জাহাঙ্গীর আলম মিয়া :
ঢাকা-৫ আসনের নির্বাচনকে ঘিরে ঘরের লড়াইয়ে ত্রিধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় নেতাকর্মীর মধ্যেও তার প্রভাব পড়েছে। এ অবস্থায় এখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে শিকা ছেঁড়ে সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী, ডেমরা এবং কদমতলী থানার একাংশ নিয়ে গঠিত এ আসন। এবারের নির্বাচনে এখানে ১২ জন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে দলেরই দুই স্বতন্ত্রের। এখানে নৌকা পেয়েছেন দলের যাত্রাবাড়ী থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল (ট্রাক) এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন (ঈগল)। ২০২০ সালের এই আসনের চারবারের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে নৌকা নিয়ে জয় পাওয়া কাজী মনিরুল ইসলাম মনু এবার দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামেননি।
দলের তিন নেতাকে নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়লেও কেউ কেউ কৌশলী অবস্থান নিয়ে অনেকটাই নীরব রয়েছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে গেলে দল ও নৌকার প্রার্থী নাখোশ হন। আবার নৌকার পক্ষে গেলে স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের সমর্থক নেতারাও নাখোশ হন। এই অবস্থায় নীরব থেকে ভোটের দিন নিজ নিজ রায় দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা। অবশ্য এখানে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
তিন প্রার্থীর এই লড়াইয়ে আঞ্চলিকতাও একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। নৌকার প্রার্থী মুন্নার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী থানায় হওয়ায় তাকে ‘বহিরাগত’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি প্রায় ৩৫ বছর ধরে এ এলাকায় রাজনীতি করছেন বলে দাবি তাঁর সমর্থকদের।
অন্যদিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় বাড়তি সুবিধায় রয়েছেন। দলের বাইরেও পারিবারিকভাবে তাঁর নিজস্ব বলয়ও গড়ে উঠেছে। তাঁর বাবা হাবিবুর রহমান মোল্লা এই আসনটিতে ১৯৯৬ সাল থেকে চারটি নির্বাচনে জিতেছিলেন, হারেন শুধু ২০০১ সালের নির্বাচনে। স্থানীয়ভাবে মোল্লা পরিবারের ব্যাপক পরিচিতি এবং নিজস্ব ভোটব্যাংকও রয়েছে। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল হাসান রিপনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। তবে দীর্ঘদিনের রাজনীতির সুবাদে এলাকায় প্রভাব রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, মুন্নার পক্ষে রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ। দলীয় নির্দেশনা মেনে তারা নৌকাকে বিজয়ী করতে একাট্টা রয়েছেন। দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রচার সম্পাদক চৌধুরী সাইফুন্নবী সাগর, ডেমরা থানা সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাসুদ, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি হাজি গিয়াসউদ্দিন গেসু, ৫০ নম্বর ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক মোসলেউদ্দিন মুরাদ, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজি আবুল কালাম অনু প্রমুখ তাঁর পক্ষে। এলাকায় এসব নেতার যথেষ্ট প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে।
মশিউর রহমানের পক্ষে আছেন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম প্রমুখ।
আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুলের পক্ষেও নেতাকর্মীর একটি অংশ প্রকাশ্যেই সক্রিয় রয়েছে। দনিয়া এলাকায় বেসরকারি একটি স্কুলের শিক্ষক মো. সাইফুদ্দিন বলেন, রিপন এখানে শেখ হাসিনার পরীক্ষিত নেতা। তিনি বিরোধী দলে থাকার সময়ও নেতাকর্মীর পাশে ছিলেন।
মুন্না বলেন, ঐতিহাসিক এই আসনে বঙ্গবন্ধুও নির্বাচন করেছেন। ফলে এখানে নৌকার বাইরে কারও কিছু বলার সুযোগ নেই। ভোটেই তার প্রমাণও মিলবে। মশিউর রহমান বলেন, আমি সবসময় জনগণের সুখ-দুঃখে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। মানুষ সেই মূল্যায়ন করবে বলে আমার বিশ্বাস। কামরুল বলেন, ছোটবেলা থেকে আমি এই এলাকায় বড় হয়েছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালেই বিপদ-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আওয়ামী লীগের বড় অংশ আমার সঙ্গে আছে।