জঙ্গিবাদে জড়িয়ে বাড়িছাড়া: অবশেষে মায়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজ আত্মসমর্পণ করছে ‘রাইয়ান’

প্রকাশিত: ৩:৪৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৯, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কিশোর আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ানের (১৬) বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। আল-আমিন নামে একজন ছিলেন তার গৃহশিক্ষক। ২০২২ সালের মার্চে গৃহশিক্ষকের কথায় জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়িছাড়ে রাইয়ান। নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়’ উদ্বুদ্ধ করে তাকে প্রশিক্ষণের জন্য তথাকথিত হিজরত করান আল-আমিন। গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তার নির্দেশনায় পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য রনি মিয়া নামে একজন রাইয়ানকে বান্দরবানে দিয়ে যান। এরপর আর বাড়ি ফেরেনি রাইয়ান।

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে মায়ের আকুতিতে মন গলেছে আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ানের। মায়ের আত্মসমর্পণের পর এবার র‌্যাবের হাতে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে ছেলে। রাইয়ানের সঙ্গে আত্মসমর্পণ করবেন নতুন জঙ্গি সংগঠনের আরও তিন সদস্য। তারা হলেন- মো. হাসান সাইদ, শেখ আহমেদ মামুন ও মোহাম্মদ ইয়াসিন। আজ বুধবার (৮ আগস্ট) এই চারজন আনুষ্ঠানিকভাবে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণের কথা রয়েছে।

জানা গেছে, আবু বক্করের বয়স ১৬ বছর। তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে আবু বক্কর ও তার মা এমিলি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। আত্মসমর্পণ করা তিন জঙ্গির মধ্যে একজন হাসান সাইদ। তিনি একটি মাদরাসায় দাওরা হাদিস শেষ করেছেন। আর শেখ আহমেদ মামুন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন। সাইদ তাকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে। আর ইয়ামিন একটি ঘড়ির দোকানে মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন। ২০২১ সালে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ অংশ নিতে গিয়ে ভুল বুঝতে পারেন।

এদিকে গত ৫ নভেম্বর রাইয়ানের মা আম্বিয়া সুলতানা ওরফে এমিলিকে উদ্ধার করে র‌্যাব। পরে চারদিন পরিবারের সান্নিধ্যে রেখে ডি-রেডিক্যালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে ৯ নভেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার পর ছেলে আবু বক্কর রিয়াসাদ রাইয়ানকে জঙ্গিবাদের পথে ঠেলে দেন মা আম্বিয়া সুলতানা এমিলি। তিনি আট মাস পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানান। এরপরই গতকাল মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) আবু বক্কর র‌্যাব-১১ ব্যাটালিয়নে আমাদের সঙ্গে যোগযোগ করে। আমরা তার সবধরনের আইনি সহায়তা দেবো।

মঈন আরও বলেন, গত বছরের অক্টোবরে নতুন জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অভিযানে এখন পর্যন্ত ৭৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান মাহমুদ, সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও উপ-প্রধান মানিক, অর্থ ও গণমাধ্যমে শাখার প্রধান রাকিব রয়েছেন। এছাড়া পাহাড়ি বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠন কেএনএফের ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। জঙ্গি সংগঠনটিকে অর্থের বিনিময়ে পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল কেএনএফ।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময়ে নিরুদ্দেশ তরুণদের বিষয়ে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা নজরদারি করতে গিয়ে তথ্য পায়, নারায়ণগঞ্জ থেকে আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান নামক এক কিশোর গতবছরের মার্চ মাসে নিরুদ্দেশ হয়। তার পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় একটি জিডি করে। র‌্যাবের প্রকাশিত নিরুদ্দেশ হওয়া ৫৫ জনের তালিকায় আবু বক্করের নাম ছিল। গত ৩ নভেম্বর অভিযানে র‌্যাব সংগঠনের মহিলা শাখা সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় এবং জানতে পারে, একজন মা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়া তার সন্তানকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতের নামে পাঠিয়েছেন। র‌্যাব এসব তথ্য বিশ্লেষণ ও নজরদারির মাধ্যমে নিজ সন্তানকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতের নামে পাঠানোয় জড়িত আম্বিয়া সুলতানা ওরফে এমিলিকে গত ৫ নভেম্বর উদ্ধার করে এবং ডি-রেডিক্যালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া করে।