ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের’ নিয়ে আ. লীগ প্রার্থীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছেন নিজ দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন, তাদের কারণে ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে বলে এই প্রার্থীদের কেউ কেউ হারার শঙ্কায় রয়েছেন।
তবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে যেসব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, সেসব ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীরা অনেকটা নির্ভার রয়েছেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের যেসব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে, তেমন বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ভোটের এই চিত্র পাওয়া গেছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে এবার ৫৮৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণের চারটি বাদে সব জায়গায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একজন করে প্রার্থীকে দলীয় সমর্থন দিয়েছে। ওই চার ওয়ার্ডে এখনও কাউকে সমর্থন দেয়নি বিএনপি।
দুই সিটি করপোরেশের ৫৯টি ওয়ার্ডে পাঁচ থেকে ১০ জন পর্যন্ত প্রার্থী কাউন্সিলর পদে ভোট করছেন। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যেমন বিদ্রোহীরা আছেন, তেমনি বিএনপিরও ৩৭ জন বাড়তি প্রার্থী রয়েছেন।
বিদ্রোহীদের ভারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩০টিতে পাঁচ থেকে ১০ জন পর্যন্ত প্রার্থী রয়েছে। এগুলো হল- ৪, ৯, ১১, ১২, ১৯, ২৬, ২৮, ৩২, ৩৬, ৩৯, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৬, ৬৭, ৬৯ ও ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড।
আর ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টিতেও পাঁচ থেকে নয়জন করে প্রার্থী ভোট করছেন। এই ওয়ার্ডগুলো হল- ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১১, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ২০, ২৩, ২৫, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৫, ৩৬, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪৩, ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সদস্য দেওয়ান আবদুল মান্নান কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন। এই ওয়ার্ডে যে ছয়জন কাউন্সিলর পদে লড়ছেন তাদের মধ্যে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গাজী অলিয়ার রহমান এবং মিরপুরের সংসদ সদস্য আসলামুল হকের শ্যালক মো. মনসুর আলীও রয়েছেন। এই দুইজনের বাইরে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুদুল হাসান ও মো. লিটনও আওয়ামী লীগ ঘেঁষা।
দল সমর্থন দিলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে ভোট কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন মান্নান।
এরপরেও জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও ভোটে তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবে সংগঠনের শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে।
“এমপির শ্যালক প্রার্থী। এতে কর্মীদের মধ্যে বিভাজন-বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক কর্মী স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারছেন না।”
এই প্রার্থীরাও যে দলের ভোটে ভাগ বসাবেন, সেটা মাথায় রেখেই প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মান্নান।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীদের নিয়ে কেন্দ্রে জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেনকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ছয়জন ভোট করছেন।
এই প্রার্থীদের মধ্যে মো. সোহেল শেখ হরিরামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। আর মো. জাহিদুল হাসান তুরাগ থানা স্বোচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর বলেন, “তাদের (বিদ্রোহী প্রার্থী) কাছে দফায় দফায় গিয়ে বলেছি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে, তারা শোনেননি। তারা এই নির্বাচনে না থাকলে ভোটে জেতাটা সহজ হত। এখন বেশি পরিশ্রম হচ্ছে।”
এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ভোটগুলো ভাগাভাগি হবে বলে অন্য দলের প্রার্থী জিতে যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথাও জানান জাহাঙ্গীর। তবে নিজের জয়ের বিষয়ে বেশ আশাবাদী তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনর ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মোট ছয়জন ভোটে আছেন। এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি মোজাম্মেল হক দলীয় সমর্থন পেয়েছেন।
ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত এই ওয়ার্ডের বরখাস্ত কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাইদ ভোটের মাঠে না থাকলেও তার সমর্থকরা তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া সাঈদের স্ত্রী ফারহানা আহম্মেদ বৈশাখীও কাউন্সিলর পদে ভোট করছেন।
মোজাম্মেল বলেন, “আমি দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছি। আমার সমর্থন জানিয়ে আওয়ামী লীগের দুইজন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলেও আওয়ামী লীগেরই অন্তত তিনজন এখনও ভোটের মাঠে আছেন।
“দলের নির্দেশনার বাইরে যারা কাজ করছেন এবং নিজেদের প্রভাব দেখাচ্ছেন তারা শেষ পর্যন্ত ভোটে জিততে পারবে না বলেই আশা করি। কারণ জনগণ আমার সঙ্গে আছে।”
নিজেকে যুব মহিলা লীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে সাঈদপত্নী বৈশাখী বলেন, “আমি দলীয় প্রার্থী না হলেও স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটের মাঠে আছি, এলাকার মানুষের চাপেই ভোটে দাঁড়িয়েছি, কেউ এখনও বাধা দিচ্ছে না। আমার স্বামীর ভোটের কোনো খবর আমি রাখছি না।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ছয়জন কাউন্সিলর পদে ভোট করছেন। এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মো. হামিদুল হক শামীমকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের আরও দুইজন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও প্রার্থিতা প্রতাহার করে নেওয়ায় অনেকটা নির্ভার আছেন শামীম।
তিনি শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই দুইজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে তো ঝামেলা হতই, কারণ ভোট ভাগাভাগি হয়ে যেত। এখন আর সেই সুযোগ না থাকায় জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।”
নিজ দলের কোনো প্রার্থী ভোটের মাঠে না থাকায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আসলাম আসিফের সঙ্গেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলেই মনে করছেন তিনি।
ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে শামীম বলেন, “সব কিছু মিলিয়ে ভোটের মাঠ খুবই শান্তিপূর্ণ। এখন পর্যন্ত কোনো ঝামেলা হয়নি। কেউ কারও ব্যানার-পোস্টার ছেড়েনি। আশা করছি, ভোটের দিন পর্যন্ত এই পরিবেশই থাকবে।”
নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে এমন একটি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “দল আমাকে সমর্থন দিয়েছে কিন্তু দলের অনেকেই কাজ করছেন বিদ্রোহী একজন প্রার্থীর হয়ে।
“আমার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নিজ দলের প্রার্থীর সঙ্গে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে ওই প্রার্থী ভোট থেকে সরে গেলে আমার জয় নিয়ে কোনো চিন্তাই ছিল না। এখন ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ার পর অন্য দলের প্রার্থী জিতে গেলে সেটা অসম্ভব কিছু হবে না।”
এই বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ কোনো সিদ্ধান্ত নেবে কি না জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, “দল থেকে যারা মনোনয়ন পেয়েছে তাদের জন্য আমরা কাজ করছি, আর যারা দলের বাইরে নির্বাচন করছে তাদের নিয়ে ভাবছিই না। কারণ দলের সিদ্বান্তের বাইরে যাওয়া মানেই সে দলের কেউ না।”
তিনি একথা বললেও সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলার কথা জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “আমাদের দলের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করছেন, তাদের ব্যাপারে আমাদের শৃঙ্খলা কমিটি নির্ধারিত সময়ে যারা প্রত্যাহার করেননি তাদের প্রত্যাহার করানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”