ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন: আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৬:১৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে বিবৃতি-সংক্রান্ত বক্তব্য দিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নেওয়ার পর বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ডিএজি (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল)। তিনি যদি সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন, তাহলে তাকে হয় পদত্যাগ করে কথা বলা উচিত অথবা অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি নিয়ে কথা বলা উচিত। তিনি সেটি করেননি। তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।
সাংবাদিকরা জানতে চান, তাহলে এখন কী হবে? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টি আমি দেখবো।
এর আগে সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। এমরান বলেন, ড. ইউনূসের সম্মানহানি করা হচ্ছে বলে মনে করছি। আমি মনে করি, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার সম্মানহানি করা হচ্ছে এবং এটি বিচারিক হয়রানি।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ড. ইউনূসের পক্ষে নোবেলজয়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেকেই বিবৃতি দিয়েছেন-যে ওনাকে (ড. ইউনূস) বিচারিক হয়রানি না করা হয়।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ ১৬০ বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া খোলাচিঠির পক্ষে অবস্থান নেন এমরান আহমেদ ভূঁইয়া। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তাতে তিনি সই করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
এ বিষয়ে গতকাল সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের এমরান বলেন, রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্র“পে জানানো হয়। যেখানে সোমবার বিকেল ৪টার মধ্যে বিবৃতি সই করার কথা বলা হয়। তবে, আমি ব্যক্তিগতভাবে সই করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি সই করার সঙ্গে একমত নই।
তিনি বলেন, আমি মনে করি ড. ইউনূসের বিষয়ে যে বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে সেটির প্রয়োজন নেই। ওনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো চলছে তা অন্যভাবে ডিল করা যেতো। এটা ওনাকে চাপে রাখার জন্যই করা হচ্ছে বলে মনে হয়েছে। উনি বাংলাদেশের জন্যই যে শুধু সম্মান বয়ে এনেছেন তা কিন্তু নয়, উনি সারা বিশ্বের সম্পদ।
সম্প্রতি বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনসহ বিশ্বের ১৬০ জন সুপরিচিত ব্যক্তি ও নেতা অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলাচিঠি দিয়েছেন। ১০০ জনের বেশি নোবেলজয়ীর দেওয়া ওই চিঠিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিচারকাজ স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহবান জানানো হয়। সেই সঙ্গে ওই চিঠিতে বিগত দুটি নির্বাচনের বৈধতার সংকট ছিল জানিয়ে সামনের নির্বাচনের দিকে নজর রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে, এ চিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে গত কয়েকদিনে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীসহ দেশের ৫০ জন সম্পাদক।


পরে আজ মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের প্রধান হচ্ছেন অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল যদি কোনো বক্তব্য দিতে চান, যদি কোনো বক্তব্য তার দেওয়া প্রয়োজন মনে করেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি নিয়ে তাকে সেই বক্তব্য দিতে হবে।
তিনি বলেন, এটা (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমদ ভূঁইয়ার কাজ) কিন্তু বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে। আমার মনে হয় তিনি শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেছেন। তার মতামত দিতে তিনি স্বাধীন কিন্তু যখন তিনি কোনো দায়িত্ব পালন করেন সেই দায়িত্বে থাকাকালীন অফিসের সাথে তার যদি দ্বিমত হয়, এক্ষেত্রে প্রথমে তার পদত্যাগ করা উচিত। পদত্যাগ করে তার মতামত দেওয়া উচিত। কিন্তু তিনি সেটাও করেননি। তিনি শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আপনারা বিষয়টি পরে দেখবেন ও জানবেন।