স্পোর্টস ডেস্ক রিপোর্ট:
ছয় মাস পর আজ (শুক্রবার) বাফুফের নির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল নারী ফুটবল লিগে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরশিপ। বাফুফের নির্বাহী কমিটি নারী লিগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ চার দলের কাউন্সিলরশিপ প্রদানের জন্য ২৯ জুন বার্ষিক সাধারণ সভায় উত্থাপন করবে। বার্ষিক সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাশ হলেই চারটি ক্লাব আসন্ন নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
তবে নির্বাচনের আগে নারী দলের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে আজ বাফুফে সভায় প্রচন্ড উত্তাপ ছড়িয়েছে। নির্বাহীর কমিটির একাধিক সদস্য নারী লিগে কাউন্সিলরশিপ প্রদানে চরম বিরোধিতা করেছেন। ভোটের আগে এই কাউন্সিলরশিপ প্রদান কেন? নাম সর্বস্ব দল–সহ নানা প্রশ্ন উঠেছিল বোর্ড সভায়। সদস্যদের এই বিরোধী যুক্তির বিপক্ষে আরেক সদস্য ও নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন ক্ষণে ক্ষণে। সভায় সভাপতিত্ব করছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, এরপরও অন্য সদস্যের মন্তব্যের সময় তার মন্তব্য প্রদানে অনেকেই নাখোশ হয়েছেন। এভাবেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক সদস্য চেয়ার থেকে ওঠে দাঁড়ান এবং টেবিল চাপড়ালে গরম হয়ে ওঠে পরিবেশ। তখন এর প্রতিবাদে আরও ২-৩ জন সদস্যও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। অন্যদের নমনীয় হস্তক্ষেপে পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
নানা যুক্তি-তর্কের পর চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স-আপ দু’টি দলকে কাউন্সিলরশিপ প্রদানের পক্ষেও মত দেন কয়েকজন। ২০২১ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া ও নারী ফুটবলে অগ্রযাত্রার জন্য বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন আরও একটু বেশি কাউন্সিলর করার ব্যাপারে ইচ্ছে প্রকাশ করেন বলে সভা সূত্রে জানা গেছে। তাই ২৯ জুন বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদনের জন্য চারটি ক্লাবের নাম উঠবে। বোর্ড সভায় চারটি কাউন্সিলরশিপের সুপারিশের সিদ্ধান্ত হলেও সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহী নোট অফ ডিসেন্ট (এই সিদ্ধান্ত মানি না) দিয়েছেন। চার সহ-সভাপতির মধ্যে ইমরুল হাসান অনুপস্থিত ছিলেন। নারী কাউন্সিলরশিপ আলোচনা শুরুর আগেই সভা ত্যাগ করেন কাজী নাবিল আহমেদ। সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী অনলাইনে কিছুক্ষণের জন্য যোগ দিয়েছিলেন।
সভা শেষে বাফুফের আরেক সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন। তাকেও কাউন্সিলরশিপ সুপারিশের বিষয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। বছর দুয়েক আগে ফিফা কাউন্সিলরশিপ কমাতে বলেছে– এমন সংবাদ বাফুফেই দিয়েছিল। এখন তারাই আবার কেন কাউন্সিলরশিপ বাড়াচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে মানিক বলেন, ‘আমরা আগের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কাউন্সিলরশিপ কমাব না। সেটা ফিফাকে জানিয়েছি। এবার নারী দলগুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে বোর্ডে সুপারিশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন বিষয়টি এজিএমে উঠবে।’
নারী লিগে বছরে মাত্র সাত-আটটি ম্যাচ খেলে একটি দল। এই দলগুলোর অনেকেরই অস্তিত্ব নেই। কিছু দল বাফুফে ভবনেই থাকে। অথচ পাইওনিয়ার, তৃতীয় ও দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে অনেক ক্লাব দীর্ঘদিন থেকে ফুটবল খেলে আসছে। কিন্তু সেখানে শীর্ষ কয়েকটি দল ছাড়া সবাই ভোটাধিকার পায় না। নারী লিগের চার ক্লাবকে কাউন্সিলরশিপ দিয়ে অন্যদের প্রতি বৈষম্য হয় কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে বাফুফে সহ-সভাপতি মানিক বলেন, ‘বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ফুটবলে লিগে যারা অংশগ্রহণ করে সবারই কাউন্সিলরশিপ পাওয়া উচিত।’
ফিফা-এএফসিতে বাংলাদেশসহ সকল দেশেরই একটি ভোট। নারী লিগে ভোটাধিকার থাকলে সামনে পুরুষ ফুটবলে অংশগ্রহণকারী দলগুলোও যদি নারী লিগে অংশগ্রহণ করে ভোটাধিকারের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, তখন এক ক্লাবের দুই ভোট থাকবে। এই প্রসঙ্গে বাফুফের সহ-সভাপতি বলেন, ‘আমরা এই বিষয়গুলো ফিফার সঙ্গে আলোচনা করব। ফিফার নির্দেশনা মোতাবেকই হবে।’
২৯ জুন বার্ষিক সাধারণ সভার দিনক্ষণ ঠিক হলেও ভেন্যু নির্ধারণ হয়নি। চলতি বছর বাফুফে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের দিনও একটি সাধারণ সভা করে। একই বছর দুই বার সাধারণ সভা নিয়ে সহ-সভাপতির ব্যাখ্যা, ‘২৯ জুন ২০২৩ সালের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় নির্বাচন ও অন্যান্য ব্যস্ততায় আমরা গত বছর সাধারণ সভা করতে পারিনি। নির্বাচনের দিন ২০২৪ সালের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।’
প্রতি বছর সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এটি আগে অনিয়মিত ছিল। কাজী সালাউদ্দিনের চতুর্থ মেয়াদে অবশ্য এজিএম করার একটা প্রবণতা ছিল। তবে ফুটবল ফেডারেশনেরই একাংশের ধারণা নারী কাউন্সিলরশিপ পাশের জন্যই এই এজিএম আয়োজনের তোড়জোড়।
ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি বাফুফে নির্বাচনে ভোটাধিকার চেয়েছিল। আজকের সভায় বিষয়টি উঠলেও বোর্ড এই সংস্থার কাউন্সিলরশিপ প্রদানে সম্মত হয়নি। টিএন্ডটি ক্লাবকে প্রথম বিভাগ লিগে খেলার অনুমতি এসেছে আজকের সভায়।