ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে মানববন্ধন, জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা সভা স্থগিত

প্রকাশিত: ২:৩৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১’-এর উপর ‘আমরা কেন উদ্বিগ্ন’ শীর্ষক আলোচনা সভা করতে চেয়েছিল শিক্ষক নেটওয়ার্ক। আলোচনা সভার জন্য হল বরাদ্দ দিয়েও তাতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন আয়োজকরা। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসময় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই কালো কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে রেখেছিলেন। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা সভার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনের অডিটোরিয়ামটি আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুরুর আধা ঘন্টা আগে আমাকে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির ফোন দেন। তিনি বলেন, এই ভেন্যুতে আমাদের দেওয়া বুকিং ক্যান্সেল করা হয়েছে। আমরা যেন প্রোগ্রামটি না করি। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ তিনি আমাকে বলেননি। তবে বলেছেন, এক জায়গা থেকে তিনি ফোন পেয়েছেন। সে জায়গা থেকে নাকি বলা হয়েছে, আমাদের যেন স্পেসটি ব্যবহার করতে না দেন। এরপর তিনি আমাকে বলেন, যেহেতু ফোন এসেছে, সেহেতু ঝামেলা হতে পারে। আপনাদের অনুরোধ করবো, আপনারা যেন প্রোগ্রাম না করেন। তিনি বলেন, দেশে আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাটুকুও হরণ করা হচ্ছে। ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে যে, সেই ১৪ ডিসেম্বরের মতো ঘটনার দিকে যাচ্ছি কি না। যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বৈরাচারী সরকারকে হটাতেও ভূমিকা পালন করেছে, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ এতটা বাজে পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, রাষ্ট্র নতুন একটা শিক্ষাক্রম চালু করছে। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করবো, নিজেদের মত প্রকাশ করবো, এরকম একটা নিরীহ প্রোগ্রামকে যে সরকার, যে প্রশাসন বা যারা সহ্য করতে পারে না, যারা মেনে নিতে পারে না, তারা দেশের ভালো চায়, দেশের মানুষের মঙ্গল চায়, এটা আমি কী করে ভাববো? আমরা আজকের এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। দেশে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখবেন কেউ ফটোকপি পড়ে, মূল বই খোলে না। এর কারণ হলো, শিক্ষকরা ব্যস্ত লেখাপড়া বাদে বাকি সব কাজে। কর্তৃপক্ষ কম বেতন দেওয়ার কারণে আমাদের দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ায়, কোচিং করায়। পৃথিবীর কোনো একটা দেশ আপনি পাবেন না যে দেশের কারিকুলাম একবারেই শতভাগ পরিবর্তন করে ফেলে। কারণ, লাখ লাখ ছেলে-মেয়ের উপর এর ইম্প্যাক্ট পড়ে। এজন্য লাখ লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি এরকম ঝুঁকি নিতে পারেন না। এ কারণেই সব দেশেই একটু একটু করে পরিবর্তনের মাধ্যমে এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হয়, কিন্তু আপনারা তা করছেন না। ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি সরকার নতুন শিক্ষাক্রমের নামে যে একটি ব্যবস্থা চাপিয়ে দিচ্ছে, সেটি পর্যালোচনা করাই ছিল আমাদের আলোচনা সভার মূল উদ্দেশ্য। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এ শিক্ষাক্রমের সফলতা বা ব্যর্থতার দিক, ভালো বা মন্দ উভয় দিকেরই পর্যালোচনা বা মতামত গ্রহণ ছিল আমাদের আলোচনা সবার উদ্দেশ্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই পর্যালোচনাটি আমাদের করতে দেওয়া হলো না। আলোচনা অনুষ্ঠান নির্ধারিত জায়গায় না করার কারণে, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করার কারণে, একটি সেমিনার কক্ষের আলোচনা সভাকে অপরাজেয় বাংলায় পাবলিক প্লেসে একটি প্রতিবাদ সভায় পরিণত করতে হলো। অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, দেশের এই শিক্ষা ব্যবস্থা কিন্তু আমাদের জন্যই। এর মাধ্যমে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উভয়ই প্রভাবিত হবে। এজন্য সেই চিন্তা-ভাবনা আমাদেরই করতে হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই জাতীয় শিক্ষাক্রম – ২০২১ নিয়ে আজকে আমাদের যে আলোচনা অনুষ্ঠান ছিল, সেটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করতে দেয়নি। কিন্তু আমাদের আলোচনা অনুষ্ঠান করতেই হবে। অন্য কোন ফোরামে বা জায়গায় আমরা কখন-কীভাবে আলোচনাটা করবো, সেটা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। মানববন্ধনে বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা সংহতি জানান।