অস্টিওপোরোসিস কী, কাদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি?

প্রকাশিত: ১:৩৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২৪

 

লাইফস্টাইল ডেস্ক:
অস্টিওপোরোসিসের সমস্যায় কমবেশি অনেকেই ভোগেন। মূলত হাড়ের খনিজ ঘনত্ব কমে যাওয়ার সমস্যাকে অস্টিওপোরোসিস বলা হয়। এক্ষেত্রে হাড়গুলো ভঙ্গুর হয়ে যায়। ফলে ফ্র্যাকচারের প্রবণতা বাড়ে। যদিও নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই এই রোগ দেখা দেয়।

যদিও হরমোনের পরিবর্তনের কারণে সাধারণত পোস্টমেনোপজাল নারীরা এ সমস্যায় বেশি ভোগেন, তবে পুরুষদের মধ্যে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বেশি। কারণ বেশিরভাগ পুরুষই অস্টিওপরোসিস সম্পর্কে অবগত নন, ফলে এই রোগের দ্রুত চিকিৎসা না করায় পরবর্তী সময়ে গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতার সম্মুখীন হন।

অস্টিওপোরোসিসের লক্ষণ কী কী?
অস্টিওপোরোসিসকে একটি ‘নীরব’ রোগ বলা হয়, কারণ এটি সাধারণত ফ্র্যাকচার না হওয়া পর্যন্ত স্পষ্ট লক্ষণ ছাড়াই বাড়তে শুরু করে। যেসব লক্ষণ দেখা দেয়-

>> পিঠে ব্যথা
>> প্রায়শই ফ্র্যাকচার বা ভেঙ্গে যাওয়া কশেরুকার কারণে
>> সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চতা কমে যাওয়া
>> নড়াচড়ায় অসুবিধা
>> হঠাৎ ফ্র্যাকচার ইত্যাদি

পুরুষদের অস্টিওপোরোসিসের কারণ কী কী?
জীবনযাত্রার অভ্যাস

ভুল জীবনধারায় এ রোগের ঝুঁকি বাড়ে। যেমন- ধূমপান, অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন, অপর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ ইত্যাদি। এছাড়া শারীরিক কার্যকলাপের অভাবও উল্লেখযোগ্যভাবে হাড়কে প্রভাবিত করতে পারে।

কম টেস্টোস্টেরন

হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে টেস্টোস্টেরন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুরুষদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। ফলে দুর্বল হাড় অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।

রোগের কারণে

কিছু দীর্ঘমেয়াদী রোগে যেমন- ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হাড়ের ঘনত্বকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই অবস্থায় যেসব ওষুধের প্রয়োজন হয়, সেগুলো নিয়মিত সেবনে হাড় আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

ওষুধের ব্যবহার

নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের দীর্ঘায়িত ব্যবহার, যেমন- গ্লুকোকোর্টিকয়েডস (হাঁপানি বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত) হাড়ের ক্ষয় ও ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

বয়স বাড়লে

বয়স বাড়লে হাড়ের ঘনত্ব স্বাভাবিকভাবেই কমতে শুরু করে। ফলে বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

বংশগত

আবার পরিবারে কারও অস্টিওপরোসিস থাকলে আপনারও এ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। বংশগত কারণেও অনেকেই এই রোগের ভোগেন।

অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসা কী?
ডায়েট

হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাদ্য বা পরিপূরকের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করুন। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (দুগ্ধজাত দ্রব্য, শাকসবজি) ও ভিটামিন ডি (চর্বিযুক্ত মাছ, দুর্গযুক্ত খাবার) অন্তর্ভুক্ত করুন।

ব্যায়াম

হাড় ও পেশী মজবুত করার জন্য নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন। ওজন বহন ও পেশী-শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে ও উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

ধূমপান এড়িয়ে চলুন ও অ্যালকোহল সীমিত করুন
ধূমপান ক্যালসিয়াম শোষণকে ব্যাহত করতে পারে ও হাড়ের ক্ষয় বাড়াতে পারে। মাঝারি মাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণও সীমিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।

ওষুধ

বেশ কিছু ওষুধ হাড়ের ক্ষয় কমিয়ে বা হাড় গঠনকে উদ্দীপিত করে অস্টিওপরোসিস পরিচালনা করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকতে পারে- বিসফসফোনেটস, টেস্টোস্টেরন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (যদি কম টেস্টোস্টেরন একটি ফ্যাক্টর হয়), ইস্ট্রোজেন অ্যাগোনিস্ট/প্রতিপক্ষ, ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন ক্যালসিটোনিন পিটিএইচ ও হাড়-সংরক্ষণকারী ওষুধ।

নিয়মিত স্ক্রীনিং

যেসব পুরুষের মধ্যে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বেশি, তাদের উচিত হাড়ের ঘনত্বের স্ক্রিনিং করানো ও চিকিৎসকের সপরামর্শ নেওয়া। প্রাথমিক শনাক্তকরণের পর সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ক্ষতি কমানো সম্ভব।
এক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি ও তার তত্ত্বাবধায়নে থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

আজ বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস। প্রতিবছর ২০ অক্টোবর পালিত হয় দিবসটি। যুক্তরাজ্যে বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস শুরু হয়। ইউরোপীয় কমিশনের সমর্থনে, বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস ১৯৯৬ সালের ২০ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের জাতীয় অস্টিওপোরোসিস সোসাইটির একটি প্রকল্পে পরিণত হয়। এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই বিশ্বজুড়ে পালিত হয় দিবসটি।