খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ির দুর্গম লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদ সুমন্ত পাড়া। উপজেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার মোটরসাইকেলে এবং দুই কিলোমিটার হাঁটার পর মিলবে পাড়াটি। সেখানকার মেয়ে মনিকা চাকমা দেশের জন্য বয়ে এনেছেন অভূতপূর্ব এক সাফল্য। নেপালকে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয় শিরোপাজয়ী দলের অন্যতম এ সদস্য ফাইনালে করেছেন গোলও। পাহাড়ি জনপদটি তাই গত বুধবার শিরোপা জয়ের পর থেকেই ভাসছে আনন্দে। তবে এই উচ্ছ্বাস আনতে মনিকাকে পেরোতে হয়েছে অনেক চড়াই।
বিন্দু কুমার চাকমা ও রবিমালা চাকমা দম্পতির পরিবারের সবার ছোট মনিকা। ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া মনিকার ফুটবলের প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। তবে কৃষিকাজ করে জীবিকা চালানো বাবা প্রথমদিকে চাইতেন না মেয়ে ফুটবল খেলুক। কিন্তু মনিকা ঠিকই বড় বোন অনিকা চাকমাকে নিয়ে লুকিয়ে ফুটবল খেলতেন। আর এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর স্কুল শিক্ষক গোপাল দে ও বীরসেন চাকমার।
মনিকার সাফল্যের শুরু প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই। মরাচেগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় মনিকাদের দল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর খেলেন জেলা পর্যায়ে। নজরকাড়া ফুটবল খেলায় পরে অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় পর্যায়ে খেলার ডাক পান মনিকা। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এএফসি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে দেশের হয়ে করেন তিন গোল। ২০২২ সালে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ শিরোপা জেতা বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন এ নারী ফুটবলার। গত বুধবার জিতলেন টানা দ্বিতীয় শিরোপা। মনিকাদের এই সাফল্যে সারাদেশের মতো সুমন্ত পাড়ায়ও নামে উৎসবের জোয়ার। শিরোপা জেতার পর থেকেই এলাকাবাসী ছুটে আসেন মনিকার বাড়িতে।
মনিকা চাকমার বাবা বিন্দু কুমার চাকমা বলেন, একটা সময় চাইতাম না, মনিকা ফুটবল খেলুক। কিন্তু এখন মেয়ের সাফল্যে গর্বিত ও আনন্দিত। সে শুধু পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেনি, সারাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে। বাড়ি থেকে বের হলে সবাই এখন আমার পরিবারকে সম্মান করে। এর চেয়ে গর্বের আর কী হতে পারে!
মনিকার মা রবিমালা বলেন, বাংলাদেশ শিরোপা জেতায় খুব ভালো লাগছে। এ ম্যাচে আমার মেয়ে একটি গোলও করেছে। খেলায় জেতার পর পাড়াবাসীকে মিষ্টি খাইয়েছি। সবাই আমার মেয়ের জন্য প্রার্থনা করবেন।
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ছেনমং রাখাইন বলেন, মনিকার বেড়ে ওঠা মোটেও সহজ ছিল না। তবে ঠিকই ঐকান্তিক আগ্রহ ও কঠোর পরিশ্রমে আজ ম্যাজিক্যাল চাকমা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।