টাকার সংকটে সরকার: কর ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল বাজেট ব্যবস্থাপনা

প্রকাশিত: ১২:৩৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২৫

সেলিনা আক্তার:

 

বাজেট ঘাটতি মেটাতে বিকল্প উপায়ে অর্থের জোগান খুঁজছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। এই উদ্যোগে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাইকে অতিরিক্ত ভ্যাট দিতে হবে।

এছাড়া, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বাড়িয়ে জনগণকে এই খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার চেষ্টা চলছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করাই সরকারের উদ্দেশ্য। তবে ব্যাংক খাতের দুর্বল পরিস্থিতি এবং বিদেশি সহায়তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না পাওয়ায় অর্থের সংকট এখনও প্রকট।

সরকারি ব্যয় গত কয়েক বছরে বহুগুণ বেড়েছে। বেতন-ভাতা, ঋণের সুদ পরিশোধ, এবং মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত খরচ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেট ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা হলেও পরিচালন ব্যয়েই এর সিংহভাগ ব্যয় হচ্ছে।

অন্যদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রথম পাঁচ মাসে ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতিতে রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না, যা বাজেট বাস্তবায়নে বড় প্রতিবন্ধকতা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে সরকার ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে টিস্যু পেপার, মিষ্টি, ওষুধ, এলপি গ্যাস, এবং মুঠোফোন সেবার মতো পণ্যের দাম বেড়েছে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন ভ্যাট ব্যবস্থায় বাজেটের বাকি ছয় মাসে অতিরিক্ত ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা করা হচ্ছে। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন যে এই পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ আরও বাড়িয়ে দেবে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় মুনাফার হার ১২ দশমিক ২৫ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সরকার বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ১৭০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে। তবে এ পর্যন্ত মাত্র ৬০ কোটি ডলার পাওয়া গেছে।

সরকার পরিচালন ব্যয় কমাতে না পারায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বাজেট কাটছাঁট করা হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেছেন, বাজেটে অর্থের সংকট কাটাতে দাতাদের কাছ থেকে দ্রুত সহায়তা ছাড় করানো প্রয়োজন। পাশাপাশি সরকারি ব্যয়ের অপচয় বন্ধ এবং পরিচালন খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

সরকারের চলমান টাকার সংকট অর্থনীতির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, বিদেশি ঋণ শোধের বোঝা, এবং মূল্যস্ফীতিজনিত ব্যয়ের চাপ সামাল দিতে সরকার কর বৃদ্ধি ও ঋণের ওপর নির্ভর করছে। তবে এসব পদক্ষেপে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।