জাতীয় পার্টির সমাবেশে চুপ থাকলেন জি এম কাদের

প্রকাশিত: ৮:১৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০২৩

দলের পদপদবী নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সেসব দ্বন্দ্ব বা মান-অভিমান ভুলে দলকে একতাবদ্ধ রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করলেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ।

আজ রোববার জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ বক্তব্য দেন।

রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে অস্থায়ী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দলের শীর্ষ নেতারা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তিনি মঞ্চে আসেন। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের পাশের আসনেই বসেন তিনি। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সভায় উপস্থিত থেকেও নির্বাক ছিলেন। যে কারণে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন।

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সালমা ইসলাম, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। অতিরিক্ত মহাসচিবদের মধ্যে মঞ্চে রয়েছেন ফখরুল ইমাম, সাহিদুর রহমান টেপা, রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া৷ প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মীর আব্দুস সবুর আসুদ, আলমগীর সিকদার লোটন, আ টি ইউ তাজ রহমান, নাজমা আখতার, রওশন আরা মান্নান, সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন, জহিরুল ইসলাম রুবেল, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আসিফ শাহরিয়ারসহ আরও অনেকে।

হুসেইন মুহম্মদ এশাদের প্রয়াণের পর এক মঞ্চে বসতে দেখা যায়নি রওশন কাদেরকে।প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পোস্টারেও বহু দিন পর জি এম কাদেরের সঙ্গে রওশন এরশাদের ছবিও দেখা গেছে এদিন। নব্বইয়ের দশকে সামরিক শাসনের গর্ভগৃহ থেকে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির আজ ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

রওশন এরশাদ বলেন, ‘আমাদের চলার পথে মান অভিমান থাকবেই। কিন্তু দলের স্বার্থে সব ব্যক্তিগত স্বার্থ ভুলে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে জাতীয় পার্টি একটা পরিবার, দলের প্রতিটি নেতাকর্মী সেই পরিবারের সদস্য।’

এসময় দলের যেকোনো সংকট, সমস্যা জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে বলে জানান রওশন এরশাদ।

জাতীয় পার্টি সংবিধান মোতাবেক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, ‘এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে হবে, তৃণমূলেও জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করলে মান অভিমান কমে যাবে। আমরা যদি মিলেমিশে থাকি, ঐক্যবদ্ধ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তাহলে জাতীয় পার্টি অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন কর্তব্য হলো, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করা। জাতীয় পার্টি অগ্নিসন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। জাতীয় পার্টি বিশ্বাস করে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রে।’

সভা শুরু হওয়ার আগে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নানা অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি স্মরণ করেন জাপার রাজনৈতিক আন্দোলনে হতাহত নেতাকর্মীদের। সম্প্রতি রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাঙ্গলের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমানের বিজয়ে জাপার নেতাকর্মীদের অবদানের কথাও তিনি প্রারম্ভিক বক্তব্যে তুলে ধরেন।

দলের বহিস্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধার দিকে ইঙ্গিত করে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘যে মামলাবাজের কারণে জি এম কাদের আজকে উপস্থিত থেকেও কথা বলতে পারেননি, তার স্থান জাতীয় পার্টিতে কখনও হবে না।’

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি কখনো কোনো দলের লেজুড় হবে না। জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করে আমরা জাতীয় পার্টিকে আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসাবে তৈরি করব। আজকে অনেকে বলেন জাতীয় পার্টিতে ঐক্য নেই। আজকে এই মঞ্চে দেখুন, জাতীয় পার্টির সব নেতা আছেন। এটা ঐক্য নয়তো কি? ’

কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘অনেক চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে জাতীয় পার্টি আজ ৩৮ বছরে। অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, আগামীতেও ষড়যন্ত্র হতে পারে। তবে জাতীয় পার্টি রওশন এরশাদ, জি এম কাদেরকে নেতৃত্বে সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকব।’

দলে বিভক্তির প্রয়াসে লিপ্ত নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘নির্বাচন এলে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়। বলতে চাই, জাতীয় পার্টিকে কোনো ছিনিমিনি খেলবেন না। দলের ভেতরে থেকেও কেউ ভাঙা গড়ার রাজনীতি করবেন না।’