গৌরীপুরে পৃথক খুনের ঘটনায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ, পুলিশ বলছে দ্রুত গ্রেপ্তার হবে আসামি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে শনিবার ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক খুনের ঘটনায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। ফেসবুকে হুমকি দিয়ে শনিবার মারফত আলী ফকির (২২) নামের এক কলেজছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া একই দিনে গৌরীপুরের হিম্মতনগর গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাই ভাতিজাদের হামলায় আবেদ আলী খা (৭০) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মারফত আলী শুক্রবার ভাগ্নির বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের সাকুয়া মাঝেরচর গ্রামে গিয়েছিলেন। বিয়ে শেষে ভাগ্নিকে এগিয়ে দেওয়ার সময় মুন্সিবাড়ী মাদরাসার সামনে সড়কে একাধিক মোটরসাইকেলে করে আসা একদল যুবক তার মোটরসাইকেল থামিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, নিহত মারফত আলীর ওপর পূর্বশত্রুতার জেরে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুব্ধ ছিলেন একই গ্রামের উসমান খানের ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান তানভির। তানভিরের নামে থানায় হত্যাচেষ্টাসহ অন্তত ৭টি মামলা রয়েছে।
অপরদিকে উপজেলার হিম্মতনগর গ্রামের নিহত আবেদ আলী খানের স্ত্রী খোদেজা আক্তার জানান, তার স্বামী ভাই ছাবেদ আলী ছাবুর কাছ থেকে ২২ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। সেই জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় শনিবার দুপুরে হামলা চালায়।
খোদেজা বলেন, ‘আমরা নিজ ঘরে আটকে ছিলাম। হামলাকারীরা আক্রমণ করলে আমার স্বামী প্রথমে পাশের বাড়িতে পরে দৌড়ে অন্য গ্রামে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা আমার স্বামীকে ধরে এনে তাকে হত্যা করে।’
গৌরীপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, হাসপাতালে আসার আগেই আবেদ আলী খান মারা গেছেন। তার শরীরে বড় আঘাতে কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে, বামহাতে একটি কাটা ও ঘাড়ে আচড়ের দাগ রয়েছে।
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মাযহারুল আনোয়ার সমকালকে বলেন, কলেজছাত্র খুনের ঘটনায় নিহত ব্যাক্তি ও ঘাতক দুজনের বাড়িই নান্দাইল উপজেলায়। নান্দাইল থানার সঙ্গে আমরা এ ব্যাপারে যোগাযোগ করছি।
অপর ঘটনায় পুলিশ বলছে, হামলার শিকার আলাল উদ্দিনের বাড়িতে তারা গিয়েছেন। অভিযুক্তরা ভয়ে পালিয়ে গেছে। পুলিশ আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। তবে এত ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।
জোড়া খুনের ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকার সাধারণ মানুষ:
১৮ দিন আগে ফেসবুকে হুমকি দিয়ে কলেজ ছাত্রকে খুন করা হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের পরিবার একাধিকবার থানায় অভিযোগ করলেও ব্যবস্থা নেয়নে পুলিশ। অপরদিকে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ভাই এবং ভাতিজারা মিলে চাচাকে হত্যার বিষয়েও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ।
গৌরীপুরের সিনিয়র সাংবাদিক মো. সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে গৌরীপুরে দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। এ ধরনের অপরাধ নিয়ে আগে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়তে পারে।’ এ ব্যাপারে তিনি পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশীষ কর্মকার সমকালকে বলেন, ফেসবুকে হুমকি দিয়ে কলেজছাত্র খুনের ঘটনাটি সত্যিই উদ্বেগজনক। এ ঘটনায় আগে থেকে সাইবার মনিটরিং টিম সচেতন থাকলে এমনটি নাও হতে পারতো। আর জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বৃদ্ধ খুনের বিষয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। দুটি ঘটনাকেই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশ দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করবে।