গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৮৪, মানবিক সংকট চরমে

প্রকাশিত: ২:৫৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

 

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের টানা বিমান হামলায় পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর (আইডিএফ) হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৮৪ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬৮ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে এই তথ্য। তবে নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, কারণ এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।

 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢুকে হঠাৎ আক্রমণ চালায়, যাতে ১,২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে এবং তা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলমান রয়েছে। ২০২৫ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৪০০ জনে এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৪১৬ জন মানুষ। এই সংখ্যার মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু, যা এই সংঘর্ষের ভয়াবহ মানবিক দিকটি স্পষ্ট করে তোলে।

যদিও ১৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল একবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল, কিন্তু মাত্র দুই মাসের মাথায় তা ভঙ্গ করে ১৮ মার্চ থেকে আবারও সামরিক অভিযান শুরু করে। দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে ইতিমধ্যে ৩৮ দিনে নিহত হয়েছেন ২,০৬০ জন এবং আহত হয়েছেন ৫,৩৭৫ জন ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, এখনও কমপক্ষে ৩৫ জন জিম্মি জীবিত রয়েছেন এবং তাদের মুক্ত করাই এই অভিযানের মূল লক্ষ্য। এই যুক্তিতে নেতানিয়াহুর সরকার হামলার গতি আরও জোরদার করছে, যদিও এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ গাজাবাসী।

এই অব্যাহত সহিংসতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ নানা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্র ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে) পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’র অভিযোগে মামলা নিয়েছে। তা সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বারবার স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাস পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত এবং সব জিম্মি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অভিযান বন্ধ হবে না।

 

এই অবস্থায় গাজা উপত্যকা ক্রমেই একটি মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটানো হাজার হাজার পরিবার কেবল বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। এখন সময় হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরও সক্রিয়ভাবে এই সংকট নিরসনে এগিয়ে আসুক। যুদ্ধ নয়, দরকার মানবতার—এই বার্তাই হোক আমাদের সামষ্টিক অবস্থান। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি