জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে বিশেষ কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

প্রকাশিত: ৮:৩৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেন:
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে বিশেষ কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে। আজ রোববার (৮ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্র্যাব) আয়োজিত ‘উগ্রবাদ প্রতিরোধে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ক্র্যাব সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান পুলিশের একটি নিয়মিত কার্যক্রম। বিশেষ বিশেষ সময়ে অস্ত্র উদ্ধারের বিরুদ্ধে অভিযান জোরালো করা হয়। আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে বিশেষ কার্যক্রম নেওয়া হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জঙ্গিদের বিভিন্ন গ্রুপ থাকতে পারে। তবে জঙ্গিরা নির্বাচন নস্যাৎ করতে চাইলে তাদের প্রতিহত করা হবে। বাংলাদেশ পুলিশের সে সক্ষমতা রয়েছে।
ডিএমপি প্রধান বলেন, দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের যে উত্থান ঘটেছে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে সমাজ থেকে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ত্রিমুখী ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রথমতঃ নিজেকে আলোকিত করতে হবে দ্বিতীয়তঃ পরিবারকে আলোকিত করতে হবে এবং তৃতীয়তঃ সমাজকে আলোকিত করতে হবে। তবেই আমাদের এই দেশ ও সমাজ আলোকিত হবে। এভাবেই আমরা জঙ্গিবাদ নির্মূলে সামনে এগিয়ে যেতে পারবো।
অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান জাতির কাউকেই ভিন্ন চোখে দেখেননি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীনের জন্য এক হয়ে কাজ করার উৎসাহ দিয়েছেন, সাহস যুগিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শের কারণে আজ আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে জনগণকে সাথে নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার হাত ধরেই আজ বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ আদায়ে হীন অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সেদিকে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) রয়েছে বলে জনগণ স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলতে পারছে। বিশ্বের বড় বড় দেশের চেয়েও জঙ্গিবাদ দমনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অবস্থান ভালো।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা আলোকিত সমাজ গড়ার কারিগর। উগ্রবাদের বিষয়ে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনন্য হবে। সমাজে উগ্রবাদ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। একটি ইতিবাচক দিক তৈরি করে দেওয়ার জন্য উগ্রবাদ প্রতিরোধে সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক এই কর্মশালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গিবাদ বাংলাদেশের জন্য নতুন বিষয় নয়। ১৯৯২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উগ্রবাদের যাত্রা শুরু হয়। সেটা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাত্রা দেয়। জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। হলি আর্টিজান হামলার সময় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তখন সাংবাদিকদের লেখনির মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। সাংবাদিকদের মাধ্যমে সুচিন্তিত মতামত নিয়ে পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে থাকে সিটিটিসি। শুধুমাত্র হার্ড অ্যাপ্রোচ নয়, সফট অ্যাপ্রোচের মাধ্যমেও জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করছে সিটিটিসি।
তিনি আরও বলেন, দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ মোকাবিলায় ও জাঙ্গিবাদ দমনে নিত্য নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করছে সিটিটিসি। জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই দেশের ৫৬টি জেলায় পর্যায়ক্রমে নানান শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা-সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছে সিটিটিসি।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদ, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে জড়িত হয়ে যারা ইতোমধ্যেই ধরা পড়ে আইনের মুখোমুখি হয়েছেন, তাদের অনেকেই এখন নিজের ভুল স্বীকার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন। তাদের অনেকেই আবার এসব অপকর্মরোধে সিটিটিসিকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। আমরাও তাদের সেই মতামত নিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূলে প্রতিনিয়ত কাজ করছি।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদ মোকাবিলায় ও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে সিটিটিসিসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে কাজ করছে, তাতে বিশ্বের অনেক দেশই প্রশংসা করছে। তারা বলছে, ধর্মীয় উগ্রবাদ মোকাবিলাসহ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে নিরাপদ দেশ।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- সিটিটিসির যুগ্ম কমিশনার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান, উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হাবীবুন নবী আনিছুর রশিদ, ক্র্যাব সাধারণ সম্পাদক মামুনূর রশীদ, সিনিয়র সাংবাদিক জুলফিকার আলী মাণিক ও ক্র্যাবের প্রশিক্ষণ ও তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ইমু প্রমুখ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন, সিটিটিসির এসি নাজমুল, এসি সুজানাসহ পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।
অনুষ্ঠান শেষে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সিটিটিসি’র প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেট তুলে দেন ডিএমপি কমিশনার অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান।