চাহিদা অনুযায়ী আলুবীজ পাচ্ছেন না রংপুরের কৃষকরা

প্রকাশিত: ৪:১০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০২৪

রংপুর প্রতিনিধি:

রংপুর অঞ্চলে আলু রোপণের শুরুতেই আলু বীজের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর আলুর উৎপাদন বাড়লেও এ অঞ্চলে আলুবীজের বরাদ্দ কমাচ্ছে সরকারি বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলায় আলু চাষের জমি প্রায় ৯ হাজার ২০২ হেক্টর বাড়লেও ছয় বছরে বীজের বরাদ্দ কমেছে প্রায় ১ হাজার ৪২৮ দশমিক ৭৫৯ টন।
বিএডিসি রংপুর অঞ্চলের (বীজ বিপণন) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বিতরণ বর্ষে আলুবীজের মোট বরাদ্দ ২ হাজার ৭৯৭ দশমিক ৩২ টন। এর মধ্যে নিবন্ধিত ডিলারদের জন্য বরাদ্দ ২ হাজার ২৬১ দশমিক ৬০০ টন, আগাম আলু চাষের জন্য ২৮২ দশমিক ৫৬০ এবং কৃষক ও বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ ২৫২ দশমিক ৮৭২ টন। চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ২ হাজার ২৬১ দশমিক ৬০০ টন বীজ ৮১৮ জন নিবন্ধিত ডিলারের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রংপুর জেলায় বিতরণ করা হচ্ছে ৬৭৭ দশমিক ৬০০ টন, গাইবান্ধায় ৪৪০ দশমিক ৮৮০, লালমনিরহাটে ৩৪৩ দশমিক ২০০, নীলফামারীতে ৪০৩ দশমিক ৯২০ ও কুড়িগ্রামে ৩৯৬ টন।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে ১ লাখ ৬০৩ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল। এবার চাষের জমি আরও বেড়েছে। চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আলুবীজের সম্ভাব্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার টন। অন্য প্রতিষ্ঠানের আলুবীজ থাকলেও বিএডিসির বীজ মানসম্পন্ন বলে এর চাহিদাও সবসময় বেশি থাকে। এরপরও বীজ উৎপাদন না বেড়ে বরং প্রতি বছর কমছে। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বিরাহীম আইএপিপি কৃষক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোকছেদুল ইসলাম জানান, সারা বাংলা কৃষক সোসাইটির অর্থায়নে ২০১২ সালে তাদের সমিতির কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে ২৫ জন সদস্য ছিলেন। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ১৪৫। প্রতি বছর প্রায় ২‘শ একর জমিতে আলু চাষ করেন। তাদের উৎপাদিত আলু এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে। ২০১৯ সালে তাদের স্বর্ণ সময় ছিল। সে সময় প্রায় দুই হাজার টন আলু রপ্তানি হয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া, ব্ররুনাই, ভিয়েতনাম। মানসম্মত ও কাঙ্ক্ষিত বীজ না পাওয়ায় তারা চাহিদা মতো আলু রপ্তানি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
আলুচাষী মোকছেদুল ইসলাম বলেন, প্রতি একরে বীজের প্রয়োজন প্রায় ৮০০ কেজি। বিএডিসির বরাদ্দ কম থাকায় প্রয়োজনীয় বীজ সহজে পাচ্ছি না আমরা।

রংপুরের বিএডিসির কয়েকজন ডিলারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ মৌসুমে বিএডিসির আলুবীজের ভালো চাহিদা দেখা যাচ্ছে। তবে সে অন্যুায়ী বীজের বরাদ্দ প্রত্যাশিত নয়। মানসম্পন্ন বীজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে যেমন-তেমন বীজ বপন করে সর্বস্বান্ত হতে পারেন অনেক কৃষক। আলুবীজ এ গ্রেডের এস্টারিক্স প্রতি কেজি ৬৬ টাকা এবং অন্য জাত ৬৪ টাকা। বি গ্রেড প্রতি কেজি ৬৩ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি বড় সাইজের আলু ৬০ টাকা বলে জানান।

বিএডিসি (বীজ বিপণন) রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. মাসুদ সুলতান বলেন, আলুবীজের বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা অফিসে। আমরা শুধু তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি। প্রায় ৩ হাজার ২০০ টন আলু বীজের চাহিদার জন্য আবেদন করেছিলাম। চলতি বছর ডিলার, কৃষকসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিএডিসির আলুবীজের ভালো চাহিদা রয়েছে। বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে বীজ বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে গত বছরের বীজ বিক্রির গতিধারা আমলে নেওয়া হয়। গত মৌসুমে বীজের দাম বেশি ছিল বলে জানিয়েছিলেন ডিলাররা। আগাম রোপণের জন্য আলুবীজ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া উপযুক্ত ও সাধারণ মৌসুমের আলুবীজ উত্তোলন ও বিতরণ দুটি ধাপে সম্পন্ন হওয়ার চূড়ান্ত সময় ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে।