গাবতলীর যাত্রী ভাগিয়ে নিচ্ছে সেলফি পরিবহন

প্রকাশিত: ২:০৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০২৪

আফরিন আক্তারঃ 

ঈদের আগে বাড়ি ফেরা মানুষের জমজমাট উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না গাবতলী বাস টার্মিনালে। ফলে এখনও বাসের সিট ফাঁকা রেখেই গাবতলী থেকে নিজ গন্তব্যে ছুটছে পরিবহনগুলো। সিট খালি থাকায় গাড়ির যাতায়াতের খরচও উঠছে না বলে জানান বিভিন্ন কাউন্টারের কর্মচারীরা। সেলফি পরিবহনের যাত্রী ভাগিয়ে নেওয়াকেই সিট খালি থাকার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন কাউন্টারের কর্মচারীরা।

শনিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালের টিকিট কাউন্টারের যাত্রীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘিরে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ম্যাজিস্ট্রেটের টিম স্থায়ীভাবে গাবতলী বাস টার্মিনালে কাজ করছে। কোনো কোনো কাউন্টার বেশি দামে টিকিট বিক্রি করলেও বেশিরভাগ কাউন্টার সরকার নির্ধারিত কমমূল্যে টিকিট বিক্রি করছে। তবে বেশি ভাড়া রাখায় এবং বিআরটিএর নিয়ম না মানলে কাউন্টারগুলোকে গুনতে হচ্ছে জরিমানা।

জে লাইন কাউন্টারের ম্যানেজার মিজানের সাথে কথা বললে আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, যাত্রী না পেয়ে সিট খালি রেখেই যেতে হচ্ছে। সকাল থেকে দুটি গাড়ি গাবতলী ছেড়ে গেলেও দুইটিতেই সিট খালি ছিল। বেশিরভাগ যাত্রীই পদ্মাসেতু হয়ে বিভিন্ন উপায়ে চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের গাড়ির গন্তব্যে যেতে টোটাল ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ, দেখেন এখন যেই গাড়িটি গাবতলী ছেড়ে যাচ্ছে, সেটিতেও সিট খালি যাচ্ছে। এই গাড়িতে প্রায় ৭ হাজার টাকা লোকসান হবে। এখন পর্যন্ত এই হলো গাবতলীর যাত্রীর অবস্থা। আমাদের সব যাত্রী সেলফি পরিবহন নিয়ে যাচ্ছে। গাবতলী থেকে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর সেলফি পরিবহন পাটুরিয়ার উদ্দেশ্য ছেড়ে যাচ্ছে। সেলফি পরিবহন নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি বা হবো।

আনন্দ পরিবহনের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, সরকার নির্ধারিত ভাড়া থেকে অনেক কম নেওয়া হচ্ছে। আমাদের গাড়িতে গাবতলী থেকে খুলনা যেতে সরকারের ভাড়া অনুযায়ী একজন যাত্রীকে ৯২০ টাকা গুনতে হয়। কিন্তু যাত্রী না থাকায় ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় টিকিট বিক্রি করছি। তারপরও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ঈদ ছাড়া অন্যান্য সময় এই ভাড়া ৪৫০ টাকা নেওয়া হয় বলে করেন যাত্রীরা।

আনন্দ পরিবহন নিয়ে যাত্রী সাইদুর অভিযোগ করে বলেন, সবসময় যেই ভাড়ায় যাই, তার থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে টানানো তালিকা অনুযায়ী কম ভাড়া নিচ্ছেন তারা। সরকারের তালিকা অনুযায়ী আমার দুই টিকিটের ভাড়া আসে ১ হাজার ৮৪০ টাকা। অথচ আমার কাছ থেকে দুই টিকিটের দাম নেওয়া হয়েছে ১২শ টাকা। অর্থাৎ সরকারের তালিকা অনুযায়ী দুই টিকিট থেকে ৬৪০ টাকা কম নিয়েছে তারা।

এদিকে ভাড়া বেশি রাখায় সোহাগ পরিবহন ও গোল্ডেন পরিবহনের কাউন্টারকে জরিমানা করে বিআরটিএ। সরকারের তালিকা অনুযায়ী সোহাগ পরিবহন যাত্রীর কাছ থেকে শেষ গন্তব্যের ভাড়া নেয়। এতেই জরিমানার কবলে পড়ে তারা। অন্যদিকে গোল্ডেন পরিবহনের কাউন্টার সরকারের নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী ভাড়া কম নিলেও রুটের নাম উল্লেখ না করায় জরিমানা গুনেছে।সকাল সাড়ে ১০টার পরে গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে আসেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। এসময় তিনি বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখেন এবং যাত্রীদের সাথে কথা বলেন। সংস্থাটির চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতেই এই দুই কাউন্টারকে জরিমানা গুনতে হয়।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, আমরা দুইটি কাউন্টারকে জরিমানা করেছি। যাত্রীদের ভোগান্তি যেন না হয়, সেজন্য আমরা প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটসহ একটি টিম কাজ করছে। যাত্রীরা চাইলেই এখানে এসে অভিযোগ করতে পারবেন এবং সেবা নিতে পারবেন। আমরা প্রত্যেকটা কাউন্টারে আমাদের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টানিয়ে দিয়েছি। তবে অনেক কাউন্টার ভাড়ার তালিকার থেকেও কম ভাড়া নিচ্ছে বলে জানান তিনি।