ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের পাঁচটি পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলছেন, এই নগর বাঁচাতেই এসব পরিকল্পনা তাঁর। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু না হলেও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও মতবিনিময় সভায় তুলে ধরছেন নগর নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা। তাপস বলছেন, শহরটা ভঙ্গুর অবস্থায় চলে যাচ্ছে। তাই এটিকে রক্ষায় একটু চেষ্টা করে দেখার তাগিদ থেকেই মেয়র প্রার্থী হয়েছেন।
২ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর থেকে প্রতিদিন একাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তাপস। এ ছাড়া গ্রিন রোডে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভিড় করছেন নেতা-কর্মীরা। সবাইকেই তিনি তাঁর পাঁচটি পরিকল্পনা ভোটারদের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ধানমন্ডির একটি কমিউনিটি সেন্টারে আজ বুধবার সকালে ১৪-দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় কথা বলেন তাপস। এরপর বিকেলে নীলক্ষেতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ও আরামবাগে এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করার কথা তাঁর।
প্রতিটি অনুষ্ঠান ও মতবিনিময় সভায় শেখ ফজলে নূর তাপস বলছেন, সময় হয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর, নতুন পথে যাত্রা শুরু করার। ঢাকার উন্নয়নের জন্য এখন দরকার সঠিক নেতৃত্ব। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে, অনেক অবহেলা, গাফিলতিতে ঢাকা অপরিকল্পিত নগরী হয়ে গেছে। দূষণে আক্রান্ত নগরী হয়ে গেছে। ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। মেয়র হলে তিনি কী কী করবেন, তা-তুলে ধরছেন তাঁর পাঁচ পরিকল্পনায়। সেগুলো হলো:
ঐতিহ্য রক্ষা
নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তাপস ঢাকার ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘অনেক শহর মাত্র একটি নদীর অববাহিকায় তৈরি। অথচ দুটি নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা ঢাকাকে বাঁচিয়ে তুলতে পারছি না। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ধরে রেখেই নগরকে নতুন করে সাজানো হবে। পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা হবে।’ তিনি বলেন, উন্নত বাংলাদেশের জন্য উন্নত রাজধানী দরকার। তাই উন্নত ঢাকা গড়তে নবযাত্রা শুরু করা দরকার।
সুন্দর ঢাকা
উড়োজাহাজ থেকে ঢাকা শহরের দিকে তাকালে শুধু বাক্স বাক্স ভবন দেখা যায়। এ নগরকে সবুজময় করতে হবে। তাপসের পরিকল্পনা, প্রতি ওয়ার্ডে মাঠ, খেলার জন্য উন্মুক্ত স্থান নিশ্চিত করবেন। অনেক মাঠ বিভিন্ন ক্লাবের দখলে। সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিন বা সময়ের জন্য ক্লাবের দখলে থাকা মাঠ এলাকাবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
সচল ঢাকা
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে নৌকার মেয়র প্রার্থী বলছেন, আজ ঢাকা প্রায় অচল। শুধু মেট্রোরেল, উড়ালসড়ক দিয়ে এর সমাধান হবে না; লাগবে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা। পুরো যোগাযোগ ও পরিবহনব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করে ঢেলে সাজানো হবে। কিছু রাস্তা থাকবে, যেখানে শুধু হাঁটার ব্যবস্থা থাকবে। কিছু রাস্তায় শুধু ঘোড়ার গাড়ি চলবে। নাগরিকদের জন্য সব ধরনের সুযোগ থাকবে। কোন রাস্তা বা পরিবহন ব্যবহার করবে, সে সিদ্ধান্ত নেবেন নাগরিকেরা। নগরবিদদের সঙ্গে পরামর্শ করে এসব বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হবে—বলছেন শেখ ফজলে নূর তাপস।
সুশাসনের ঢাকা
আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই দুঃখ করে বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হাজার হাজার কোটি টাকা কোথায় যায়? এ দুঃখ দূর করতে দেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গড়ে তুলবেন তিনি। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নাগরিকদের সব মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তাপস। পুরান ঢাকার পঞ্চায়েত বিচারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার কথাও বলছেন তিনি।
তাপস বলছেন, তিনি নির্বাচিত হলে বছরের ৩৬৫ দিনই ২৪ ঘণ্টা নগর ভবন খোলা রাখার ব্যবস্থা করবেন। জাতীয় রাজনীতিবিদ বা মন্ত্রী-সাংসদদের জন্য নয়, প্রতিটি নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে নগর ভবনের দরজা।
উন্নত ঢাকা
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়ে উন্নত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলছেন, ৩০ বছরের মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হবে। তবে ২০৪১ এর মধ্যে অধিকাংশ কাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকবে। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নিয়ে নেওয়া কোনো প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি মেয়র হলে নতুন করে নেওয়া প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দিচ্ছেন বিভিন্ন মতবিনিময় সভায়।
আজ শেখ ফজলে নূরের সমর্থনে আয়োজিত সভায় এ পাঁচ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন তিনি। সভায় তাঁর সমর্থনে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ডিএসসিসি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি প্রমুখ।
এর আগে কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা, যুবলীগ, মৎস্যজীবী লীগ, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী, নবাবপুর ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন সভায় নিজের পরিকল্পনার কথা বলেছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। সবার উদ্দেশে তিনি বলছেন, ‘মেয়র নির্বাচিত হলে পাঁচ বছর নগরবাসীর জন্য নিবেদিত থাকব।’ তাই সবাই মিলে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার জন্য কর্মী-সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।