চাঁদপুরে অটোরিকশা চালক শিশু আরমান হত্যায় দুজন গ্রেপ্তার
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
চাঁদপুর প্রতিনিধি:
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে একটি অটোরিকশার জন্য শিশুচালক আরমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় নিহতের লাশ উদ্ধারের এক দিনের মধ্যে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে ঘাতকদের গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে তারা। উদ্ধার করা হয়েছে ছিনিয়ে নেওয়া অটোরিকশার সঙ্গে হত্যায় ব্যবহৃত আলামত।
সামান্য একটি অটোরিকশার জন্য জীবন দিতে হয় চালক ১৪ বছরের শিশু আরমানকে। এটি ছিল গত ৩০ অক্টোবরের ঘটনা। ঘটনার ১ সপ্তাহ পর হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ হতভাগা এই শিশুর অর্ধগলিত লাশ একটি বালুর স্তুপ থেকে উদ্ধার করে। তারপর হত্যার রহস্য উদঘাটনে ছায়া তদন্ত শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।
বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে খুঁজে পায় ঘাতকদের। গ্রেপ্তার করা হয় শুক্কুর আলম (৩৮) ও সবুজ (২৫) নামে দুই যুবককে।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভার মকিমাবাদ এলাকার আব্দুল মোতালেবের শিশু সন্তান আরমান। অটোরিকশা চালিয়ে ১৪ বছরের এই শিশু পরিবারের হাল ধরেছিল।
কিন্তু তা আর স্থায়ী হয়নি। বাবা আব্দুল মোতালেব জানান, গত ৩০ অক্টোবর সকালে বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হয় আরমান। একদিন পরও ছেলে ফিরে না আসায় থানায় হারানো মামলা করেন তিনি। এরই মধ্যে গত সোমবার বিকেলে হাজীগঞ্জ সদর উপজেলার দোয়ালিয়া পূর্বপাড়ের একটি বালুর স্তুপে আরমানের অর্ধগলিত লাশের সন্ধান মিলে। ছুটে যান সেখানে।
জুতা ও প্যান্ট দেখে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন আব্দুল মোতালেব।
এদিকে, থানা পুলিশের সঙ্গে ছায়া তদন্ত করতে ঘাতকদের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে পিবিআই। এক দিনের মাথায় ধরা পড়ে শুক্কুর আলম ও সবুজ নামে দুই যুবক। যারা এর এক মাস আগেও আরমানের অটোরিকশা ছিনিয়ে নিতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়। পরে জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো পুরনো ধারায় ফিরে যায়। এবার সড়কে পেয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে হত্যা করে লাশ বালুর স্তুরে লুকিয়ে রাখে। তারপর অটোরিকশা নিয়ে চলে যায়।
মামলা তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মীর আমিরুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন সূত্র ধরে গ্রেপ্তার করা হয় ঘাতকদের। কচুয়ার হোসেনপুর বাজার থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনিয়ে নেওয়া অটোরিক্শা এবং হত্যাকাণ্ডের পাশের ডোবা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত আলামত।
পিবিআই পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল রাশেদ জানান, ক্লুলেস এমন একটি হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতকরে দ্রুত সময় আটক। এটি পিবিআইয়ের জন্য একটি সফল অভিাযান ছিল।
অন্যদিকে, নিহত আরমানের বাবা আব্দুল মোতালেব এবং এলাকা এলাকাবাসী এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও ঘাতকদের শাস্তি দাবি করেছেন।
শিশু আরমান হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া শুক্কুর আলম ও সবুজ সম্পর্কে শালা-দুলাভাই। তাদের বাড়ি হাজীগঞ্জের বাড্ডা এবং কাঠালি এলাকায়। বুধবার দুপুরে চাঁদপুরের আদালতে হত্যা নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তারা। পরে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক মাস আগে হাজীগঞ্জ বাজার থেকে আরমানের অটোরিকশা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল এই দুজন। কিন্তু আশপাশের জনতা তা দেখে ফেলায় ধরা পড়ে তারা। পরে গণপিটুনি নিয়ে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ২৫ দিন জেল খাটে শুক্কুর আলম ও সবুজ। তারপর প্রতিশোধ নিতে গত ৩০ অক্টোবর সুযোগ বুঝে যাত্রীবেশে অটোরিক্শাসহ আরমানকে তুলে নিয়ে যায় তারা।