসব খরচ দিয়ে জীবন ধারণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। এরপর রমজান মাস এলে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে পণ্যের মূল্য আরও বেড়ে যায়। যার কারণে খুব হিসেব করলেও বুড়িরহাটের মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের ইফতারে জোটে শুধু ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, চিনির শরবত।
জাহিদুল আলম জিহাদের বাড়ি নোয়াখালী। বুড়িরহাটের মেসে থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ১০ রমজান চলে গেলেও খেজুর ছাড়া অন্য কোনো ফল আমরা ইফতারে খেতে পারিনি। রমজান মাসে ইফতারের কারণে বাড়তি খরচ হয়। এই বাড়তি খরচ কারও বাড়ি থেকে দেয়, কারও বাড়ি থেকে দেয় না। খুব অসুবিধার মধ্যেই আছি।
ঢাকা থেকে এসে মেসে থাকেন তানজিল আহমেদ অপূর্ব। তিনি বলেন, প্রতি মাসে আমাদের বাসা থেকে সাড়ে ৫ হাজার বা ৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়েই আমাদের চলতে হয়। মেসের মিল, বাসা ভাড়া, বুয়া বিল, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বিল, খাতা কলম, হাত খরচ সবই আমাদের এই টাকার মধ্যেই করতে হয়। রমজানে একটু বেশি হয়। বাসায় বেশি টাকা চাওয়া হলে মা-বাবা ভাবেন বেশি টাকা নিয়ে মাদকসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছি কি না। ওই টাকার মধ্যেই আমাদের রমজানেও চলতে হয়। যার কারণে একটু কষ্টের মধ্যে আছি।
জোবায়ের হোসেন প্রতিষ্ঠানটির সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, রমজান মাস এলে অন্যান্য দেশে সব জিনিসপত্রের দাম কমলেও বাংলাদেশের চিত্র উল্টো হয়ে যায়। রমজানের আগে প্রতি হালি কলার দাম ছিল ২৫ টাকা। সেই কলার হালি এখন ৫০ টাকা হালি। আমরা ছাত্র মানুষ, সবার পরিবারের অবস্থা এক রকম না। বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে আমাদের চলতে হয়। রমজানে যে পরিমাণ দাম বাড়ছে তাতে আমাদের না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছে। আমার মেসে ইফতারে সর্বোচ্চ ভালো খাবার হয়েছে পেঁয়াজু, ছোলা, মুড়ি, খেজুর ও শরবত। তবে কমদামী খেজুর কেনা হলেও প্রতিদিন রাখতে কষ্ট হয়।
মাহির নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, রমজানের বর্তমান বাজারে আমাদের মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হয়। বাবা-মা খুব কষ্ট করে এখানে পাঠিয়েছে আমাকে। মোটামুটি বলতে পারি না, সর্বনিম্ন ভাবেই চলি।
রমজান মাসে বুড়িরহাটের একটি মেসের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন নেত্রকোণার ইমন হাসান সাইম। তিনি বলেন, বুয়া রমজানে দুই বার রান্না করে। যার ফলে রান্নার ৮ ঘণ্টা পরে আমাদের বাসি খাবার খেতে হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে রমজান মাসে অন্যান্য মাস থেকে বেশি খরচ হয়। মিল খরচ বেশি হয়ে যাবে বলে এখন পর্যন্ত খেজুর ছাড়া মেসে অন্য কোনো ফল রাখা হয়নি ইফতারে। যদি জিনিসপত্রের দাম একটু কমত, তাহলে আমরা ইফতারে ফলমূল খেতে পারতাম।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক সুজন কাজী বলেন, পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যে ভেজালরোধ করতে কাজ করছে ভোক্তার অধিকার। শুক্র, শনিসহ যেকোনো ছুটির দিনেও আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযানে বিক্রেতাদের ক্রয় রশিদ ও বিক্রয় মূল্য তদরকি করছি। কোথায় অনিয়ম পেলে আমরা জরিমানাসহ ব্যবস্থা নিচ্ছি। সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি হলে সাধারণ মানুষসহ সবাই পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।