মো. সাইফুল ইসলাম:
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তুলেছে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির কারখানা। ওইসব কারখানায় অবৈধভাবে তৈরি করা এসব জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি নানা কৌশলে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। এরপর তা অবাধে বিক্রি করে বিপুল সংখ্যক অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলো সংঘবদ্ধ একটি প্রতারকচক্র। ওই চক্রের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ জন। এভাবে তারা প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিলেও কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাতো সরকার। জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করে চক্রটি রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। এমনই একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। প্রায় দুই বছর যাবত ঢাকার আশুলিয়ার বলিভদ্র এলাকায় অবৈধভাবে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি তৈরি করে তা নির্বিঘেœ বিক্রি করতো চক্রটি। দেশের বিভিন্ন স্থানে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলো চক্রটি। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে তারা সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে দাবি করেছে র্যাব। এমন অভিযোগে মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাতে ঢাকার আশুলিয়া ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি তৈরি এবং সরবরাহে জড়িত থাকার অপরাধে নারীসহ ১০জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব-৪ দাবি করেছে, গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি চক্রের ‘অন্যতম হোতা’ সোহেল কাজীসহ তার সঙ্গীরা রয়েছে। এসময় ২২ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, এসব স্ট্যাম্প তৈরির মেশিন ও বিপুল পরিমাণ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করার তথ্য জানায় র্যাব। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি চক্রের অন্যতম হোতা মো. সোহেল কাজী, মো. জাহাঙ্গীর আলম ওরুফে জাহিদ (৪০), সোহেল রানা (৩৫), মো. সাব্বির হোসেন (২২), মোছা. সাবিনা ইয়াছমিন (৩০), শাহনাজ আক্তার (৩১), কামরুল হাসান (২৬), মো. সুমন (২২), বিল্টু (১৯) ও মো. সেন্টু মিয়া (২৫)। আজ বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমন্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, এক শ্রেণির প্রতারকচক্র দীর্ঘদিন যাবত আশুলিয়া বলিভদ্র এলাকায় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি তৈরি করে সাধারণ মানেুষের কাছে বিক্রি করে আসছে। এই প্রতারণার মাধ্যমে সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে তারা। পরে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে র্যাব সদর দফতর গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-৪ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে বলেও জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, চক্রটি মূলত সোহেল কাজীর মাধ্যমে পরিচালিত হতো। অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি ও বিক্রিতে অন্যান্যরা সোহেল কাজীর সহযোগী হিসেবে কাজ করত। গ্রেফতারকৃত সোহেল কাজী এর আগে বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেসে চাকরি করতো। সেখান থেকে সে বিভিন্ন রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির কাজ রপ্ত করে। অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প চিহ্নিতকরণ সহজ না হওয়ায় এবং অধিক মুনাফা লাভের আশায় সে নিজ ব্যবস্থাপনায় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি ও বিক্রির পরিকল্পনা করে।
প্রথমে আশুলিয়ায় ‘কনফিডেন্স প্রিন্টিং’ প্রেসে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ছাপানোর কাজ শুরু করে। সেখানে এই কাজে নিয়োজিত ছিল গ্রেফতারকৃত সাব্বির, সুমন, কামরুল সেন্টু ও বিল্টু। ছাপানোর পর পারফেক্ট মেশিনের মাধ্যমে এই জাল রেভিনিউ স্টাম্প কাটিং ও ছিদ্র করা হতো। পরে জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে কোর্ট ফি ও অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হতো।
র্যাব জানায়, বিভিন্ন সময় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করার সুবাদে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করতে পারে এমন অনেক ব্যক্তির পরিচয় হয় এবং তারা সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে। এভাবে তারা ১০-১৫ জনের একটি চক্র গড়ে তুলে। এছাড়াও তার সঙ্গে বিভিন্ন অনুমোদিত ভেন্ডরদের সু-সম্পর্ক থাকায় সে তাদের কাছে কমমূল্যে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সরবরাহ করত।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা বেশ কয়েক জন ভ্যানডরের নাম জানতে পেরেছি। এই ভ্যানডরদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, কোনটা আসল আর কোনটা জাল স্ট্যাম্প তা নির্ণয় করা কঠিন। আরেক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, চক্রটি প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ রিম কাগজ প্রিন্ট করত অবৈধ স্টাম্প তৈরিতে। ২ থেকে ৫০০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন রকম স্টাম্প তৈরি করতো। আমরা তাদের কাছে ৫০০ টাকা মূল্যের ৮ কোটি টাকার নকল স্টাম্প পেয়েছি। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।